Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে আম পাকাতে কার্বাইডই

উত্তর ২৪ পরগনায় রয়েছে প্রচুর আমের বাগান। দত্তপুকুর এলাকায় দেখা গেল, গাছ থেকে কাঁচা আম পেড়ে ঝুড়িতে বিচালি ও কাগজ পেতে রাখা হচ্ছে।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

আম পাকানোর জন্য এ রাজ্যে যথেচ্ছ কার্বাইড ব্যবহারের জেরে বিদেশে আম রফতানিতে আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। অসমের মতো এ দেশের একাধিক রাজ্যেও কার্বাইডে ব্যবহার করে পাকানো আম বিক্রি করা নিষেধ। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার চাষিরা। এর পরেও কার্বাইড দিয়ে আম পাকানো বন্ধ হয়নি। বারাসত, দত্তপুকুর, আমডাঙা, দেগঙ্গা এলাকায় কৃষি দফতরের নিষেধা়জ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেদার চলছে কার্বাইডের ব্যবহার। বিষাক্ত রাসায়নিক যুক্ত সেই আম কলকাতা হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা রাজ্যে।

উত্তর ২৪ পরগনায় রয়েছে প্রচুর আমের বাগান। দত্তপুকুর এলাকায় দেখা গেল, গাছ থেকে কাঁচা আম পেড়ে ঝুড়িতে বিচালি ও কাগজ পেতে রাখা হচ্ছে। ঝুড়ির মধ্যে মাটির ভাঁড়ে কার্বাইডের টুকরো রেখে চলছে আম পাকানো। দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার পাইকারি বাজার থেকে রোজ ওই আম বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, শিলিগুড়ি, নেপালে যায়। চৌরাশির আম চাষি খালেক আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘কার্বাইড দিয়ে আম পাকালে রং গাঢ় হলুদ হয়। ক্রেতারা তা বেশি পছন্দ করেন।’’

একটি বহুজাতিক সংস্থার রসায়নবিদ অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্যালসিয়াম কার্বাই়ড থেকে নির্গত গ্যাস জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি করে। এটি ফল পাকাতে সাহায্য করে।’’ কার্বাইড দেওয়া ফল খেলে স্নায়ুর সমস্যা, মাথার যন্ত্রণা, অবসাদ দেখা যেতে পারে। কমতে পারে শ্রবণশক্তি, কর্মশক্তি। যে চাষিরা কার্বাইড ব্যবহার করেন, তাঁদের অনেকে চর্মরোগের শিকারও হন।

উত্তর ২৪ পরগনার জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক হৃষিকেশ খাঁড়া বলেন, ‘‘কার্বাইড দিয়ে আম পাকানো ঠিক নয়। এতে শরীরের ক্ষতি হয় বলেই নিষেধা়জ্ঞা জারি হয়েছে। রাসায়নিক ছাড়া ফল পাকানোর পদ্ধতি নিয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।’’ তবে কম খরচে অতি দ্রুত ফল পাকে বলে চাষিরা কার্বাই়়ড ব্যবহার করেন বলে দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। এই প্রবণতা রুখতে ওই সব এলাকায় হানা দিয়ে কার্বাই়়ড দিয়ে পাকানো আম বাজেয়াপ্ত করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা দফতর। কিন্তু তাতেও বন্ধ হচ্ছে না ওই রাসায়নিকের ব্যবহার। আমডাঙ্গার কামদেবকাটির অসীম দাস বলেন, ‘‘দশ বছর ধরে পাকা আম অসমে রফতানি করছি। গত বছরেও প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়। এ বছর পাকা আম যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। তবে তা কার্বাইড দিয়ে পাকানোর জন্য, সেটা জানা ছিল না।’’ একই বক্তব্য বারাসতের সন্তোষপুরের আম চাষি দুলাল মণ্ডলেরও।

বিদেশ বা ভিন্‌ রাজ্য মুখ ফেরানোয় কার্বাই়ডে পাকা আম গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। বাঙালির সাধের এই ফলের মধ্যে দিয়ে বিষ ঢুকছে রাজ্যবাসীর শরীরেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Carbide Mangoes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE