Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Kalyan Banerjee Abhishek Banerjee

আটাত্তর বছরেও প্রেসিডেন্ট! ‘নবীন’ সেনাপতির জন্মদিনে ট্রাম্প কার্ড ‘প্রবীণ’ কল্যাণের, শুনে কী বললেন অভিষেক?

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই অভিষেকের পটুয়াপাড়ার বাড়ির সামনে অনুগামীরা আসতে শুরু করেছিলেন। বিকেল নাগাদ তা থিকথিকে ভিড়ে পরিণত হয়। জন্মদিনের জনসংযোগ পর্যবসিত হয়ে গেল পূর্ণাঙ্গ ইভেন্টে।

(বাঁ দিকে) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪৩
Share: Save:

বয়স বিতর্ক আরও এক বার খুঁচিয়ে তোলার পক্ষে কি ‘প্রতিপক্ষের’ জন্মদিনই প্রকৃষ্ট? কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তা-ই মনে করেন। বিশেষত, যদি তার আগের দিন আমেরিকার মসনদ দখল করে বসেন আটাত্তরের প্রবীণ (না কি বৃদ্ধ?)।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন ছিল বৃহস্পতিবার। সেই উপলক্ষে তিনি তাঁর পটুয়াপাড়ার বাড়ির সামনে অনুগামী, শুভার্থী এবং হিতৈষীদের সঙ্গে দেখা করতে নেমে এসেছিলেন। ঘটনাচক্রে, তার কয়েক ঘণ্টা আগে তৃণমূলের ‘প্রবীণ’ সাংসদ কল্যাণ বলেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়কে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে দু’ভাবে ব্যাখ্যা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক, মার্কিন জনতা শিক্ষিত হলেও তাঁরা লিঙ্গবাদী। তাই দু’বারই মহিলা প্রার্থীর বিরুদ্ধে ট্রাম্প জিতেছেন। এবং দুই, ট্রাম্পের বয়স ৭৮। তাঁর জয় প্রমাণ করে দিল, রাজনীতিতে বয়স কোনও বিষয় নয়।’’

এমনিতে আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের একটি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদের মতামত খুব গুরুত্ব পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু কল্যাণ রাজনীতিকের পাশাপাশি আইনজীবীও বটে! বৃহস্পতিবার দুপুরে ওয়াকফ সংক্রান্ত সংসদের যৌথ কমিটির বিষয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ। তিনি নিজেও ওই কমিটির সদস্য। সেখানেই তাঁর কাছে একটি ‘ফুলটস ডেলিভারি’ আসে আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে। কল্যাণ সেটিকে নিজের মতামত অনুযায়ী মাঠের বাইরে পাঠান। তবে পাশাপাশি পরের ডেলিভারিটি ব্যাট-প্যাডের মধ্যে ফাঁক না-রেখেই খেলেন। বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে অভিষেকই যে প্রশাসনে আসবেন, এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। তবে তিনি কবে প্রশাসনে আসবেন, তা ঠিক করবেন মমতাই।

প্রত্যাশিত ভাবেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা-হইচইয়ের অবকাশে অভিষেককে কল্যাণের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ঘাসফুলের ‘নবীন’ সেনাপতি প্রথমে ঠোঁট ওল্টান। তার পরে ‘বাউন্সার’টি দেন— ‘‘সে তো জো বাইডেনেরও বয়স ৮১ বছর। কিন্তু সমাজে এই অংশের সংখ্যা কত?’’ তার পর কথায় কথায় আরও এক বার সেটাই বলেন, যা তিনি আগেও একাধিক বার বলেছেন, ‘‘বয়স একটা ফ্যাক্টর। পঁয়ষট্টির পরে অনেক কিছুই করা যায় না!’’

অর্থাৎ, কল্যাণ যতই ‘ট্রাম্প কার্ড’ খেলুন, অভিষেক পাল্টা ‘নো ট্রাম্প’ খেলেই যাবেন!

জন্মদিনে অভিষেক।

জন্মদিনে অভিষেক। ছবি: তৃণমূলের ফেসবুক পেজ থেকে।

গত জানুয়ারি মাসে নবীন-প্রবীণ বিতর্কে তোলপাড় পড়েছিল তৃণমূলে। যার শুরু করেছিলেন কুণাল ঘোষ। পাল্টা ময়দানে নেমে ‘প্রবীণ’ সৌগত রায় বলেছিলেন, ‘‘মনের বয়সটাই আসল।’’ অভিষেক তখন নিজের অবস্থানের কথা স্পষ্ট করেছিলেন। যার ফলে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল, লোকসভার প্রার্থিতালিকা থেকে কি প্রবীণেরা বাদ পড়বেন? যদিও তা হয়নি। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত, কল্যাণেরা টিকিট পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই তিন প্রার্থীর প্রচারে দেখা যায়নি অভিষেককে। যদিও মমতা নিজে নবীন-প্রবীণের ভারসাম্যের পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন। তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী বলেছিলেন, ‘‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। আর নতুন চাল আগে বাড়ে। আমার দুটোই দরকার।’’

অতীতে অভিষেক সম্পর্কে প্রকাশ্যেই কল্যাণ নানা সমালোচনামূলক মন্তব্য করতেন। কোভিডের সময়ে অভিষেকের ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’কেও তুলোধনা করেছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। যেমন সৌগত একমাত্র মমতায় ‘নিবেদিতপ্রাণ’ ছিলেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কল্যাণের অবস্থান বদলেছে। তাঁর মনে হচ্ছে, অভিষেক অনেক ‘পরিণত’ রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন। সৌগতও সম্প্রতি অভিষেক সম্পর্কে ‘আস্থা এবং ভরসা’ প্রকাশ করেছেন। কল্যাণ মনে করেছেন, ‘নবজোয়ার’ যাত্রার পরে অভিষেকের মধ্যে বদল এসেছে। প্রকাশ্যে সে কথাও বলেওছেন। অভিষেকও কল্যাণকে বার্তা পাঠিয়ে সংসদে তাঁর ভাষণের প্রশংসা করেছেন। ওয়াকফ নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উত্তেজিত কল্যাণ কাচের বোতল ভেঙে হাত কেটে ফেলার পরে আমেরিকা থেকে বার্তা পাঠিয়ে অভিষেক কল্যাণের খোঁজ নিয়েছেন। তবে সেই ‘সৌজন্য’ যে প্রবীণ-নবীন পুরনো বিতর্কে প্রলেপ দিতে পারেনি, তা বৃহস্পতিবারের বারবেলায় স্পষ্ট।

বাকিটা অবশ্য মসৃণ। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই অভিষেকের পটুয়াপাড়ার বাড়ির সামনে অনুগামীরা আসতে শুরু করেছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তা থিকথিকে ভিড়ে পরিণত হয়। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে নীচে নেমে অনুগামীদের সঙ্গে দেখা করেন অভিষেক। হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলির বিস্তীর্ণ অংশ থেকে অভিষেকের অনুগামীরা এসেছিলেন। অভিষেক রাস্তায় বেরিয়ে আসার পরে ব্যারিকেড সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। একটা সময়ে অভিষেককেই ব্যারিকেড ধরে রাখতে হয়। অনুগামীদের আনা অসংখ্য কেকও কাটতে হয়েছে তৃণমূলের সেনাপতিকে। বেজেছে ঢাকের বাদ্যিও।

আক্ষরিক অর্থেই অভিষেকের জন্মদিনের জনসংযোগ পর্যবসিত হয়েছিল পূর্ণাঙ্গ ইভেন্টে। যেখানে স্লোগান উঠল, ‘লড়াই জারি রাখতে হবে, আগামীকে মানতে হবে’। অদূরেই মমতার বাড়ি। সেই পাড়াতেই শোনা গেল ‘দাদা’র নামে গগনভেদী চিৎকার। একটি চৌহদ্দিতে শুভেচ্ছা জানাতে আসা নেতাদের বসার বন্দোবস্ত হয়েছিল। তবে সেই ব্যারিকেড পেরিয়ে অনেকেই অভিষেকের কাছাকাছি প্রথমে যেতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন। পরে অভিষেক কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে এসে আরও কিছু নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময় অভিষেককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ পান শান্তনু। সঙ্গে ছিলেন তাঁর কাউন্সিলর স্ত্রী কাকলি সেনও। তবে, শান্তনুকে অভিষেকের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। ঘটনাচক্রে, এই শান্তনুকেই আরজি কর-পর্বে মুখপাত্র পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল।

তা হলে অভিষেকের ‘কাছাকাছি’ কারা রইলেন? রইলেন মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার, ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক, টিএমসিপি সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, অসীমা পাত্রেরা। ব্যারিকেডের পাশে ফুটপাথে শামিয়ানা টাঙানো হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় সওয়া এক ঘণ্টা সেখানে কথা বলেন অভিষেক। সেই বৃত্তে ছিলেন কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী, বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। ছিলেন শওকত মোল্লা, নির্মল মাজিরা। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা পীযূষ পান্ডেও। বেশ কয়েক জন বিধায়কের সঙ্গেও দেখা করে শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন দলের সেনাপতি। কয়েক জন জেলা সভাপতির সঙ্গেও দেখা করেছেন অভিষেক। সেই তালিকায় ছিলেন শ্রীরামপুরের সভাপতি অরিন্দম গুঁইন, বনগাঁর বিশ্বজিত দাসেরা। কাউকে অভিষেক বলেন, ‘‘আরে, একটু দৌড়ঝাঁপ করুন! পেটটা তো বেড়ে যাচ্ছে।’’ কাউকে হাত জোড় করে বলেন, ‘‘সরি গো, কাল তোমার ফোনটা ধরতে পারিনি!’’

কল্যাণ ফোন করেছিলেন? না। তবে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অভিষেক লিখেছেন, ‘থ্যাঙ্কস’!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy