সমস্ত রকম রক্ষা-কবচ মেনে দমদম সেন্ট্রাল জেলের মোড়ে নতুন ট্রান্সফর্মার বসানোর পরেও কী ভাবে তাতে আগুন লাগলো তারই তদন্ত শুরু করেছে সিইএসসি কর্তৃপক্ষ। কলকাতা ও তার আশেপাশে এই ধরনের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় ৬০টি ট্রান্সফর্মার রয়েছে সিইএসসি-র। কিন্তু এই ধরনের ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা কখনও ঘটেনি। সেন্ট্রাল জেলের ট্রান্সফর্মারটিতে কী এমন ঘটল, যে সেটি চালু করার সঙ্গে সঙ্গে ফেটে গিয়ে আগুন ধরে গেল শনিবার পর্যন্ত তার কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পায়নি সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
সিইএসসি-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুক্রবার রাতে আগুন নিভে যাওয়ার পর থেকেই পুড়ে যাওয়া ট্রান্সফর্মারটি খোলার কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজ হয়ে গেলেই পরীক্ষা করে দেখা হবে ট্রান্সফর্মারের মধ্যে কোথাও কোনও সুরক্ষার খামতি থেকে গিয়েছিল কি না! ওই কর্তার দাবি, ট্রান্সফর্মারের মধ্যে যে তেল থাকে তাতে চট করে আগুন লাগে না। ওই তেল ট্রান্সফর্মারকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, ট্রান্সফর্মারের একটি পৃথক চেম্বারে নাইট্রোজেন গ্যাসও থাকে। কোনও কারণে ট্রান্সফর্মারের তেল গরম হয়ে আগুন লেগে গেলে ওই নাইট্রোজেন গ্যাস তেলকে বাতাসের সংস্পর্শে আসতে দেয় না। ফলে আগুন লাগলেও বাতাসের অক্সিজেনের অভাবে চট করে আগুন নিভে যায়। সিইএসসি-কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রাথমিক পরীক্ষায় তাঁরা দেখেছেন, শুক্রবার ট্রান্সফর্মারের সব ধরনের সুরক্ষা বিধি কাজ করলেও আগুন নিভে যায় নি। এই বিষয়টিও সংস্থার কর্তারা অনুসন্ধান করে দেখতে শুরু করেছেন।
এ দিন সকালে সেন্ট্রাল জেল মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সিইএসসি-র কর্মীরা ট্রান্সফর্মারগুলি থেকে তেল বের করার কাজ করছে। চারিপাশে ভিড় করে রয়েছে স্থানীয় লোকজন। দমদম থানা থেকে পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। পথচলতি মানুষ অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন, পুড়ে যাওয়া ট্রান্সফর্মারটি দেখতে। আতঙ্ক এখনও গ্রাস করে রয়েছে ওই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে। এ দিনও সবার মুখে একটাই আলোচনা শোনা গিয়েছে, ট্রান্সফর্মারের আগুন পাশের পেট্রোল পাম্পে ছড়িয়ে পড়লে প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটত। ক্ষোভ রয়েছে সিইএসসি-র বিরুদ্ধেও। আশেপাশের বহুতল আবাসনগুলির আবাসিকদের বক্তব্য, ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় সিইএসসি কী ভাবে এই ধরনের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সফর্মার বসানোর সিদ্ধান্ত নিল। বিশেষ করে একটি বহুতল আবাসনের একেবারে গা ঘেঁষে।
সিইএসসি কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গেলে জনবসতিপূর্ণ এলাকাতেই ট্রান্সফর্মার বসাতে হবে। শহরের মধ্যে কোথাও কোনও ফাঁকা জায়গা থাকে না। দেশের প্রতিটি শহরে প্রতিটি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা তা-ই করে থাকে। সেন্ট্রাল জেলের আগুন লাগার বিষয়টি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই বিদ্যুৎ কর্তারা মনে করছেন। তাঁদের দাবি, সব ধরনের সুরক্ষা বিধি না মেনে ট্রান্সফর্মার বসালে, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁদেরও আর্থিক ক্ষতি হয়। কারণ এই ধরনের একটি ট্রান্সফর্মার বসাতে কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়ে থাকে। সেন্ট্রাল জেলের পুরনো ট্রান্সফর্মারটির বদলে নতুন ট্রান্সফর্মার বসানোর উদ্দেশ্য ছিল দমদম অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাটিকে আরও সুরক্ষিত করা।
স্টিফেন হাউস নামে বহুতল যে আবাসনটি শুক্রবারের আগুনে বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে কোনওক্রমে বেঁচে গিয়েছে, সেটির ক্ষতি হয়েছে অনেকটা। আগুনের তাপে বাড়িটিতে ফাটল ধরেছে কোথাও কোথাও। পলেস্তারা খসে পড়েছে। বহুতলটির বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওইরকম ভয়াবহ আগুন লাগার পরও সিইএসসি-র পক্ষ থেকে কোনও আধিকারিক তাঁদের সঙ্গে সৌজন্যতার খাতিরে একবার দেখাও করতে আসেননি। তপন দাস নামে এক আবাসিকের দাবি, আগুনের কারণে তাঁদের আবাসনের অনেকেরই ফ্রিজ, কম্পিউটার, এসি মেশিন খারাপ হয়ে গিয়েছে। কয়েক লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তাঁদের আবাসনে। তপনবাবুর প্রশ্ন, কে দেবে সেই ক্ষতিপূরণ? সিইএসসি-র ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই তাঁদের আজ আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে। ট্রান্সফর্মার যাতে সিইএসসি চালু না করে তার জন্য আবাসিকরা সবাই জোট হয়ে প্রতিবাদ জানাবে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
স্টিফেন হাউসের পক্ষ থেকে অবশ্য সুক্রবারই দমদম থানায় সিইএসসি-র বিরুদ্ধে একটি এফআইআর করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা। তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করে আগুন লাগার কারণ পরীক্ষা করে দেখবে। সিইএসসি-র এক কর্তার দাবি, আগুন নিভে যাওয়ার পর তাঁদের অনেকেই স্টিফেন হাউসে গিয়ে আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ও বাড়ির লিফ্ট চালু করতেও তাঁরা সাহায্য করেছেন। আবাসিকদের আতঙ্কের বিষয়টিকে সিইএসসি কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy