Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ফর্ম চাওয়ার আর্জিতে নাম পাঁচ ফেরারের

মঙ্গলকোট ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৫টি পঞ্চায়েতে রয়েছেন প্রায় ৬৮ হাজার বোরো চাষি। কালবৈশাখীর পরে চাষিদের ক্ষতিপূরণের জন্য চলতি বছরের জুলাইয়ে ফর্ম আসে ২৫ হাজার। গত ১৬ অগস্ট শেষ হয় ফর্ম বিলি। এর তিন দিন পরে, ১৯ অগস্ট পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কাছে ফের ফর্ম দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।

আবেদনপত্র

আবেদনপত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:১৭
Share: Save:

কেউ পুলিশের খাতায় ‘ফেরার’, কেউ খুনের অভিযোগে জেল হাজতে রয়েছেন।— কিন্তু তার পরেও ক্ষতিপূরণের ফর্ম চেয়ে করা আবেদনে নাম রয়েছে তাঁদের। সম্প্রতি এমনই অভিযোগ উঠেছে মঙ্গলকোটে। শুধু তাই নয়, যাঁদের নামে ওই আবেদন করা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই ক্ষতিপূরণের জন্য ঠিক ব্যক্তি নন, দাবি কৃষি আধিকারিকের তদন্ত-রিপোর্টেই।

মঙ্গলকোট ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৫টি পঞ্চায়েতে রয়েছেন প্রায় ৬৮ হাজার বোরো চাষি। কালবৈশাখীর পরে চাষিদের ক্ষতিপূরণের জন্য চলতি বছরের জুলাইয়ে ফর্ম আসে ২৫ হাজার। গত ১৬ অগস্ট শেষ হয় ফর্ম বিলি। এর তিন দিন পরে, ১৯ অগস্ট পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কাছে ফের ফর্ম দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। সেই আবেদনপত্রে মোট ৫৭৫৯ জনের সই রয়েছে। আবেদনপত্রের নীচে রয়েছে, মঙ্গলকোটের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর স্ট্যাম্প, সই।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আবেদনের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ব্লক কৃষি দফতর। ইতিমধ্যে গত ২৯ অগস্ট শিমুলিয়ায় খুন হওয়া তৃণমূল নেতা ডালিম শেখের দাদা আবদুল্লা শেখ মহকুমাশাসক সৌমেন পালের (কাটোয়া) কাছে অভিযোগ করেন, ভাইয়ের খুনের মামলায় অভিযুক্ত উজ্জ্বল শেখ, আনাই শেখ, আজফর মল্লিক, লাল্টু শেখ, বাবর আলি শেখের সই রয়েছে ওই আবেদনপত্রে। সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’

ব্লক কৃষি দফতরের তদন্ত রিপোর্ট। নিজস্ব চিত্র

৩০ অগস্ট মহকুমাশাসককে ব্লক কৃষি আধিকারিক উৎপল খেঁয়ারু রিপোর্ট দিয়ে জানান, আবেদনকারী ৫৭৫৯ জন ৪৯৫৯টি পরিবারের সদস্য। তার মধ্যে মাত্র ৬৬৭টি পরিবার ফর্ম পায়নি। ওই রিপোর্টের কথা সামনে আসতেই সরব হন চাষিরা। বক্সিনগরের জাহাঙ্গির শেখ, সিঙ্গতের বোরহান শেখদের মতো চাষিরা বলেন, ‘‘আমরা তো আগেই ফর্ম পেয়েছি। তারপরেও আমাদের সই ওই আবেদনে থাকল কী ভাবে? সই জালিয়াতি হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আবেদনকারীদের মধ্যে এ ছাড়াও গরমিল রয়েছে। এমনকী তাদের মধ্যে কেউ কেউ নাবালক বলেও দাবি প্রশাসনের এক কর্তার। শুধু তাই নয়, সোমবার আবদুল্লা সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘নুরু শেখ ও আজু শেখ নামে দু’জন জেল হাজতে থাকলেও তাদের নামেও আবেদন করা হয়েছে।’’

কিন্তু এমন গরমিল হল কী ভাবে? পূর্ব বর্ধমানের জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু একাধিকবার ফর্ম বিলি নিয়ে দুর্নীতি বন্ধে সরব হয়েছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘নিজে বিষয়টা দেখছি। কোনও ভাবেই ফর্ম পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি চলবে না। যত বড় নেতাই হোক না কেন, দুর্নীতি হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর দাবি, ‘‘চেষ্টা করেছি যাঁরা যোগ্য, তাঁরাই যেন ফর্ম পান। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাইনি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE