Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

লক্ষ্য উন্নত ট্র্যাফিক ব্যবস্থা, সার্জেন্টদের মুখোমুখি সিপি

বুধবার লালবাজারে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে এক বৈঠকে নিচুতলার কর্মীদের এমন একাধিক সমস্যা তুলে ধরলেন মহানগরের ট্র্যাফিক সামলানোর দায়িত্বে থাকা অফিসারেরা।

পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।

পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৬
Share: Save:

ব্যস্ত রাস্তায় ডিউটি করছিলেন এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। আচমকা বৃষ্টি শুরু হতেই গাছের তলায় আশ্রয় নিলেন তিনি। কেন? কারণ, ময়দান-সহ শহরের বেশ কিছু জায়গায় ট্র্যাফিক পুলিশের কোনও কিয়স্ক নেই। ফলে রোদে পুড়ে বা বৃষ্টিতে ভিজেই তাঁদের কাজ করতে হয়।

আবার, শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরের যানবাহন সামলানোর দায়িত্ব রয়েছে রেলপুলিশের হাতে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, রাস্তার দায়িত্বে থাকা ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের কোনও সাহায্য না করায় প্রতি দিন ওই চত্বরের গাড়ি সামলাতে কার্যত হিমশিম খেয়ে যান ট্র্যাফিকের ওই কর্মীরা।

বুধবার লালবাজারে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে এক বৈঠকে নিচুতলার কর্মীদের এমন একাধিক সমস্যা তুলে ধরলেন মহানগরের ট্র্যাফিক সামলানোর দায়িত্বে থাকা অফিসারেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, ট্র্যাফিক ব্যবস্থা উন্নত করতে এ দিন পঞ্চাশেক সার্জেন্টকে নিজের দফতরে ডেকেছিলেন পুলিশ কমিশনার। রাস্তায় কাজ করার সময়ে তাঁদের সমস্যাগুলি জানতে চান তিনি। পাশাপাশি ট্র্যাফিক ব্যবস্থা আরও মসৃণ করতে তাঁদের পরামর্শও চান।

কমিশনার পদে দায়িত্ব নিয়ে রাজীববাবু প্রশাসনের ‘মুখ’ হিসেবে ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী এবং অফিসারদেরই তুলে ধরেছিলেন। আমজনতাও পথেঘাটে তাঁদেরই দেখে। কোনও বিপদে পড়লে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক সার্জেন্ট বা কনস্টেবলের কাছে ছুটে যান তাঁরা। সেই সূত্র ধরেই এ দিন বৈঠক করেন সিপি। পুলিশের একাংশের দাবি, দীর্ঘ দিন বাদে কোনও পুলিশ কমিশনার সরাসরি রাস্তায় দাড়িয়ে ডিউটি করা সার্জেন্টদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। এর আগে লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা ট্র্যাফিক পুলিশের অফিসার-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করলেও সিপি-র সঙ্গে সরাসরি বৈঠক হয়নি সার্জেন্টদের।

পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, ওয়াকিটকি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বাহিনীর মধ্যে। অফিসারদের একাংশ বলছেন, ওয়াকিটকি মান্ধাতা আমলের হওয়ায় অনেক সময়েই দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও খবর দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার থাকলেও তা পাঠানো যায় না। ট্র্যাফিকের কর্মীদের আরও অভিযোগ, ওয়াকিটকির ব্যাটারির হালও খুব খারাপ। লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি, ওয়াকিটকির উন্নতি করা হবে বলে এ দিন সিপি আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া ট্র্যাফিক কর্মীদের কিয়স্কের সমস্যা মিটবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

লালবাজার সূত্রের খবর, রাজীববাবু এ দিন অফিসারদের মুখে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরের ট্র্যাফিকের অব্যবস্থার কথা শুনে আধিকারিকদের বলেছেন দ্রুত রেলপুলিশের সঙ্গে বসে সমস্যা মেটাতে। প্রয়োজনে কলকাতা পুলিশ যাতে ওই এলাকার ট্র্যাফিক সামলাতে পারে, তা দেখারও নির্দেশ দিয়েছেন।

রাতে যে ট্র্যাফিক অফিসারেরা রাস্তায় ডিউটি করেন, তাঁদের যাতে দূর থেকে সহজে চিহ্নিত করা যায় সে জন্য ‘বডি লাইট’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও শহরের প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্টের কাছে তা পৌঁছয়নি। এ দিনের বৈঠকে সে কথা জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুলিশ কমিশনার। দ্রুত ওই লাইট যাতে সব অফিসারের কাছে পৌঁছয়, সেই নির্দেশ দেন। ট্র্যাফিক পুলিশের আধুনিকীকরণ নিয়েও অফিসারদের থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়েছেন সিপি। বিদেশের কোথায়, কী ভাবে ট্র্যাফিক পরিচালনা করা হয় তা দেখার জন্য অধস্তন কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর পরামর্শও দিয়েছেন।

বৈঠকে ছিলেন সদ্য দায়িত্ব নেওয়া ডেপুটি কমিশনার (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমারও। মঙ্গলবার সুমিত কুমার প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডের ওসির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। শহরের ট্র্যাফিক আরও ভাল করতে প্রতিটি গার্ডের ওসিদের তিন-চারটি প্রস্তাব তিনি জমা দিতে বলেছেন। ‘‘আমার নম্বর কিছু দিনের মধ্যে সব অফিসারের কাছে পৌঁছে যাবে। যে কোন অসুবিধায় নিচু তলা থেকে আধিকারিকেরা সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন’’—বৈঠক শেষে এই বার্তাই দিয়েছেন নবনিযুক্ত ডিসি (ট্র্যাফিক)।

অন্য বিষয়গুলি:

Rajeev Kumar traffic system CP sergeant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE