Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রেলিং ভাঙা, স্তম্ভে ফাটল বঙ্কিম সেতুতে

মাস তিনেক আগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ওই সেতু ও রেলিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছিল কেএমডিএ।

বিপজ্জনক: বঙ্কিম সেতুর ভাঙা রেলিং। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বিপজ্জনক: বঙ্কিম সেতুর ভাঙা রেলিং। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০২:৪০
Share: Save:

মাসখানেক আগে কালবৈশাখী ঝড়ে ভেঙে পড়েছিল হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন বঙ্কিম সেতুর প্রায় ৩০ ফুট রেলিং। সেই রেলিং সারানো‌র কাজ শুরু হয়নি আজও। এরই মধ্যে রেলিংয়ের একাধিক স্তম্ভে বিপজ্জনক ভাবে ফাটল ধরেছে। যার জেরে যে কোনও সময়ে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।

আশির দশকে বঙ্গবাসী মোড় থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত এই সেতুটি তৈরি করেছিল হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা (এইচআইটি)। সেতুটি যে হেতু রেল স্টেশন ও রেললাইনের উপর দিয়ে গিয়েছে, তাই ওই অংশটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ব রেলের। বাকি দু’পাশের অংশের দায়িত্ব নিয়ে হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা ও সরকারি অন্যান্য দফতরের মধ্যে টালবাহানা চললেও বর্তমানে সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ করে ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ বা কেএমডিএ-র হাওড়া বিভাগ।

মাস তিনেক আগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ওই সেতু ও রেলিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছিল কেএমডিএ। কিন্তু অভিযোগ, বঙ্গবাসী মোড়ের দিকে সেতুর দু’টি লেনেই যানবাহনের ধাক্কায় রেলিংয়ের যে স্তম্ভগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেগুলিকে পাকাপাকি ভাবে লোহার রড দিয়ে ঢালাই না করে শুধু সিমেন্ট-বালি দিয়ে কোনও রকমে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে। সেই কারণেই ফের ফাটল ধরে সেতুর মূল অংশ থেকে ভেঙে বেরিয়ে এসেছে ওই স্তম্ভগুলি। যার জেরে যে কোনও দিন গোটা রেলিং ভেঙে পড়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ওই সেতুর নীচেই রয়েছে একটি মেয়েদের কলেজ এবং দু’টি স্কুল। পাশাপাশি, সপ্তাহে দু’দিন হাট বসে ওই সেতুর নীচেই।

সেতুর রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারদের অবশ্য দাবি, কয়েক মাস আগে ভাল ভাবেই সেতুটির মেরামতি করা হয়েছে। তা হলে রেলিংয়ের এতগুলি স্তম্ভে ফাটল ধরে সেগুলি সেতুর মূল কংক্রিটের থেকে আলাদা হয়ে গেল কেন? কেনই বা সামান্য ঝড়ে কংক্রিটের রেলিং ভেঙে রেললাইনে পড়ল?

এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারেরাই। তাঁদের একাংশের মতে, সেতুর নির্মাণের সময় থেকেই তাতে ত্রুটি রয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে রেলিংগুলি মজবুত করা হয়নি। এমনকি, সেতুর মূল রাস্তা থেকে ফুটপাতগুলির উচ্চতাও কম রাখা হয়েছে। কেএমডিএ-র এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘সেতুটির নির্মাণের সময়ে রেলিং মজবুত করা হয়নি। যার ফলে এক বার রেলিং ভেঙে যাত্রিবোঝাই একটি মিনিবাস নীচে পড়ে গিয়ে‌ছিল। কয়েক জন মারাও গিয়েছিলেন।’’

ইঞ্জিনিয়ারদের অন্য অংশের অবশ্য দাবি, সেতুটির নির্মাণগত কোনও ত্রুটি নেই। আসলে সেতুর রেলিংয়ে কয়েক ফুট অন্তর কংক্রিটের যে স্তম্ভ থাকে, সেখানে বৃষ্টির জল লেগে সিমেন্ট আলগা হয়ে ভিতরের লোহার রডে মরচে ধরে গিয়েছে। সেই মরচেই স্তম্ভগুলিকে ফাটিয়ে দিচ্ছে। তাই নিয়মিত স্তম্ভগুলির রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।

হাওড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেএমডিএ-র এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না বলেই সেতুর রেলিংগুলি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই ঝড়ের ধাক্কাতেই অনেকটা রেলিং ভেঙে গিয়েছে। তবে মেরামতির পরেও কেন ভেঙে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার।’’

কিন্তু রেলের এলাকায় থাকা সেতুর ভেঙে পড়া রেলিং কেন সারানো হচ্ছে না? হাওড়ার ডিআরএম মনু গোয়েল বলেন, ‘‘ভেঙে পড়া জায়গার ড্রয়িং তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। দরপত্রও ডাকা হয়েছে। টাকা এলেই কাজ শুরু হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Railing Bankim Setu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE