Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কোন ডেরা থেকে ‘মোমো’-র জাল ছড়াচ্ছে, তদন্তে সিআইডি

জলপাইগুড়ি, খড়্গপুরেও মোমোর ফাঁদে প়়ড়েছেন কয়েক জন। সিআইডি কর্তারা মনে করছেন, এই ফাঁদ থেকে নতুন প্রজন্মকে দূরে রাখতে হলে কাউন্সেলিং দরকার। একই সঙ্গে এই খেলা নিয়ে সচেতনতার প্রসারেও নামতে চাইছে সিআইডি। 

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৫
Share: Save:

কার্শিয়াং, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুরের পর এ বার মহিষাদল, বেল়ডাঙা। রাজ্য ক্রমেই ছড়াচ্ছে ‘মোমো’ খেলার জাল! কিন্তু কোন ডেরা থেকে কারা এই জাল ছড়াচ্ছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই অভিযোগকারীদের মোবাইল ফোনে আসা লিঙ্কের সূত্র ধরে সাইবার জগতের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অপরাধীদের হদিস পেতে চাইছে সিআইডি। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই কিছু সূত্র মিলেছে। দেখা গিয়েছে, মেক্সিকো, জাপান ও কলম্বিয়া থেকে ওই লিঙ্ক ছড়ানো হয়েছে। তবে সত্যিই ওই অপরাধীরা কলম্বিয়ায় রয়েছে নাকি নম্বর ভাঁড়িয়ে এই কাজ করছে তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

এডিজি (সিআইডি) সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘আমরা লিঙ্কগুলি বিশ্লেষণ করে রহস্যের গভীরে ঢুকতে চাইছি।’’ তবে সাইবার বিশেষজ্ঞদের অনেকে এ-ও বলছেন, বিদেশে থাকলে ওই অপরাধীদের নাগাল পাওয়া অসম্ভব। শুধু তাই নয়, তাদের পরিচয়ও জানা যাবে কি না, তা বলা মুস্কিল।

রাজ্যের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (সাইবার) বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হোয়্যাটসঅ্যাপে লিঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে লিঙ্কের ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস খুঁজতে হোয়্যাটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই তা মেলে না।’’

মহিষাদলের ঘটনায় এই খেলার ‘ডাক’ পেয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র তুহিনশুভ্র আগুয়ান। অভিযোগ, প্রথমে তাঁর মোবাইলে ওই মেসেজ এলে সে নম্বরটি ‘ব্লক’ করে দেয়। পরে অন্য নম্বর থেকে ফের মেসেজ আসায় তার পরিবার স্থানীয় থানায় জানায়। থানা থেকে তাকে সাইবার অপরাধ শাখায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। বেলডাঙায় এই ফাঁদে পড়েছেন বছর সাতাশের এক আঁকার শিক্ষক এবং এক একাদশ শ্রেণির ছাত্র। এর আগে কার্শিয়াঙে এক ছাত্রের মৃত্যুও হয়েছে এই খেলার ফাঁদে। জলপাইগুড়ির ঘটনায় অবশ্য দেখা গিয়েছে, মোমো-কে হাতিয়ার করে ভয় দেখাচ্ছিল প্রাক্তন প্রেমিক।

সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘মোমো’ আদতে খেলার আড়ালে ‘ব্ল্যাকমেলিং’। প্রথমে হোয়্যাটসঅ্যাপে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি লিঙ্ক পাঠানো হয়। সেটি খুললেই খেলা শুরু হয়। কিন্তু ওই লিঙ্কের ভিতরে থাকা ‘স্পাইঅয়্যার’ (বিশেষ প্রোগ্রামিং)-এর মাধ্যমে খেলোয়া়ড়ের মোবাইলকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ‘অ্যাডমিন’ (এই খেলার সুতো যার হাতে)। তার ফলে নানা ধরনের তথ্য হাতিয়ে ব্ল্যাকমেলিং শুরু করে। এ ভাবেই মানসিক চাপ দিয়ে খেলোয়াড়কে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে
দেয় ‘অ্যাডমিন’।

ইতিমধ্যেই কার্শিয়াঙে এক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। জলপাইগুড়ি, খড়্গপুরেও মোমোর ফাঁদে প়়ড়েছেন কয়েক জন। সিআইডি কর্তারা মনে করছেন, এই ফাঁদ থেকে নতুন প্রজন্মকে দূরে রাখতে হলে কাউন্সেলিং দরকার। একই সঙ্গে এই খেলা নিয়ে সচেতনতার প্রসারেও নামতে চাইছে সিআইডি।

এক পুলিশকর্তা বলছেন, কৌতূহল বেশি থাকায় অল্পবয়সীরাই এই ফাঁদে বেশি করে পড়ে। খেলার প্রতি আসক্তিও জন্মায়। এই ধরনের অপরাধীরা খুব সহজেই অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে খেলোয়াড়েরা চাইলেও তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। মানসিক জোরই এই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার এক মাত্র উপায় বলে সাইবার বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

অন্য বিষয়গুলি:

Momo Suicide Game Momo Challenge CID
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE