ইনচিওনে মেরি কমের মার। ছবি: পিটিআই
বয়স ৩১। তিন সন্তানের জননী। কিন্তু বক্সিং রিংয়ে নামলে তাঁর সামনে এ সব কোনও বাধাই যে ধোপে টেকে না সেটা ফের প্রমাণ করে দিলেন মেরি কম। এ বার এশিয়াডে।
রুপোলি পর্দায় তাঁর আত্মজীবনী বক্স অফিসে হিট। চলতি মাসের গোড়ায় মুক্তি পাওয়ার পরই যা সারা ফেলেছে গোটা দেশে। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আরও অনেক ‘হিট’ পারফরম্যান্স যে দেশকে দেওয়ার বাকি রয়েছে সেটা মঙ্গলবার দেখল গোটা বিশ্ব। মেরির দাপটে ফ্লাইওয়েট বিভাগে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে।
শেষ চারের যুদ্ধে ভিয়েতনামের লি থি ব্যাংকে এ দিন মেরি ৩-০ হারিয়ে অন্ততপক্ষে রুপো জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। পাশাপাশি বুঝিয়ে দেন শুধু ফর্মই নয়, চার বছর আগে ২০১০ গুয়াংঝৌ এশিয়াডের ব্রোঞ্জ পদক জয়ের রেকর্ডটা এ বার উন্নত করার জন্য বেশ তেতেও আছেন। প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে যে ভাবে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না তাতেই সেটা পরিষ্কার। এ দিন যেমন লি থি ব্যাংও মেরির পাঞ্চ আর ক্ষিপ্রতার হদিশই পেলেন না কোনও রাউন্ডে। তাই ফাইনালেও সামনে যেই পড়ুন প্রথম এশিয়াড সোনা জেতার দৌড়ে মেরিকে টক্কর দেওয়াটা যে মোটেই সোজা হবে না মণিপুরি বক্সার সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তবে মেরির ভক্তদের একটাই প্রার্থনা, চূড়ান্ত লড়াইয়ে সামনে যেন কোনও কোরীয় প্রতিদ্বন্দ্বী না পড়েন। তা হলে মেরির অবস্থাও সতীর্থ লইশরাম সরিতা দেবীর মতো হতে পারে।
এ দিন লাইটওয়েট বিভাগের সেমিফাইনালে কোরিয়ার জিনা পার্কের বিরুদ্ধে সরিতা দেবী দাপটে লড়াই করেও হেরে যান। তিনটে রাউন্ডেই সরিতা পরিষ্কার এগিয়েছিলেন। তবু কোরীয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে অন্যায় ভাবে সুবিধে দেওয়া হল বলে অভিযোগ জানিয়েছে ভারত। সরিতাও বাউটের পর কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে দেন, “ভাল করে প্র্যাকটিস করার জন্য সন্তানকেও কাছে আসতে দিইনি। কিন্তু এত পরিশ্রম করার পরও এ রকম বিতর্কিত কিছু হলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না।”
বিচারকদের হাতে ‘মার’ খেয়ে সরিতা। ছবি: পিটিআই
ফল দেখে বাউটের বিচারকদের দর্শকদের প্রবল টিটকিরিও সহ্য করতে হয়। সরিতার স্বামী থইবা সিংহ উত্তেজিত হয়ে রিংয়েই ঢুকে পড়তে যাচ্ছিলেন। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ও তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, “আপনারা বক্সিংকে শেষ করে দিচ্ছেন”। মেরি কমও সরিতা দেবির হার নিয়ে বলে দেন, “ও হেরে গেল বিপক্ষে কোরীয় ছিল বলে। এর থেকে দুঃখের আর কী হতে পারে!”
ভারতের কিউবান কোচ বি আই ফার্নান্ডেজ আরও চাঁচাছোলা ভাবে বলেন, “প্রতিবাদ করে কোনও লাভ হবে না। তাতে ৫০০ ডলার নষ্ট হবে। কাজের কাজ কিছু হবে না। বাউটের ফলটা আগেই ঠিক করা ছিল। সরিতা যে জিতেছে সেটা পরিষ্কার। কিন্তু অর্থই যে এখানে শেষ কথা বলল সেটা ৩-০ ফলেই বোঝা যায়।”
পরে সরিতার হারের জন্য সরকারি ভাবে প্রতিবাদও জানায় ভারত। টুইটারেও ঝড় উঠে যায়, প্রশ্ন ওঠে ‘এশিয়ান গেমস নয়, ইনচিওনে আসলে চলছে কোরীয় গেমস’। অনেকে তো আবার এও অভিযোগ করেন, ‘এমন তো হওয়ারই ছিল। এশিয়ান বক্সিং সংস্থার অধিকাংশ মাথাই তো কোরিয়ার। তাই কোরীয় বক্সাররা সুবিধে পাবেন এতে আর আশ্চর্য কী!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy