বড় কোনও দুর্ঘটনা অথবা ট্যাক্সি-অটোচালকদের দুর্ব্যবহার নিয়ে হইচই হলেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। হুঙ্কার ছাড়েন মন্ত্রী থেকে তাবড় পরিবহণ ও পুলিশের কর্তারা। দিন পনেরো ধরে এমনটাই চলে। তার পরে ফের যে কে সে-ই। ট্যাক্সি বা অটোচালকেরা ফিরে যান ‘যেমন খুশি’ চলার রাজত্বে।
মঙ্গলবার একই ভাবে ট্যাক্সিচালকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হুঙ্কার দিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। স্বভাবতই দফতরের কর্তাদের আশঙ্কা, হুমকিই সার। দিন পনেরো পরে শহর কলকাতায় ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান থেকে গুন্ডামির চিত্র রয়ে যাবে সেই তিমিরেই।
শনিবার রাত থেকে পরপর অভিযোগ উঠেছে ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কোথাও ট্যাক্সিচালক মহিলা যাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছে। নিগ্রহ থেকে বাঁচতে চলন্ত ট্যাক্সি থেকেই নেমে পড়তে বাধ্য হয়েছেন ওই মহিলা। কোথাও বা যাত্রী প্রত্যাখ্যানের প্রতিবাদ করায় চালক ও তার সঙ্গীদের হাতে প্রবাসী ব্যবসায়ী ও তাঁর বন্ধুকে মার খেতে হয়েছে। আবার বালিতে ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার হাত ধরে টেনেছে এক ট্যাক্সিচালক।
গত তিন দিনে পরপর এমন গুন্ডামির অভিযোগ সামনে আসার পরে তড়িঘড়ি মঙ্গলবার সকালে কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। দুপুরে বৈঠক করেন ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলির নেতাদের সঙ্গে। বৈঠক শেষে বিকেলে বেপরোয়া ট্যাক্সিচালকদের রুখতে কয়েক দফা দাওয়াইয়ের কথা ঘোষণা করেন মন্ত্রী। যার কোনওটাই নতুন নয়। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এ সব নিয়ম আগেও ছিল। কিন্তু গত তিন বছরে সেই নিয়মে ট্যাক্সিচালকদের বাঁধতে সক্রিয় হয়নি সরকার। মাঝেমধ্যে শুধু প্রশাসন হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
যদিও পরিবহণমন্ত্রী এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “কলকাতার রাস্তায় প্রতিদিন ১৮ লক্ষেরও বেশি গাড়ি চলে। সব গাড়ির উপরে তো আর নজরদারি সম্ভব নয়। তবে প্রশাসন এই সব দৌরাত্ম্য রুখতে কঠোর হবে। শিথিলতা আসবে না। এ ধরনের গুন্ডামি আমরা বরদাস্ত করব না।” একই সঙ্গে মন্ত্রীর দাবি, “আমরা তো গণতান্ত্রিক সরকার। জলকামান ও বুলেট সঙ্গে নিয়ে তো আর সমস্যা সমাধানে নামতে পারি না।”
এ দিন ট্যাক্সিচালকদের সঙ্গে বৈঠকের পরে মন্ত্রী ট্যাক্সিচালকের প্রত্যাখ্যান এবং গুন্ডামি রুখতে মূলত তিনটি দাওয়াই দেন। তিনি বলেন, “চালক অপরাধ করছে। তার গুনাগার দিতে হচ্ছে মালিককে। সে কারণে এ বার থেকে প্রত্যাখ্যান করলে বা অভব্য আচরণ করলে চালককে ঘটনাস্থলেই তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হবে। তিন বার এমন অপরাধ করলে সংশ্লিষ্ট চালকের লাইসেন্সও বাতিল করতে পারে পরিবহণ দফতর।”
এখন যে ভাবে হোটেল বা লজের ক্ষেত্রে আবাসিকদের সবিস্তার তথ্য থানায় জানাতে হয়, সে ভাবেই ট্যাক্সিমালিক কাকে চালক হিসেবে কাজে রাখছেন, এ বার থেকে তা নিয়মিত থানায় জানাতে হবে তাঁকে। মন্ত্রীর দাবি, এই তালিকা পুলিশের হাতে থাকলে কোনও ট্যাক্সি সম্পর্কে অভিযোগ এলে সহজে তার চালককে চিহ্নিত করা যাবে।
লাইসেন্স নিয়ে মন্ত্রী নিজেই অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন চালক তৈরির প্রশিক্ষণ স্কুলগুলির বিরুদ্ধেও। তিনি বলেন, “স্কুলগুলি অবাধে লাইসেন্সের কাগজপত্র তৈরি করছে। ওই সব স্কুলকে সরকারি নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা হবে। প্রয়োজনে স্কুলগুলির পরিচালন কমিটিতে সরকারের এক জন করে প্রতিনিধি থাকবেন।”
অন্য দিকে, ট্যাক্সি নিয়ে যাত্রী হয়রানি রুখতে এ বার নিজেরাই স্ট্যান্ড করল কলকাতা পুলিশ। এ দিন কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমার জানিয়েছেন, ট্যাক্সির দৌরাত্ম্য রুখতে ১২টি এলাকায় ‘ট্যাক্সি বে’ চালু করা হয়েছে। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে ওই জায়গাগুলি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছিল। মঙ্গলবার থেকে তা কার্যকর হল। ওই জায়গাগুলি হল: নিউ মার্কেট, পোদ্দার কোর্ট, জীবনদীপ বিল্ডিং, পার্ক স্ট্রিট এবং রাসেল স্ট্রিট মোড়, অ্যাপোলো হাসপাতালের সামনে, মণি স্কোয়্যার মল, বেহালা চৌরাস্তা, টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন, সাউথ সিটি মলের সামনে, আর এন টেগোর হাসপাতাল, রাসবিহারী মোড় এবং হাজরা মোড়। ব্যস্ত সময়ে ওই সব জায়গায় ট্যাক্সি থাকবে। কোনও যাত্রী ট্যাক্সি না পেলে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাই তাঁদের ট্যাক্সির ব্যবস্থা করে দেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy