Advertisement
E-Paper

‘বাড়ির টাকা না পেলে ভোট দেব না’, সচিবকে জবাব

জনপ্রতিনিধিরাও আবাসের তালিকায় তাঁদের ঘনিষ্ঠদের নাম ঢোকানো কিংবা পরিচিতদের নাম যাতে বাদ না যায়, তার জন্য ব্লকস্তরে চাপ তৈরি করছেন বলে অভিযোগ।

আবাস যোজনার বাড়ি।

আবাস যোজনার বাড়ি। —প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০৯
Share
Save

সমীক্ষা করতে এসে আবেদনকারীর দোতলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পঞ্চায়েত সচিব প্রশ্ন করেন, ‘পাকা বাড়ি আছে তবু আবাস প্রকল্পে টাকা পাওয়ার আবেদন করেছেন কেন?’ গলসির খেতুড় গ্রামের ওই গৃহকর্ত্রীর সপাট জবাব, ‘‘বাড়ি তৈরির টাকা না পেলে ভোট দিতে যাব কেন? টাকা দিতেই হবে।’’ শুধু সচিব পি উলগানাথন নন, চমকে যান অন্য আধিকারিকেরাও। পরে পঞ্চায়েতের কর্তারা জানান, ওই মহিলা কোনও ভাবেই টাকা পাবেন না।

জনপ্রতিনিধিরাও আবাসের তালিকায় তাঁদের ঘনিষ্ঠদের নাম ঢোকানো কিংবা পরিচিতদের নাম যাতে বাদ না যায়, তার জন্য ব্লকস্তরে চাপ তৈরি করছেন বলে অভিযোগ। সোমবার বুদবুদের বৈঠকেও কয়েক জন জনপ্রতিনিধি সরাসরি তাঁদের ঘনিষ্ঠদের নাম আবাস-তালিকায় যোগ করার জন্য পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কাছে অনুরোধ জানান। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ার এক জেলা পরিষদের সদস্য দলের কর্মীদের নাম আবাসের তালিকা থেকে যাতে বাদ না যায় এবং ঘনিষ্ঠদের নাম নতুন করে ঢোকানো হয়, তার জন্য বিডিওর কাছে জোরালো দাবি করেন। বিডিও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের বিষয়টি জানান। আরও কয়েকটি ব্লকেও জনপ্রতিনিধিরা ‘চাপ’ দিচ্ছেন বলে বিডিওরা জানিয়েছেন।

তৃণমূলের একাংশের দাবি, ২০১৮ সালে প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়। ২০২২ সালে ঝাড়াইবাছাই করে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি হয়। সেই সময় পঞ্চায়েতগুলিতে ক্ষমতাসীন ছিল তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠী। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পরে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর পরিবর্তন হয়। এখনকার প্রধানেরা ক্ষমতা জাহির করতেই ‘নিজেদের লোকের’ নামে তালিকায় ঢোকাতে চাইছেন। সমীক্ষকদের দাবি, গলসির খেতুড়ার মতো আরও কিছু গ্রামে দোতলা পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাসের টাকা চেয়ে হাত পাততে দেখেছেন তাঁরা। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সেই ‘অযোগ্য’ উপভোক্তার নাম সুপারিশ করার নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় কোনও প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। সেই কারণেই পঞ্চায়েত সচিবের সামনেও ওই বৃদ্ধা ভয় পাননি বলে মনে করা হচ্ছে।

চাপের কথা অস্বীকার করেননি অতিরিক্ত জেলাশাসক শুভলক্ষ্মী বসু। তিনি শুধু বলেন, “যথাযোগ্য জায়গায় বিষয়গুলি জানানো হয়েছে।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহারও দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। বাংলা আবাস যোজনায় দলের নেতাদের হস্তক্ষেপ নিয়ে গোড়া থেকেই বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সেই বার্তা দিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্র সরকার ১০০ দিনের, আবাসের টাকা আটকে দিয়েছে। তার বদলে রাজ্য সরকার গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। সেখানে দলের লোকেরা সমীক্ষায় হস্তক্ষেপ করে ‘নিজের লোক’কে বাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রীর মূল উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে।

বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলের নেতাদের ‘আচরণ’ যে পরিবর্তন হয়নি বোঝাই যাচ্ছে। এই ‘চাপ’ কতটা আধিকারিকরা সামলাতে পারছেন, তা চূড়ান্ত তালিকা তৈরির পরেই বোঝা যাবে। তৃণমূলের দাবি, ব্যক্তিগত স্তরে কোনও জনপ্রতিনিধি আবেদন করলেও সামগ্রিক ভাবে আবাস-সমীক্ষায় দল কোনও হস্তক্ষেপ

করছে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Abas Yojana pm cm

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}