মহামারির আকার নিতে পারে আর্সেনিক দূষণ।
ভূমিকম্পের আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না নেপালের। ক্ষয়ক্ষতির থেকেও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে আগামীর আশঙ্কা। ভূমিকম্পের পরবর্তী ফলাফল নিয়ে স্বস্তিতে নেই এই শহরও।
গত ২৫ এপ্রিলের পর থেকে লাগাতার ভূমিকম্প এবং তার ‘আফটার শক’-এ কেঁপে উঠেছে কলকাতা এবং তার ফলেই কলকাতার পানীয় জলে আর্সেনিকের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে অনেকখানি। এমনই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন কলকাতার বিজ্ঞানী মহলের একাংশ। তাঁদের এমন মতামতের পিছনে রয়েছে চিনের এক রিপোর্ট থেকে উঠে আসা তথ্য। বেজিং-এর বিজ্ঞানীদের তৈরি ওই রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে চিনের সিচুয়ান প্রদেশে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৮। এই ভূমিকম্পের পরই দেয়াং এবং গুয়ানগাং অ়ঞ্চলের জলে আর্সেনিকের পরিমাণ বেড়ে যায় ভয়ানক ভাবে। এই দুটি অঞ্চলই ছিল এপিসেন্টারের কয়েকশো কিলোমিটারের মধ্যে। যদিও পরে সময়ের সঙ্গে আস্তে আস্তে কমে যায় ওই পরিমাণ।
ভূমিকম্পের সঙ্গে ভৌম জলস্তরের ওঠানামা, নতুন প্রবেশ্য জলস্তর সৃষ্টি, এ সব অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত। ভূ-আলোড়নের ফলে মাটির ভেতরকার স্তরে বহু ফাটল তৈরি হয়। তার ফলেই ভূগর্ভের প্রাকৃতিক জলস্তরে ঢুকে পড়ে আর্সেনিক। এই জল যখন আমরা পানীয় হিসেবে ব্যবহার করি তখন আমাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে আর্সেনিক দূষণজনিত রোগগুলি। হিমালয় থেকে উত্পন্ন নদীগুলি জলের সঙ্গে আর্সেনিক বহন করে আনে। গঙ্গা, যমুনা, সিন্ধুর মতো নদীগুলি তাদের বয়ে আনা পলির সঙ্গে এই আর্সেনিকও নদীগর্ভে জমা করতে থাকে। জমা হতে হতে এই আর্সেনিক মাটির স্তর থেকে চুঁইয়ে ভূগর্ভের প্রাকৃতিক জলস্তরে মিশে যায় এবং বিষিয়ে দেয় সমগ্র জলস্তরকেই। রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কে জি নাথ বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের ফলে জলে আর্সেনিকের বৃদ্ধি এখন নতুন এক গবেষণার বিষয়। ঘটনা অস্বাভাবিক কিছুই নয়।’’ কম্পনের ফলে মাটির মধ্যেকার বিষাক্ত ধাতব কণাগুলি জলস্তরের সঙ্গে মিশে গিয়ে পরিস্রুত পানীয় জলের যোগান ব্যাহত করে।
বিধ্বস্ত নেপাল। ছবি: এএফপি।
কলকাতায় প্রথম আর্সেনিকের সন্ধান মেলে ১৯৯৩ সালে। বর্তমানে শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮০টিই আর্সেনিকের কবলে। দক্ষিণ কলকাতায় অবস্থা সবচেয়ে সঙ্কটজনক। ‘হু’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি লিটার জলে আর্সেনিকের মাত্রা ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হলেই তা চিন্তার বিষয়। সেখানে যাদবপুর, বিক্রমগড় থেকে পাওয়া জলের নমুনায় প্রতি লিটার জলে কোথাও কোথাও ১৯৯ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিকও মিলেছে। লেক গর্ডেন্স অঞ্চলের জলে পরিমাণটা আরও ভয়ানক। প্রতি লিটার জলে ৮২৫ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক, যা কি না স্বাভাবিকের থেকে ১৬ গুণ বেশি। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ত্বকের সমস্যা, গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল, রক্ত, হৃদযন্ত্রের সমস্যাগুলি।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে পাওয়া খবরে জানা যায়, কলকাতার মোট জনসংখ্যার ছয় ভাগের এক ভাগই ভূগর্ভের জলের উপরেই নির্ভরশীল। রাজারহাটের স্যাটেলাইট টাউনশিপ, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের রাস্তার প্রকল্পগুলি পুরোটাই ভূগর্ভের জলের উপর নির্ভরশীল। তাই এই অঞ্চলে পরবর্তীকালে আর্সেনিক দূষণের সমূহ আশঙ্কা।
আর্সেনিক সমস্যা মেটাতে কয়েক বছর আগে পূর্ব কলকাতার ধাপার কাছে একটি জল শোধনাগার তৈরি করে কলকাতা পুরসভা। বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনার জল শোধনাগার থেকে কলকাতার মূল জলের ট্যাঙ্ক পর্যম্ত একটি নতুন পাইপলাইন বসানোর চেষ্টাও চলছে। যদিও পুরসভা সূত্রেই জানা যাচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা রিপোর্ট তৈরি এখনও বিশ বাঁও জলে। সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া অন্য উপায় দেখছেন না কেউই। তবে আশার কথা এই যে আর্সেনিক সমস্যা মোকাবিলায় দেরিতে হলেও তত্পর হচ্ছে প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy