Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

মৃত্যুর পরে টনক নড়ল কেন, প্রশ্ন

বৃহস্পতিবারই বসিরহাট পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের চার বছরের শিশু মিরাজুলের মৃত্যু হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে। অভিযোগ, ডেঙ্গিতে ভুগেই মাত্র তিন দিনের জ্বরে মারা গিয়েছে শিশুটি। এলাকায় বহু মানুষ জ্বরে আক্রান্ত বলেও অভিযোগ। 

আস্তানা: ঘরের কাছে জমে জল। বাড়ছে মশা। নিজস্ব চিত্র

আস্তানা: ঘরের কাছে জমে জল। বাড়ছে মশা। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪৯
Share: Save:

ধোঁয়া ছড়িয়ে ক্ষতের ‘মলম’ দিতে এসেছিলেন যাঁরা, তাঁদের গালমন্দ করে ধুয়ে দিল জনতা।

বৃহস্পতিবারই বসিরহাট পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের চার বছরের শিশু মিরাজুলের মৃত্যু হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে। অভিযোগ, ডেঙ্গিতে ভুগেই মাত্র তিন দিনের জ্বরে মারা গিয়েছে শিশুটি। এলাকায় বহু মানুষ জ্বরে আক্রান্ত বলেও অভিযোগ।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকালে এলাকায় মশা মারার কামান দাগতে যান কাউন্সিলরের লোকজন। তাতে আগুনে ঘি পড়ে। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এক জনের মৃত্যুর পরে টনক নড়েছে পুরসভার। আগে থেকে জঞ্জাল সাফাই, মশা মারার ব্যবস্থা করলে এই পরিস্থিতিই তৈরি হত না। ইতিমধ্যেই এলাকার অন্তত ২০ জন ডেঙ্গি, জ্বর নিয়ে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। শিশুর মৃত্যুর পরে ‘লোক-দেখানো’ নালা সাফাই, ধোঁয়া, চুন-ব্লিচিং ছড়ানোর কাজ হচ্ছে, মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষজনের।

জনতার চাপের মুখে পড়ে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমিন সুলতানার স্বামী বাবু গাজি বলেন, ‘‘জ্বরে অনেকে অসুস্থ। তার উপরে শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের ক্ষোভ হওয়া স্বাভাবিক। স্বাস্থ্য দফতরকে শিবির করতে বলা হয়েছে।’’

শুক্রবার ত্রিমোহণীর পাখাপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তা-পাঁচিলের পাশে জমে রয়েছে আবর্জনা। নিকাশি নালা বন্ধ। নোংরা জল পেরিয়ে ঘরে ঢুকতে হচ্ছে। এ সব দেখিয়ে মাফুজা বিবি, নাজিরা বিবি, মরিয়ম বিবি, মহিদুল গাজি, সাবির হোসেনরা বলেন, ‘‘আমাদের অনেকে যখন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে আরজিকরে ভর্তি ছিলাম, তখন কেউ খোঁজ নেয়নি। ডাস্টবিনের অভাবে বাড়ির চার ধারে নোংরা জমছে। শিশুর মৃত্যুর পরে এখন কাজ দেখাতে এসছেন ওঁরা।’’

শীতের শুরুতেও নিকাশি নালা ছাপিয়ে নোংরা জল বারান্দা ছুঁয়েছে বলে জানালেন ফন্তু গাজি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কী অবস্থায় আছি, তা কেউ দেখতে আসে না।’’ আলি আসোয়াদ গাজির দাবি, পরিবারের কয়েক জন জ্বরে আক্রান্ত। কাউন্সিলরকে লিখিত ভাবে নিকাশি নালা পরিস্কার ও নোংরা সাফাইয়ের জন্য বলেও সুরাহা হয়নি।

মৃত শিশুর বাড়ির সামনে ধোঁয়া দিতে দিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েন কাউন্সিলরের লোকজন। নাজির হোসেন, সিন্টু দাসরা বলেন, ‘‘নোংরা আবর্জনায় ভরে গিয়েছে এলাকা। মশার উপদ্রব বাড়ছে। ঘরে ঘরে ভয় বাসা বেঁধেছে।’’

খাদিমুল ইসলাম বলেন, ‘‘একটু আগে থেকে যদি এত তোড়জোড় হত, তা হলে হয় তো কোলের ছেলেটাকে এ ভাবে হারাতে হত না।’’

এই ওয়ার্ডের পাশের ১১ নম্বর ওয়ার্ডেও জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। স্থানীয় মানুষের দাবি, গত এক মাসে আরএন মুখার্জি রোড-সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ৪০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।

ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সহিদুল্লাহ জানান, নিকাশি নালা পরিস্কার ও চুন-ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Municipality Anger Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE