সকালের গণ্ডগোলের পরে সরে গেল সব ব্যারিকেড। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র।
সমস্যা চলছিল বহু দিন ধরেই। কলকাতা বিমানবন্দরে গাড়ি ঢুকে দশ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে গেলে আর পার্কিং ফি দিতে হবে না, এমনই নিয়ম। তবু জোর করে গাড়িচালকের কাছ থেকে পার্কিং ফি নিচ্ছেন কিছু অবাঙালি যুবক, এমন অভিযোগ উঠছিল। তা নিয়ে কিছু দিন আগে এক যাত্রী অভিযোগও করেছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে সেই সমস্যাই বড় আকার নিল। এতটাই বড় যে উড়ান ধরতে পারলেন না বেশ কয়েক জন যাত্রী। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, যে ব্যক্তিকে এই পার্কিং ফি নেওয়ার বরাত দেওয়া হয়েছে, সেই বাবুলালের কর্মীরা এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে ঢুকতে যাওয়া সব গাড়ি আটকে দেন। ফলে, কৈখালির পরে বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে ঢোকার জন্য যে সেতু বানানো হয়েছে, তার উপরে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। অনেক যাত্রীকেই নিজেদের মালপত্র নিয়ে টার্মিনালের দিকে দৌড়তে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যেই কয়েক জন উড়ান ধরতে পারেননি বলে বিমানবন্দর সূত্রে এ দিন জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন গাড়ি নিয়ে যাত্রীকে নামিয়ে ফেরার পথে দশ মিনিটের ওই ফ্রি পার্কিং নিয়ে বচসা শুরু হয় বাবুলালের কর্মীদের সঙ্গে গাড়িচালকদের একাংশের। অভিযোগ, সেই সময়ে বিমানবন্দরে ঢোকা-বেরোনো সব গাড়ি আটকে দেন বাবুলালের কর্মীরা। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়া গাড়ি নিয়ে কোনও সমস্যা না হলেও বিমানবন্দরে ঢোকার গাড়ি নিয়ে সমস্যা হয়। সকালে ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি বিমান উড়ে যায় কলকাতা থেকে। সেই সব উড়ানের অনেক যাত্রী আটকে পড়েন সেতুর উপরে। পরে পুলিশ গিয়ে বিমানবন্দরের ঢোকার অন্য রাস্তা দিয়ে সেই গাড়িগুলি ঘুরিয়ে দেয়। তবে এ দিনের গোলমালের পরে অন্যান্য দিনের মতো জোর করে গাড়ি পার্কিং লটে পাঠিয়ে দেওয়া বা গাড়ি আটকে রাখার ঘটনা আর ঘটেনি।
এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বাবুলালের লোকেরা এ ভাবে গাড়ি আটকে রাখেন বলে অভিযোগ। তার পরে আবার গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিছু দিন আগেই অরিজিতা দত্ত নামে এক যাত্রী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, তিনি বিমানে কলকাতায় নামার পরে তাঁর গাড়ি তাঁকে বিমানবন্দর থেকে আনতে যায়। সেই চালকের কাছ থেকে জোর করে ১০০ টাকা পার্কিং ফি নেওয়া হয়েছিল। একই অভিযোগ ছিল দীপক প্রামাণিকেরও। তিনি ছেলেকে আনতে গিয়ে একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, হরিয়ানা থেকে আসা এই যুবকের দল অত্যন্ত অভদ্র ভাবে কথা বলেন। শুভজয় বসু নামে এক জনের অভিযোগ, ১০০ টাকা নিয়ে যে রসিদ দেওয়া হয়, তাতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কোনও স্ট্যাম্প বা সিল থাকে না। যারা পার্কিং ফি নেন, তাঁদেরও কোনও পরিচয়পত্র নেই। এটা বেআইনি।
এ দিন ঘটনার পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবুলালের লোকেরা পার্কিং ফি নেওয়া বন্ধ করে দেন। বাবুলালের কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে পার্কিং নিয়ে কর্তৃপক্ষের লিখিত চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে কর্তৃপক্ষকে সওয়া এক কোটি টাকা করে দিতে হয়। এই টাকা আমি কোথা থেকে পাব? বেশিরভাগ লোকেরই এখন প্রবণতা হচ্ছে দশ মিনিটের ওই সুবিধা ভোগ করে টাকা না দিয়ে চলে যাওয়া।’’ তবে বাবুলালের দাবি, এ দিনের গণ্ডগোলের সূত্রপাত সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে নয়। তাঁর অভিযোগ, বিমানবন্দরের ভিতরে সাদা লাক্সারি ট্যাক্সি যাতায়াত করে। টার্মিনালের ভিতরে তাদের কাউন্টারও রয়েছে। তাদের কাছ থেকে গাড়ি পিছু মাসে ২৩০০ টাকা নেওয়ার কথা। কিন্তু তারা সে টাকা দিতে রাজি নয়। তাদের সঙ্গে এ বার উবের-ওলার মতো ‘ক্যাব’ চালকেরাও মিলেছেন। এ দিন সকালে তেমনই এক সাদা গাড়িকে নিয়ে সমস্যার পরে সেই গাড়িচালকেরাই রাস্তায় নেমে পথ আটকে দিয়েছেন। যার ফলে অনেক যাত্রী উড়ান ধরতে পারেননি।
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা অনিল শর্মা এ দিন বলেন, ‘‘দশ মিনিটের ওই সুবিধা সব গাড়িকেই দিতে হবে। বাবুলাল আমাদের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি-এর ৯০ লক্ষ টাকা ফেরত চেয়েছেন। সে টাকা আমরা ওকে দেব না। ওকে আমাদের নিয়ম মতোই এখানে কাজ করতে হবে। জোরজুলুম করা যাবে না। উনিও এখানে ব্যবসাই করছেন। সেটা নিয়ম মেনেই করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy