বি টি রোডে হেরিটেজ মিনারের গা ঘেঁষে গজিয়ে উঠেছে একগুচ্ছ ঝুপড়ি। মিনারের গায়েও পোস্টারের ছড়াছড়ি। আশপাশে বর্জ্যের স্তূপ। এ বার এই দৃশ্যদূষণ দূর করতে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। ‘দি গ্রেট ট্রিগোনোমেট্রিক সার্ভে’, অর্থাৎ জিটিএস-এর গুরুত্ব বোঝাতে ১৮৩ বছর আগে তৈরি হয়েছিল ওই মিনার। অবিভক্ত ভারতবর্ষের বিজ্ঞানসম্মত জড়িপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জিটিএস কথাটি। ভৌগোলিক গবেষণায় এর বিশেষ মাত্রা রয়েছে।
জিটিএস ব্যাপারটা কি? এই ভারত উপমহাদেশের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির অক্ষরেখা-দ্রাঘিমারেখা এবং আনুষঙ্গিক ভৌগোলিক বিজ্ঞানসম্মত কোনও তথ্য ঊনবিংশ শতকের গোড়াতেও সরকারের কাছে ছিল না। ১৭৯৭-এ ক্যাপ্টেন উইলিয়াম ল্যাম্বটন কলকাতায় মহারানির ৩৩তম রেজিমেন্টে যোগ দেন। আমেরিকায় সার্ভেয়ার হিসাবে অভিজ্ঞতার সুবাদে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এ তল্লাটে এমন একটি সমীক্ষার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। ফলে তিনি এ ব্যাপারে বিলেতের কর্তাদের কাছে আবেদন জানান। অনুমোদনও মেলে। প্রাথমিক কাজ শুরু হয় ১৮০০ সালের ১৪ অক্টোবর। তবে কাজ চলে প্রায় কয়েক দশক ধরে। মাদ্রাজ থেকে নেপাল পর্যন্ত প্রায় ২৪০০ কিলোমিটার অর্থাৎ প্রায় ১৫০০ মাইল অংশকে ভাগ করা হয়েছিল বেশ কিছু ত্রিকোণ অংশে। বিলেত থেকে আনা হয়েছিল বিভিন্ন মানের থিওডোলাইট যন্ত্র। ল্যাম্বটনের অবসরের পর অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার দায় বর্তায় জর্জ এভারেস্টের উপরে।
মিনারের নীচে এ ভাবেই গজিয়ে উঠেছে ঝুপড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
জিটিএস-কে স্মরণীয় করে রাখতে কলকাতায় এই ৭৫ ফুট উঁচু স্তম্ভটি তৈরি হয় ১৮৩১ সালে। কলকাতা পুরসভার ঐতিহ্য-নির্মাণের তালিকায় রয়েছে পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের এই মিনার। ইটের তৈরি চার কোণা মিনারের গায়ে বাংলা ও ইংরেজিতে জরিপের এবং জর্জ এভারেস্টের নামের উল্লেখ রয়েছে।
মিনার সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অপরিচ্ছন্ন আশপাশ। বিটি রোডে মিনারের গা-ঘেঁষে রয়েছে বস্তার সারি। পিছনে একগুচ্ছ দোকান। বাঁ দিকে তৈরি হয়েছে গোটা দশেক ঝুপড়ি। একাধিক ক্রেনে ঢাকা পড়ছে মিনারের একাংশ। ডান দিকে তৈরি হয়েছে পুলিশের একটি কিয়স্ক। মিনারের এই গুরুত্বের কথা জানা ছিল না বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিকের। ঐতিহ্য-নির্মাণ সংরক্ষণে তাঁদের ভূমিকার কথা জানতে চাইলে বললেন, “কী করব বলুন। মিনারের পোস্টার আমরা খুলে দিলে আবার কেউ এসে আটকে দেবে। দেখব, কী করা যায়। ওটা দেখভালের মূল দায়িত্ব তো পূর্ত দফতরের।” দায়িত্বপ্রাপ্ত এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (পূর্ত) কনকেন্দু সিংহ বলেন, “জায়গাটাকে পরিচ্ছন্ন করতে প্রয়োজনে মিনারের গা-ঘেঁষে গজিয়ে ওঠা ঝুপড়ি স্থানান্তর করতে হবে।” এখন মিনারের ফুট দুই ব্যবধানে চারপাশে নিচু গ্রিল দিয়ে ঘেরা আছে। ঘেরা অংশ বাড়িয়ে বাগান তৈরি করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে তিনি নির্দেশ দেন বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy