‘কাকু’ সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবার সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ। প্রায় সাত ঘণ্টা পর সেখান থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। তার পরেই নির্মলের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাড়িতে গেলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতার সেই ‘কাকু’ সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। বেরিয়ে তিনি জানালেন, বিধায়কের সঙ্গে সৌজন্যমূলক দেখা করতে এসেছিলেন। এর পরেই দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। নির্যাতিতার বাবা-মায়ের ডাকেই সেই রাতে শ্মশানে গিয়েছিলেন তিনি। সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে নির্যাতিতার দেহের ময়নাতদন্তের সময় উপস্থিত থাকা চিকিৎসক যে অভিযোগ করেছিলেন, তা নিয়েও মুখ খুলেছেন সঞ্জীব।
আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষিতা ও নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়া সঞ্জীবকে ‘কাকু’ বলেই সম্বোধন করতেন। নির্যাতিতার দেহ দাহ করা হয়েছিল পানিহাটি শ্মশানে। ৯ অগস্ট রাতে পানিহাটির শ্মশানে অনেকের সঙ্গে ছিলেন সঞ্জীবও। দাহ করানোর সেই নথিতে তাঁর সই রয়েছে। নির্যাতিতার বাবা-মা সোমবার জানিয়েছেন, সঞ্জীবকে তাঁরাই নিয়ে গিয়েছিলেন। তার পরেও আঙুল উঠছে তাঁর দিকে। এ প্রসঙ্গে নির্মলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সঞ্জীব বলেন, ‘‘ওঁর বাবা ডেকেছিলেন তখন। মেয়ের মৃত্যুর পর ওঁদের মাথা ঠিক ছিল না। দাহের শংসাপত্রে আমি সই করি। সেই কাগজ ওদের বাড়িতে ছিল। পরের দিন সেটা নিয়ে পুরসভা থেকে মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে আসি।’’ তবে তাঁর বিরুদ্ধে শ্মশানে ‘সক্রিয়তা’ দেখিয়ে নথিতে সই করার যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের কোনও ভূমিকা ছিল না বলেই জানিয়েছেন সঞ্জীব। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা (নির্যাতিতার বাবা-মা) চাপে ছিলেন। সদ্য সন্তান হারিয়েছিলেন। আমায় ফোন করেছিলেন। আমি ওই দিন সকালে দিল্লি থেকে এসেছিলাম। নির্যাতিতার বাবার ফোন পেয়ে যাই।’’
রবিবার সিবিআই আধিকারিকদের সামনে হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে নির্যাতিতার দেহের ময়নাতদন্তের সময়ে উপস্থিত থাকা চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাস দাবি করেন, প্রাক্তন এক কাউন্সিলর তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন, তাড়াতাড়ি ময়নাতদন্ত শেষ না করলে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেবেন! অপূর্ব এ-ও জানিয়েছিলেন, তাঁর যত দূর মনে পড়ছে, ওই ব্যক্তি নিজেকে নির্যাতিতার ‘কাকু’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। সঞ্জীব সোমবার সন্ধ্যায় দাবি করেছেন, এ রকম কিছু তিনি বলেননি। তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু বললে ঠিক, আমি বললে ভুল? ডাক্তারবাবুরটাই বেদবাক্য! আমি বলছি, ওই ব্যক্তি আমি ছিলাম না। ওই জায়গায় বড় বড় পুলিশ কর্তা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আমি বললে কি কিছু হবে? অত বড় হাসপাতালে ওই ডাক্তারকে কী করে চিনব? কে ময়নাতদন্ত করবেন, তা জানব কী করে?’’ তিনি এ-ও দাবি করেছেন, এ নিয়ে যা বলার ‘ওপেন ফোরামে’ বলবেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ মনে করছেন না যে, আমারও পরিবার রয়েছে। যাঁরা অভিযোগ করছেন, সামনে আসুন। আমায় দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
৯ অগস্ট রাতে নির্যাতিতাকে দাহ করার সময় পানিহাটির শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন নির্মলও। সোমবার তাঁকে সিজিও দফতরে তলব করে সিবিআই। যদিও তাঁর দাবি, ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সিজিও দফতরে সেখানে প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পর তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান সঞ্জীব। ব্যারাকপুরের সংসদ পার্থ ভৌমিক এবং জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যামও গিয়েছিলেন দেখা করতে। অভিযোগ উঠেছে, নির্যাতিতার দেহ ‘তড়িঘড়ি’ দাহ করার জন্য সেই রাতে পরিবারের উপর ‘চাপ’ তৈরি করা হয়েছিল। নির্মলের বিরুদ্ধে শ্মশানে ‘সক্রিয়তা’ দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সিজিও দফতর থেকে বাড়িতে ফিরে বলেন, ‘‘যদি নির্যাতিতার বাবা আমাকে বলতেন, তিনি দেহ সংরক্ষণ করে রাখতে চান, আবার ময়নাতদন্ত করাতে চান, তা হলে আমি রেখে দিতাম। কিন্তু তিনি এ সব কথা কাউকেই বলেননি। বরং পরের দিন থেকে এ সব কথা যাঁদের দিয়ে বলাচ্ছেন, আমার মনে হয় আন্দোলনের রাশ তাঁদের হাতেও নেই। আন্দোলনের রাশ সাধারণ মানুষের হাতে।’’ তিনি দাবি করেছেন, যে অভিযোগই উঠুক, তিনি বিচারের দাবি থেকে সরছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক, নির্যাতিতা বিচার পান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy