অবসর নিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনারের পদ থেকে। তখন থেকেই গত আট বছর ধরে কলকাতা পুরসভার নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত তিনি। এখনও ছ’মাস অন্তর তাঁর চাকরির ক্রমাগত মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে পুরভবনেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এমনকী, নবান্নে অর্থ দফতরের উপদেষ্টা হিসেবে গত সাত বছর ধরে নিযুক্ত সব্যসাচী দত্তকেও সে দিক থেকে ছাপিয়ে গিয়েছেন তিনি। পুর-আইন অনুযায়ী, অবসর নেওয়ার পরে পুনরায় নিযুক্ত হলে সর্বাধিক ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত সেই কাজ করতে পারেন সংশ্লিষ্ট কর্মী। তা হলে কীসের নিরিখে তার পরেও চাকরির মেয়াদ বেড়ে চলেছে সত্তর ছুঁইছুই বৃদ্ধের? উত্তর মেলেনি খোদ মেয়রের কাছেও।
তিনি সোমনাথ গোল। বয়স ৬৯ বছর ৪ মাস। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক-২) পদ থেকে অবসর নিয়ে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে কলকাতা পুরসভায় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। গত বছরের ৬ অগস্ট পুরসভারই পার্সোনেল বিভাগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী (নম্বর চিফ ম্যানেজার (পি)/জি/৮২/ভি/২০১৫-১৬) গত ২৮ জানুয়ারির পরে আর তাঁর চাকরির মেয়াদ বাড়ার কথা নয়। কিন্তু নিয়ম ভেঙে তার পরেও ফের মেয়াদ বেড়েছে। এবং তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পুরসভার অন্দরেই। পুর-আধিকারিকদের প্রশ্ন, ‘‘বিজ্ঞপ্তিতেই বলা হচ্ছে, ২৮ জানুয়ারির পরে সোমনাথ গোলের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। অথচ তিনি কে এমন প্রভাবশালী যে, তাঁকে ফের নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিযুক্ত করা হল?’’
সোমনাথবাবুর চাকরির মেয়াদ বাড়াতে সম্প্রতি পুরসচিব হরিহরপ্রসাদ মণ্ডল নোটে জানান, নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে সোমনাথবাবু মূলত পুরসভার বিভিন্ন কাজকর্ম রূপায়ণে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী (লিয়াজোঁ) হিসেবে কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি অপরিহার্য বলে নোটে বলা হয়েছে। কিন্তু পুরসভা সূত্রে খবর, পুলিশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার কাজের অধিকাংশই দেখে সেক্রেটারি দফতর। পুরসভায় ডেপুটি ম্যানেজার পদের এক জন আধিকারিকই আছেন, যাঁর পদ লিয়াজোঁ অফিসার। পুর-আধিকারিকদের একাংশের যুক্তি, পুরসভায় এক জন স্থায়ী নিরাপত্তা আধিকারিক, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একাধিক ডেপুটি ম্যানেজার পদাধিকারী আধিকারিক থাকা সত্ত্বেও সোমনাথবাবুকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিযুক্ত করার অর্থ পুরসভার টাকা অপব্যয়। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অনেক যোগ্য ছেলেমেয়ে চাকরির জন্য ঘুরছেন। এই পরিস্থিতিতে পুরসভা মোটা টাকা দিয়ে পুলিশের প্রাক্তন আধিকারিককে যে ভাবে নিয়োগ করে চলেছে, তা অন্যায়।’’
নিয়মমতো সোমনাথবাবুর চাকরির বর্ধিত মেয়াদ শেষ হওয়ার দশ দিন আগে পুরসচিবের তরফে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, পুর-কমিশনার খলিল আহমেদের কাছে ওই নোটটি পাঠানো হয়। তাতে সোমনাথবাবুর কাজের প্রশংসা করে তাঁকে সপ্তাহে পাঁচ দিনের জন্য পুরসভার নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল। দিনে ১০০০ টাকা বেতন হিসেবে মাসে কুড়ি দিনের জন্য তাঁর কাজের মেয়াদ-বৃদ্ধির ওই নোটে স্বাক্ষর করেন মেয়র ও পুর কমিশনার।
গত ১ মার্চ মেয়রের কাছে ফের একটি নোট পাঠান পুরসচিব। ওই নোটের ভিত্তিতে সোমনাথবাবুকে মাসিক কু়ড়ি দিনের পরিবর্তে তিরিশ দিনের বেতন দিতে (মোট তিরিশ হাজার টাকা) সম্মতি দেন পুর-কমিশনার ও মেয়র। পুরসচিব হরিহরপ্রসাদ মণ্ডলকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু বলেননি। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
আর যাঁকে নিয়ে এত বিতর্ক, সেই সোমনাথ গোল অবশ্য মুখ খুলেছেন। বলেছেন, ‘‘পুরসভার মেয়র, মেয়র পারিষদ থেকে শুরু করে সমস্ত ডিজি-রা আমাকে পছন্দ করেন। আসলে গুটিকয়েক আধিকারিকের গাত্রদাহ হচ্ছে। তাঁরা মনে করছেন, আমি চলে গেলে তাঁদের সুবিধা হবে। তাই আমাকে নিয়ে কুকথা বলছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy