Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জরায়ু বাঁচানোর অঙ্গীকারে মিলল আরও এক সাফল্য

পরিবার সূত্রের খবর, মেয়েটির ১১ বছর বয়সে প্রথম এই সমস্যার কথা জানা যায়। চিকিৎসকেরা জানান, যোনির নিম্নভাগ, অর্থাৎ যোনিদ্বার না থাকায় ঋতুস্রাব বাইরে বেরোতে পারছে না।

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০৪:০১
Share: Save:

স্বাভাবিক নিয়মে ঋতুস্রাব হত না মেয়েটির। শরীরের ভিতরে জমা হয়ে থাকত সেই রক্ত। ফলে ঋতুকালীন যন্ত্রণায় কষ্ট পেত কিশোরী। অসহ্য যন্ত্রণার কারণে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হত। ঘুমের ইঞ্জেকশন এবং ব্যথা কমানোর ওষুধই ছিল তখন ভরসা। যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পেতে বছরখানেক ধরে গর্ভনিরোধক ওষুধ খাইয়ে ঋতুস্রাব বন্ধ করা হত বাংলাদেশের রাজশাহীর বাসিন্দা বছর তেরোর ওই কিশোরীর। যন্ত্রণা থেকে চিরকালের মতো মুক্তি পেতে জরায়ু বাদ দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল পরিবারটিকে। সম্প্রতি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই কিশোরীর জরায়ু বাঁচিয়ে স্থায়ী সমাধান করলেন এ শহরের চিকিৎসকেরা।

পরিবার সূত্রের খবর, মেয়েটির ১১ বছর বয়সে প্রথম এই সমস্যার কথা জানা যায়। চিকিৎসকেরা জানান, যোনির নিম্নভাগ, অর্থাৎ যোনিদ্বার না থাকায় ঋতুস্রাব বাইরে বেরোতে পারছে না। জন্মগত এই বিরল ত্রুটির কারণেই এই ব্যতিক্রম। প্রতি দশ হাজারে এক জনের হয় এমন। বাংলাদেশে অস্ত্রোপচারের চেষ্টা করে ব্যর্থ পরিবার তাই মেয়েটিকে নিয়ে ভারতে আসে। সম্প্রতি ল্যাপারোস্কোপি করে অসম্পূর্ণ যোনির নিম্নাংশ বা ভ্যাজাইনা ট্র্যাক্ট তৈরি করা হয়েছে ওই কিশোরীর। অস্ত্রোপচার করেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় এবং পলি চট্টোপাধ্যায়। আপাতত সুস্থ কিশোরী ভর্তি রয়েছে শহরের একটি নার্সিংহোমে।

অভিনিবেশ বলেন, “যোনিদ্বার না থাকায় ঋতুস্রাবের সময়ে রক্ত বার হতে পারত না মেয়েটির। তা গিয়ে জমত যোনির উপরের অংশে এবং তা বেলুনের মতো ফুলে মূত্রথলিতে চাপ সৃষ্টি করত। যার জেরে ওই সময়ে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেত কিশোরীর। অস্ত্রোপচারের শুরুতেই রক্তপাত বন্ধ করতে জরায়ু, জরায়ুমুখ এবং যোনির ধমনীটি কিছু ক্ষণের জন্য ক্লিপ করে আটকে রাখা হয়েছিল। যোনির ফোলা অংশ কেটে জমা রক্ত পাম্প করে বার করা হয়। এর পরে বিশেষ পদ্ধতিতে যোনি কেটে তৈরি করা হয় যোনিদ্বার।’’ তিনি জানান, আগে এমন ক্ষেত্রে কম বয়সেই জরায়ু বাদ দেওয়া হত। কিন্তু এই ব্যবস্থার ফলে মেয়েটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। পরবর্তীকালে বিয়ে এবং সন্তান ধারণেও কোনও সমস্যা হবে না।

একে বিরল বললেও অতি বিরল বলতে চাইছেন না চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, জরায়ু বাঁচানোর এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে এখন অনেকেই স্বাভাবিক জীবন পাচ্ছেন। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলছেন, “চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে ‘কনজেনিটাল অ্যানোম্যালি অব ফিমেল জেনিটাল ট্র্যাক্ট’। খুব বিরল না হলেও এমন ঘটনা সংখ্যায় কম। যোনিদ্বার (ভ্যাজাইনা ট্র্যাক্ট) দিয়ে বেরিয়ে আসে ঋতুস্রাব। সেই ট্র্যাক্ট না থাকলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটা তৈরি করা হয়।”

এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “অসম্পূর্ণ যোনি জন্মগত ত্রুটি। তা সারাতে শহরের সরকারি হাসপাতালেও এখন এই অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Girl Uterus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE