বাড়ির সামনে মৃতার মা বীণাদেবী।
রাতে চুপিসারে শববাহী গাড়ি এসে দাঁড়াতেই সন্দেহ হয়েছিল বাসিন্দাদের। খোঁজ করতেই তাঁরা জানতে পারেন, পাড়ারই এক মূক ও বধির মহিলা মারা গিয়েছেন। সে খবরে উত্তেজিত বাসিন্দারা ওই মহিলার পরিজনেদের উপরে চড়াও হন। তাঁদের অভিযোগ, ওই মহিলার দিদি, জামাইবাবু ও বোনঝি মিলে সম্পত্তির লোভে তাঁকে খুন করেছেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এই ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বেহালার ব্রজেন মুখার্জি রোডে।
পুলিশ জানিয়েছে, মূক ও বধির ওই মহিলার নাম কাকলি দাস (৪৬)। এলাকাবাসী তাঁর মৃত্যু নিয়ে থানায় খুনের অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। কাকলিদেবীর দেহ ময়না-তদন্ত হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তাঁর মানসিক রোগের চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেটে লিখেছেন, ‘হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে এবং অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু’। যদিও এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাকলিদেবীর দিদি কেয়া মণ্ডল বোনকে মারধর করতেন, নিয়মিত খেতে দিতেন না। সে জন্যই অপুষ্টিতে ভুগে মৃত্যু হয়েছে। কেয়াদেবী মাঝেমধ্যে বোনকে মারধরের কথা স্বীকার করলেও খেতে না দেওয়ার কথা মানতে চাননি। বুধবার সকালেও একদল বাসিন্দা বাড়িতে চড়াও হয়ে কেয়াদেবী ও তাঁর স্বামী বাপি মণ্ডলকে মারধর করেন। পুলিশ হামলাকারীদের থেকে বাঁচিয়ে কেয়াদেবীদের বাড়িতে ঢুকিয়ে দেয়।
পুলিশ ও বাসিন্দাদের একাংশের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, কাকলিদেবীর বাবা গোপেন দাস কলকাতা পুরসভার পদস্থ আধিকারিক ছিলেন। বেহালার বাঁশতলায় বিয়ে হয়েছিল কেয়াদেবীর। কিন্তু কাকলিদেবী অবিবাহিত ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পরে কেয়াদেবী, স্বামী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকতে আসেন। গত সেপ্টেম্বরে কেয়াদেবীর দশ বছরের ছোট মেয়েটি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে।
কাকলি দাস
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই কেয়াদেবী মা বীণাদেবী এবং বোনের উপরে অত্যাচার করতেন। বীণাদেবী পাড়ায় বেরিয়ে তা নিয়ে কান্নাকাটি করতেন। স্থানীয় দোকানদার লাল্টু সিংহ বলেন, ‘‘কাকলি কথা বলতে পারত না। কিন্তু অত্যাচারের কথা আকারে ইঙ্গিতে বোঝাত। গত মাস দেড়েক ওকে বা়ড়ি থেকে বেরোতে দেখিনি।’’ ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার রাতে লাল্টুবাবুই প্রথম শববাহী গাড়িটি দেখে
স্থানীয়দের খবর দেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পাড়ার লোককে ডাকছি দেখে, কেয়ার মেয়ে আমায় লাথি মারে। আমার একটা পা ভাঙা। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়েছিলাম।’’
মৃতার দিদি কেয়াদেবীকে মারধর করেন কিছু স্থানীয় বাসিন্দা। বুধবার, বেহালায়। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ সূত্রের খবর, স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত কাকলিদেবীর চিকিৎসা চলছিল। সেই চিকিৎসকই ডেথ সার্টিফিকেট লিখেছেন। এ দিন দুপুরে বেহালা থানায় যাওয়ার পথে বীণাদেবীও মেয়ে কেয়ার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ জানান। তিনি জানান, কেয়াদেবী তাঁকে ও কাকলিদেবীকে প্রায়ই মারধর করতেন। তবে তিনি জানান, গত সাত-দশ দিন ধরে কাকলিদেবী কিছু খেতে চাইছিলেন না।
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, প্রচুর উর্দিপরা এবং সাদা পোশাকের পুলিশ ব্রজেন মুখার্জি লেনের ওই বাড়ির ভিতরে ও বাইরে মোতায়েন রয়েছে। বাড়ির চারপাশে ভি়ড় করে স্থানীয় মহিলারা। পুলিশকর্মীরা তাঁদের বুঝিয়ে দূরে সরিয়ে দেন। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মেয়ের অত্যাচার থেকে বাঁচাতে বীণাদেবীকে আগেও থানায় নিয়ে গিয়েছিলাম। উনি ভয়ে কোনও অভিযোগ করতে চাননি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে কোনও গরমিল পেলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বীণাদেবী তাঁর উপরে হওয়া অত্যাচার নিয়ে অভিযোগ জানালেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy