Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পুরুষ শিক্ষক বর্জনের গর্জন ঘিরে বিতর্ক

কোনও স্কুলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠলেই অভিভাবকদের লক্ষ্য হয়ে উঠছেন ‘পুরুষ’ শিক্ষকেরা। শিক্ষা শিবিরের প্রশ্ন, শিক্ষক ‘শিক্ষক’-ই। তিনি পুরুষ না নারী, সেই প্রশ্ন উঠবে কেন? অভিভাবকদের সাফ জবাব, ছাত্রীদের স্কুলে কোনও ভাবেই পুরুষ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী রাখা চলবে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:১৮
Share: Save:

ছাত্রীদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক রাখা চলবে না! শুক্রবার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে কারমেল স্কুলের সামনে এই দাবিতে গর্জে উঠলেন অভিভাবকেরা।

পাল্টা যুক্তি ধেয়ে এল প্রশ্নের ধাঁচেই। শিক্ষকের আবার মহিলা-পুরুষ আছে নাকি? থাকা কি উচিত?

শিশু-নিগ্রহের এককাট্টা প্রতিবাদের পাশাপাশিই এই নিয়ে বিতর্ক চলল দিনভর। ১ ডিসেম্বর রানিকুঠির জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনের সামনে বিক্ষোভের সময়েও অভিভাবকদের প্রশ্ন ছিল, মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক কেন থাকবেন? এটা চলবে না।

কোনও স্কুলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠলেই অভিভাবকদের লক্ষ্য হয়ে উঠছেন ‘পুরুষ’ শিক্ষকেরা। শিক্ষা শিবিরের প্রশ্ন, শিক্ষক ‘শিক্ষক’-ই। তিনি পুরুষ না নারী, সেই প্রশ্ন উঠবে কেন? অভিভাবকদের সাফ জবাব, ছাত্রীদের স্কুলে কোনও ভাবেই পুরুষ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী রাখা চলবে না। এ দিন এক অভিভাবক জানান, জিডি বিড়লা স্কুলের ঘটনার পরেই দাবি জানানো হয়েছিল, যেন কোনও পুরুষ শিক্ষক রাখা না-হয়। শৌচাগারের বাইরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর দাবি জানানো হয়েছিল। অভিযোগ, কোনওটাই মানা হয়নি।

স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, অক্টোবরে সব স্কুলকে ১৮ দফা নির্দেশ দেওয়া হয়। তার মধ্যে ছিল: স্কুলে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে। গড়তে হবে একটি কমিটি। তাদের কাছে কোনও পড়ুয়ার উপরে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা নিতে হবে। নিরাপত্তা, ভাল বা মন্দ স্পর্শ নিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। চুক্তি-শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের পুলিশি রেকর্ড যাচাই করতে হবে। কিন্তু তার পরেও ওই স্কুলে এই সব ব্যবস্থা ছিল না। কেন?

শিশু সুরক্ষা অধিকার আয়োগের সদস্যা সুদেষ্ণা রায় জানান, স্কুল-কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানান, সংস্কারের কাজ চলায় সিসি ক্যামেরা খুলে রাখা হয়েছে। তবে অভিভাবদের একাংশের অভিযোগ, ক্যামেরাগুলি অকেজো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পুরুষ শিক্ষক রাখা যাবে না, এমন দাবি কতটা যুক্তিসঙ্গত? সুদেষ্ণাদেবীর কথায়, ‘‘এটা কোনও দাবি হতে পারে না। তা হলে তো এমন দাবিও উঠবে যে, ছেলেদের স্কুলে শিক্ষিকা রাখা যাবে না। আসলে শিক্ষা দরকার। দরকার সময় আর আইন অনুযায়ী সকলকে শিক্ষিত করে তোলা।’’

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুলগুলিকে সতর্ক হতে হবে। যা ঘটেছে, তা বিকৃত মনের পরিচয়। স্কুল-কর্তৃপক্ষ কাদের দিয়ে শিক্ষকতা করাচ্ছেন? বিশেষ করে যেখানে মেয়েরা পড়ছে, সেখানে নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে। সেখানে পুরুষ থাকবে কেন? তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের বাইরে সিসি ক্যামেরা থাকলে ভিতরেও থাকা উচিত। যতই সিসি ক্যামেরা লাগানো হোক, মনের যদি বিকার ঘটে, তা হলে কঠোরতম শাস্তির দরকার।’’

পুরুষ বর্জনের উল্টো সুর এ দিন শোনা গিয়েছে কারমেল স্কুলের বিক্ষোভস্থলেও। ওই স্কুলের কিছু প্রাক্তন ছাত্রী এসে জানান, তাঁদের সময়ে নৃত্যশিক্ষক ছিলেন অসিত ভট্টাচার্য। তিনি পিতৃসুলভ আচরণ করতেন। ফলে মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক রাখা যাবে না, এ দাবি ঠিক নয় বলেই ওই প্রাক্তনীরা জানান।

‘‘স্কুলশিক্ষা দফতর বারবার গাইডলাইন তৈরি করে দিচ্ছে। সেই গাইডলাইনের ব্যতিক্রম হলে নিশ্চয় সরকার দেখবে,’’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE