এ বার ভাগ্য বদল হবে কোহলীদের! ফাইল চিত্র
ইডেন তখন প্রায় দর্শকশূন্য। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর সবে ১৪ রানে লখনউ সুপার জায়ান্টসকে হারিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। রাত সোয়া বারোটা নাগাদ শেষ হওয়া খেলার পর স্বাভাবিক ভাবেই দর্শকদের মধ্যে তাড়াহুড়ো ছিল মাঠ ছেড়ে যাওয়ার। সেই ফাঁকা ইডেনে ঘিয়ে অথবা হালকা নীল রঙের চেয়ারগুলোর কোনওটাতেই হয়তো ভাগ্যদেবী বসে মুচকি হাসছেন বেঙ্গালুরু দলের অধিনায়ককে দেখে।
প্রেস বক্সের নীচে তখন ফ্যাফ ডুপ্লেসি শোনাচ্ছেন তাঁর আনন্দের কথা। রজত পটীদার কত ভাল খেলেছেন সেই সব কথা। জয়ী অধিনায়ক হিসাবে হর্ষ ভোগলেকে সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি পিছন ঘুরতেই ইডেনের ফ্লাড লাইটে ঝলসে উঠল একটা সংখ্যা। ১৩।
যে সংখ্যাকে পশ্চিমী দেশে অশুভ সংখ্যা হিসাবে দেখা হয়। যিশুখ্রিষ্ট-সহ ১৩ জন শেষ বার একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন। এর পরেই যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। শিল্পী লিয়োনার্দো দ্য ভিঞ্চি সেই ঘটনা নিয়েই এঁকেছিলেন ‘দ্য লাস্ট সাপার’। সেখানেও উপস্থিত ছিলেন ১৩ জন। পাশ্চাত্যে তাই এই ১৩ সংখ্যাটিকে অশুভ হিসাবেই দেখা হয়।
কিন্তু এই ১৩ নম্বরই ভাগ্য ফেরাচ্ছে আরসিবি-র। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া আইপিএল এখনও পর্যন্ত জিততে পারেনি বেঙ্গালুরু। এই বছর বিরাট কোহলী নেতৃত্ব দিতে না চাওয়ায় আরসিবি-র প্রথম পরীক্ষা ছিল অধিনায়ক খুঁজে নেওয়া। নিলামে ফ্যাফ ডুপ্লেসিকে কিনে নেয় তারা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে দীর্ঘ দিন নেতৃত্ব দেওয়া ডুপ্লেসি জানেন দলকে ট্রফি এনে দেওয়াই তাঁর কাছে একমাত্র প্রার্থনা বেঙ্গালুরুর সমর্থকদের। চেন্নাই সুপার কিংসে দীর্ঘ দিন খেলা ডুপ্লেসি সেই দলে পরতেন ১৩ নম্বর জার্সি। এই বছর জার্সির রং পাল্টালেও নম্বর পাল্টায়নি। সেই ‘অশুভ’ নম্বরের জার্সি পরেই ভাগ্য ফিরছে বেঙ্গালুরুর।
এ বারের আইপিএলে পরিস্থিতি এমন ছিল যে আরসিবি-র হয়তো প্লে-অফে খেলাই হত না। কিন্তু এক রকম ভাগ্যের জোরেই এলিমিনেটরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে লালজার্সিধারীরা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স হারিয়ে দেয় দিল্লি ক্যাপিটালসকে, আর প্লে-অফে উঠে আসেন ডুপ্লেসিরা। আবার সেই এলিমিনেটরে যখন ডুপ্লেসি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, বিরাটরা ব্যর্থ, তখন রান করে যান রজত পাটীদার। ইডেনে রাজকীয় ইনিংস খেলেন তিনি। আরসিবি-র পাশে পাশেই যেন হাঁটছেন ভাগ্যদেবী।
তবে ১৩ নম্বর জার্সি যে ‘অশুভ’ নয়, তা ফুটবল মাঠে প্রমাণ করেছেন গার্ড মুলার, ইউসেবিয়ো, মাইকেল বালাক, টমাস মুলারের মতো ফুটবলাররা। এঁদের মধ্যে জার্মানির দুই মুলার বিশ্বকাপ জিতেছেন ১৩ নম্বর জার্সি পরেই। ইউসেবিয়ো ৭৪৫ ম্যাচে ৭৩৩টি গোল করেছেন। তাঁর ক্ষিপ্রতার কারণে ‘কালোচিতা’ বলেও পরিচিত ছিলেন এই পর্তুগিজ তারকা। জার্মানির মাঝ মাঠে বালাক অপ্রতিরোধ্য হলেও তাঁর ভাগ্যে যদিও বিশ্বকাপ ছিল না। ক্রিকেট মাঠে যদিও ১৩ নম্বর জার্সি পরে খুব বেশি ক্রিকেটারকে দেখা যায় না। ডুপ্লেসি নিজেও দেশের হয়ে খেলার সময় ১৩ নম্বর পরতেন না। সেই সময় ১৮ নম্বর জার্সি পরতেন তিনি। যে নম্বরের জার্সি পরেন বিরাট।
প্রসঙ্গত, ১৩ সংখ্যাটি পাশ্চাত্যে অশুভ মনে করা হলেও, ভারতে তেমনটা নয়। শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশ দিনটি বরং শুভ বলেই ধরা হয় প্রাচ্যজ্যোতিষ মতে। এই দিনটিকে শিবের দিন বলেও মনে করা হয়। এই দিনটি সেই কারণে শান্তি, দীর্ঘায়ু এবং সৌভাগ্যের প্রতীক।
পাশ্চাত্যে যা অশুভ, ভারতে সেটাই শুভ।
পশ্চিমের দেশ থেকে পূর্বে পা রেখে সেই ১৩ সংখ্যাটিই শুভের প্রতীক হয়ে উঠছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্যাফ ডুপ্লেসির ১৩ নম্বর জার্সিই বেঙ্গালুরুর কাছে হয়ে উঠছে শুভ। ১৫ ম্যাচে ৪৪৩ রান করে দলকে যেমন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাতে তাঁর সাহসী নেতৃত্বের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে বার বার।
আর ভাগ্য তো সব সময় সাহসীদের সঙ্গেই থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy