Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ira Basu

Ira Basu: ভেঙে পড়ছে বাড়ি, চুরি হচ্ছে জিনিসপত্র, ফিরে আসুন ইরাদি, চাইছেন সল্টলেকের পড়শিরা

ইরার জীবনের মতো সল্টলেকের অন্য বাড়ির থেকে আলাদা এই বাড়ি। কেন তিনি এই জীবন বেছে নিলেন? অনেকের মতো প্রশ্ন প্রতিবেশীদেরও।

 ইরা বসু (বাঁ দিকে)।  তাঁর সল্টলেকের বাড়ির বর্তমান অবস্থা।

ইরা বসু (বাঁ দিকে)। তাঁর সল্টলেকের বাড়ির বর্তমান অবস্থা। —নিজস্ব চিত্র

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:১৫
Share: Save:

বিবি ৮৪। সল্টলেকের সব বাহারি বাড়ির তুলনায় এই বাড়ি কিছুটা আলাদা। দরজা জানলায় কোনও এক সময় সাদা রং করা হয়েছিল। কিন্তু দেওয়ালের প্লাস্টারে কোনও দিন রঙ হয়েছে বলে মনে হয় না। সদর দরজায় ঝুলছে জং ধরা তালা। সদরের চাবিটা কেউ যত্ন করে রেখেছে কি না সন্দেহ। শুক্রবার মীরা ভট্টাচার্য বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর নিজের ছোট বোন ইরা বসুর নিজস্ব বাড়ির ঠিকানা বিবি ৮৪। যদিও ইরার আপাতত ঠিকানা লুম্বিনি পার্ক। যে বাড়ি ছেড়ে উনি ফুটপাথের জীবন বেছে নিলেন, সেই বাড়ির অবস্থা দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা হওয়ার সুবাদে অনায়াসে রাজনীতির আলোয় থাকতে পারতেন। কিন্তু তা না করে, কোনও এক অজানা কারণে ফুটপাথের জীবন বেছে নিয়েছেন মেধাবী, শিক্ষিতা ইরা। সল্টলেকের বাড়িটির মতোই তাঁর জীবনও অন্যদের থেকে আলাদা। কেন তিনি এই জীবন বেছে নিলেন? অনেকের মতো প্রশ্ন প্রতিবেশীদেরও। এলাকার অনেকে ইরাকে চোখে না দেখলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকার বাড়ি হিসাবে ওই বাড়ি পরিচিত। একই সঙ্গে ওই পাড়ায় ইরার প্রতিবেশীরা চাইছেন, তিনি বাড়ি ফিরে আসুন। লুম্বিনি পার্কের কোনও ওয়ার্ডে নয়, তাঁর নিজস্ব বাড়িতেই পাকাপাকি বসবাস শুরু করুন।

ইরা বসুর বিবি ৮৪ ঠিকানার বাড়ি।

ইরা বসুর বিবি ৮৪ ঠিকানার বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র

ইরার মতোই একলা, অযত্নে পরে রয়েছে তাঁর বাড়িও। একতলা বাড়ির কার্নিশে শ্যাওলা। বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় ঘাস, ফার্নের বাড়বাড়ন্ত। মালি আর মালিকের যত্নের অভাবে আগাছা নিজের মতো বেড়ে উঠেছে। বিবি ৮৩-র বাসিন্দা মঞ্জু ধনুকা বললেন, ‘‘মাঝে মাঝে এত নোংরা হয়ে যায়, যে মশা হয়। দুর্গন্ধ বেরোয়। তখন আমরাই পরিষ্কারের ব্যবস্থা করি।’’

ইরার বাড়ির পাশেই থাকেন মঞ্জু। গত ১২ বছর ধরে ইরার পাশের বাড়িতে থাকলেও কোনও দিন তাঁকে চোখে দেখেননি বলে জানালেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আগে এই বাড়িতে তো পুলিশ পাহারা থাকত। বাড়ির বাইরে ২৪ ঘণ্টা বন্দুকধারী পুলিশ মোতায়েন থাকত। কিন্তু তালা থাকার জন্য বোধ হয় ওঁরাও ভিতরে যেতে পারতেন না। ২০১১-১২ সালের পর থেকে পুলিশও থাকে না।’’

সদর দরজার তালা থাকলেও বাড়িতে ঢোকার তালা কেউ ভেঙে ফেলেছে। ঘরের ভিতরে যাওয়ার দরজাটাও ভাঙা। কোলাপ্সিবল গেট অর্ধেক খোলা। সিঁড়িঘরের ছাদটাও ভেঙে গিয়েছে। দেখে বোঝা যায়, কোনও এক সময় অ্যাসবেস্টসের ছাওনি দেওয়া ছিল। কিন্তু এখন ভাঙনের চিহ্ন চার দিকে। মঞ্জু বলছেন, ‘‘ছাদে একটা জলের ট্যাঙ্ক ছিল। সেটাও চুরি করে নিয়ে গিয়েছে কেউ। ছাদের আলো লাগানোর জায়গা থেকে বাড়ির অনেক কিছুই চুরি হয়ে যাচ্ছে।’’

সদর দরজায় জং ধরা তালা ঝুলছে।

সদর দরজায় জং ধরা তালা ঝুলছে। —নিজস্ব চিত্র

বিবি ৮৪-এর উল্টো দিকের বাড়ি বিবি ১৮২। এই বাড়ির বাসিন্দারা পাড়ায় ৩৫ বছরের বেশি দিন ধরে রয়েছেন। নিজে তদারকি করে ইরার বাড়ি তৈরির স্মৃতি এখনও টাটকা এই বাড়ির বাসিন্দাদের। কিন্তু রাজনৈতিক রং লাগার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাড়ির কর্তা ধীরে ধীরে বললেন, ‘‘ইরাদি তো আমাদের বাড়িতেও আসতেন। সংবাদমাধ্যমে তাঁর ছবি দেখে খুব খারাপ লাগছে। উনি স্বাধীনভাবেই থাকতে ভালোবাসেন। হাসপাতালের ওয়ার্ডে বন্দি হয়ে থাকবেন কী করে?’’ খানিক বাদে কিছু ভেবে বললেন, ‘‘এখানেই ফিরে আসুন। আমরা পাড়ার সবাই মিলে ঠিক কোনও ব্যবস্থা করে দেব। এখানে থাকতে ওঁর কোনও অসুবিধা হবে না।’’ যদিও সল্টলেকের এই বাড়ি স্বেচ্ছায় ছেড়েছেন ইরা। উনি নিজের মতো থাকতে ভালোবাসেন বলে জানিয়েছেন দিদি মীরা। ইরার পড়শি ওই বাড়ির আরও এক বাসিন্দা পুরনো কথা মনে করে বললেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠানেও তো এসেছিলেন ইরাদি।’’

বছর ত্রিশ আগে সল্টলেকে প্রতিবেশীর বাড়িতে  ইরা বসু(বাঁ দিকে)।

বছর ত্রিশ আগে সল্টলেকে প্রতিবেশীর বাড়িতে ইরা বসু(বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র

যদিও সল্টলেকের বাড়িতে এক টানা তাঁকে থাকতে দেখেননি কেউ। মাঝে মাঝে আসতেন আবার চলে যেতেন। ইরার পাশের বাড়ি দেখাশোনা করেন এক ব্যাক্তি। তিনি বললেন, ‘‘এক দিন শিয়ালদহ স্টেশনে দেখে বললাম, দিদিমণি আপনি এখানে কী করছেন? বাড়ি চলুন। কিন্তু উনি ওখানেই থাকেন বললেন। তাই আর কিছু বলিনি।’’

ওই পাড়ার বিবি ৮২ বাড়ির বাসিন্দা মোবাইলে ইরার বর্তমান ছবি দেখলেন। ভালো করে দেখে বললেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে উনিই। আবার সন্দেহও হচ্ছে। আগেও একটু অগোছালো থাকতেন বটে। কোনও ভাবে চুল বাঁধা থাকত। সাধারণ ছাপা শাড়ি পরে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতাম। অনেক সময় রেগে যেতেও দেখেছি।’’
পড়শিরা স্মৃতি খুঁজছেন। বর্তমানকে মেলাতে চাইছেন অতীতের সঙ্গে। বুঝতে চাইছেন কেন ইরা এমন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ‘অট্টালিকা’ থেকে ঠিকানা হল ‘কেয়ার অফ ফুটপাথ’। স্রেফ নিজের ইচ্ছা, নাকি কোনও মনোরোগ—এখনও উত্তর নেই। উত্তর যা-ই হোক, বিবি ৮৪-র পড়শিরা চাইছেন, বাড়ির মালকিন ফিরে আসুন ‘আপন কুলায়-মাঝে’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy