Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভোটের বাজারেও ফুলবাজার তিমিরেই

মল্লিকঘাট ফুলবাজার উন্নয়নে কেন্দ্রের টাকা এসেছিল। কিন্তু প্রকল্পের বিরোধিতায় গত পুরভোটের মুখে আন্দোলনে নামে তৃণমূল। কলকাতার পুরভোটে তৃণমূল জেতার পরে গতি আসে আন্দোলনে। সমাধানের লক্ষে তৃণমূল-সিপিএম নেতাদের নিয়ে মন্ত্রী-সচিবেরা মহাকরণে কয়েক দফা বৈঠকে বসেও জট খুলতে পারেননি। বানচাল হয় রূপরেখা। ফিরিয়ে দিতে হয় কেন্দ্রের টাকা।

অশোক সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

মল্লিকঘাট ফুলবাজার উন্নয়নে কেন্দ্রের টাকা এসেছিল। কিন্তু প্রকল্পের বিরোধিতায় গত পুরভোটের মুখে আন্দোলনে নামে তৃণমূল। কলকাতার পুরভোটে তৃণমূল জেতার পরে গতি আসে আন্দোলনে। সমাধানের লক্ষে তৃণমূল-সিপিএম নেতাদের নিয়ে মন্ত্রী-সচিবেরা মহাকরণে কয়েক দফা বৈঠকে বসেও জট খুলতে পারেননি। বানচাল হয় রূপরেখা। ফিরিয়ে দিতে হয় কেন্দ্রের টাকা। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, স্থান বণ্টন নিয়ে বামেরা রাজনীতি করছে। আশ্বাস দিয়েছিল, স্বচ্ছ বণ্টন-নীতির মাধ্যমে তারা রূপায়িত করবে পরিকল্পনা। সেই তিমিরেই পড়ে আছে মল্লিকঘাট ফুলবাজার উন্নয়ন প্রকল্প।

এই পাইকারি ফুলবাজারে পুজোর তিন দিনেই কয়েক কোটি টাকার পদ্ম কেনাবেচা হয়। ১৫-২০ হাজার লোক এই বাজারে যুক্ত। এর আধুনিকীকরণে ২০০৮-এ বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রক ২২ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ঠিক হয়, প্রায় ৩ হাজার ৪০০ বর্গমিটার জায়গায় চারতলা ভবনে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হবে। গবেষণা, ফুল সংরক্ষণ নিয়ে আধুনিক ব্যবস্থা থাকবে। কেন্দ্রীয় অর্থে এমন প্রকল্প রাজ্যে সেই প্রথম। কিন্তু কে কোথায় দোকান পাবেন, তা নিয়ে বিরোধ বাধে। তাতে লাগে রাজনীতির রং। তৈরি হয় তৃণমূল-সমর্থিত ‘ফুলবাজার বাঁচাও কমিটি’।

প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ২০০৮-এ সুধাংশু শীলের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার কমিটি গড়ে। এমনিতে মাস ছয়ের মধ্যে কেন্দ্রের টাকা ব্যবহার করা উচিত। তা না হওয়ায় কেন্দ্রকে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে বলে রাজ্য। সুধাংশুবাবুর অভিযোগ, “অনেক চেষ্টা করে প্রকল্পের কাজ শুরুর মুখে পৌঁছেছিলাম। কিন্তু জোর করে কাজ আটকে দেওয়া হয়।”

নির্মাণ চলাকালীন ফুলবাজারের দোকানিদের বসার জন্য পরিবর্ত জায়গা তৈরি ছিল। এ কথা জানিয়ে সুধাংশুবাবু বলেন, ওই জমি পাহারা দিতে একটি নিরাপত্তা সংস্থার চার রক্ষীর জন্য খরচ হয় মাসে ৩৬ হাজার টাকা। বাম আমলের কমিটির সদস্য স্থানীয় ফুলব্যবসায়ী অসীম শাসমল বলেন, “প্রকল্প রূপায়ণে সরকার বা পুরসভার তরফে বল প্রয়োগ করেনি। দোকানিদের সার্বিক ভাল ওঁদের একাংশ চাইল না!” দিল্লির পাঠানো ১০ কোটি টাকা ফেরত যায়।

পুরসভায় তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে মেয়র ও কিছু মন্ত্রী মল্লিকঘাটে গিয়ে দোকানিদের আশ্বাস দেন। তা-ও কেন প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে না? ‘নবান্ন’-র এক পদস্থ অফিসার বলেন, “সার্বিক ভাবে বিষয়টি উদ্যানচর্চা দফতর দেখছে। রূপায়ণের বিষয়টি দেখছে মল্লিকঘাট ফুলবাজার পরিচালনা সমিতি।”

মল্লিকঘাটের প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন করলে দোকানিরা কেউ উত্তর দিতে পারেননি। নিকাশি-ব্যবস্থা বেহাল। সাম্প্রতিক অতীতে আগুন লাগার পরে দমকল-বাহিনীর কথায় দোকানিরা ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা খরচ করে যন্ত্রপাতি কিনলেন। সেগুলিও পড়ে আছে।

ফুলবাজার উন্নয়নের জন্য কলকাতা পুরসভা প্রস্তাবিত চারতলা ভবনের যে নকশার অনুমোদন দেয়, সেটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। সমিতির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা বলেন, “দোকানিদের স্বার্থে নকশার কেবল মেয়াদবৃদ্ধি নয়, কিছু পরিমার্জনও চাই। পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।”

স্বর্ণকমলবাবু বলেন, “আমাদের ইঞ্জিনিয়ারকে বলেছি নকশার পরিমার্জনের অনুমতি চেয়ে পুরসভায় বিল্ডিং বিভাগে আবেদন করতে।” নির্মাণ চলাকালীন পরিবর্ত জায়গার সমস্যা হবে না বলে স্বর্ণকমলবাবু জানান।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE