Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

দিনমজুরির সংসারে আলো সোনার মেয়ে

ছোট থেকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে কেবলই কাঁদতেন জিরাটের অনিমা সিকদার। বছরে পর বছর বয়স বেড়েছে মেয়ের। কিন্তু ‘বুদ্ধিসুদ্ধি’ বাড়েনি বলে আত্মীয় প্রতিবেশীদের কাছে কম খোঁটা শুনতে হয়নি। আর সেই মেয়েই রবিবার মা-কে কাঁদিয়েছে আবার— আনন্দে। মেয়ের সাফল্যের আনন্দে।

আবুধাবিতে পদক হােত সুলতা। নিজস্ব চিত্র

আবুধাবিতে পদক হােত সুলতা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জিরাট শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৯:২৭
Share: Save:

ছোট থেকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে কেবলই কাঁদতেন জিরাটের অনিমা সিকদার। বছরে পর বছর বয়স বেড়েছে মেয়ের। কিন্তু ‘বুদ্ধিসুদ্ধি’ বাড়েনি বলে আত্মীয় প্রতিবেশীদের কাছে কম খোঁটা শুনতে হয়নি। আর সেই মেয়েই রবিবার মা-কে কাঁদিয়েছে আবার— আনন্দে। মেয়ের সাফল্যের আনন্দে।

রবিবার আবুধাবি স্পেশ্যাল অলিম্পিকের আসর থেকে সোনা জিতেছেন বছর আঠারোর সুলতা সিকদার। সাইক্লিং-এর ১০ কিলোমিটার রোড রেসে প্রথম হয়েছেন তিনি। তবে সুলতা একা নন। স্পেশ্যাল অলিম্পিকে দেশের জন্য সাফল্য এনেছেন হুগলিরই আর এক কন্যা। শনিবার রিষড়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা হাসি দুলে সাইক্লিং-এই শনিবার পেয়েছেন রুপো।

সু‌লতা ছোট থেকেই জিরাটের ‘আস্থা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। সেখানকার প্রধান শিক্ষক ও সম্পাদক অচিন্ত্য দত্ত জানান, সুলতার ৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অচিন্ত্যবাবুর কাছেই তিনি খেলাধুলার প্রশিক্ষণ নেন। ছোট থেকে মানসিক চাহিদাসম্পন্নদের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। এ ভাবেই বড় মঞ্চের জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন। আবুধাবির প্রতিযোগিতাই তার প্রমাণ। অভাবি পরিবারের মেয়েটির সাফল্যে খুশি স্কুলের সকলেই।

অচিন্ত্যবাবু জানান, সুলতারা জিরাট স্টেশনের কাছে হাসিমপুরে রেললাইনের ধারে থাকেন। বাড়ি বলতে টিনের ঘর। মা অনিমাদেবী এবং বাবা প্রশান্তবাবু— দু’জনেই দিনমজুর। তাঁদের সামান্য রোজগারে সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’। সুলতার ছোট বোন দশম দশম শ্রেণির ছাত্রী। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘আস্থায় না নিয়ে গেলে আমার

মেয়ে কিছুই হতে পারত না। ওই সংস্থার শিক্ষকরাই যা করার করেছেন। আমি খুবই কৃতজ্ঞ।’’ সিকদার দম্পতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রশাসনের কাছেও। সুলতার বিদেশযাত্রা সম্ভবই ছিল না প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া। সংস্থার সভাপতি অতীশ দত্ত বলেন, ‘‘মেয়েটা কষ্টেসৃষ্টেই মানুষ। ওর সাফল্যে আমরা ভাষণ খুশি।’’

গত ১৪ মার্চ থেকে আবুধাবিতে গ্রীষ্মকালীন স্পেশ্যাল অলিম্পিক চলছে। ‘আস্থা’র আরও এক শিক্ষার্থী তুষার মিত্র দেশের ফুটবল দলের প্রতিনিধি হিসেবে ওই প্রতিযোগিতায় গিয়েছেন। দেশের আড়াইশো জনের মধ্যে এ রাজ্য থেকে প্রতিযোগীর সংখ্যা ১২। রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোচ হিসেবে গিয়েছেন মৌসুমী রায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Jirat Balagarh Special Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE