Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Artworks

নগ্ন চিত্র মানেই তা অশ্লীল নয়! সুজ়া এবং আকবরের বাজেয়াপ্ত ৭টি চিত্র ফেরাতে নির্দেশ বম্বে হাই কোর্টের

এফএন সুজ়া এবং আকবর পদমসির সাতটি চিত্র বাজেয়াপ্ত করেছিল মুম্বইয়ের শুল্ক দফতর। শুধুমাত্র চিত্রে ‘নগ্নতা’ এবং ‘সঙ্গম’ থাকার জন্য সেগুলি বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। দু’সপ্তাহের মধ্যে সেগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বম্বে হাই কোর্ট।

(বাঁ দিকে) প্রয়াত চিত্রশিল্পী এফএন সুজ়া এবং প্রয়াত চিত্রশিল্পী আকবর পদমসি (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) প্রয়াত চিত্রশিল্পী এফএন সুজ়া এবং প্রয়াত চিত্রশিল্পী আকবর পদমসি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৪
Share: Save:

নগ্নচিত্র মানেই তা অশ্লীল নয়। সম্প্রতি এক মামলার শুনানিতে এমনটাই জানিয়েছে বম্বে হাই কোর্ট। ভারতীয় চিত্রশিল্পী এফএন সুজ়া এবং আকবর পদমসি অঙ্কিত সাতটি চিত্র (পেন্টিং) গত বছর বাজেয়াপ্ত করেছিল মুম্বইয়ের শুল্ক দফতর। শুল্ক দফতরের বক্তব্য ছিল, চিত্রগুলি ‘অশ্লীল’। এই বিষয়ে দফতরের সহকারি কমিশনার একটি নির্দেশও জারি করেছিলেন। বম্বে হাই কোর্টের বিচারপতি এমএস সোনক এবং বিচারপতি জিতেন্দ্র জৈনের ডিভিশন বেঞ্চ গত সপ্তাহে শুল্ক দফতরের সহকারি কমিশনারের নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ, কোনও চিত্রশিল্পে ‘নগ্নতা’ বা ‘সঙ্গম’ চিত্রায়িত করা মানেই সেটিকে অশ্লীল বলে দেগে দেওয়া যায় না। বাজেয়াপ্ত হওয়া চিত্রগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে বম্বে হাই কোর্ট। হাই কোর্টের মতে, যৌনতা এবং অশ্লীলতা যে সব সময় সমার্থক নয়, তা বুঝতে ভুল করেছেন শুল্ক দফতরের সহকারি কমিশনার। যে ক্ষেত্রে যৌনতা বিকৃত কাম উদ্রেক করে, সেটিকে ‘অশ্লীল’ হিসাবে বলা যায়। তাই শুল্ক দফতরের এই নির্দেশটির গ্রহণযোগ্যতা নেই।

মুম্বইয়ের এক চিত্রশিল্প সংগ্রাহক মুস্তাফা করাচিওয়ালা ওই চারটি ছবি কিনেছিলেন। তালিকায় প্রয়াত চিত্রশিল্পী সুজ়ার ১৯৬২-৬৩ সালে আঁকা ‘লাভার্‌স’ নামে একটি শিল্পকর্ম। সেটিতে এক যুগলের ‘সঙ্গম’-এর তিনটি চিত্র রয়েছে। ১৯৬২ সালে আঁকা ‘বাউন্ড ফিগার’। এটিও সুজ়ার সৃষ্টি। এটিতে চিত্রায়িত হয়েছে গাছের সঙ্গে বাঁধন দেওয়া অন্তর্বাস পরিহিত এক মহিলা। এ ছাড়া প্রয়াত শিল্পী পদমসির আঁকা তিনটি চিত্র কিনেছিলেন তিনি। ‘ন্যুড’ নামের ওই শিল্পকর্মে নগ্ন মহিলার ছবি চিত্রায়িত হয়েছে। বিদেশ থেকে যখন সেগুলিকে এ দেশে আনছিলেন মুস্তাফা, তখনই সমস্যা হয়। শুল্ক দফতর চিত্রগুলিকে বাজেয়াপ্ত করে নেয়। মুস্তাফার সংস্থাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল। হাই কোর্টের নির্দেশ, দু’সপ্তাহের মধ্যে মুস্তাফার কাছে ওই চিত্রগুলি ফিরিয়ে দিতে হবে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ, শুল্ক দফতরের সহকারি কমিশনার চিত্রগুলিতে কেবল নগ্নতাকেই দেখেছেন। তাই সেগুলিকে ‘অশ্লীল’ বলে দেগে দিয়েছেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা বলা যায় না। এই ধরনের শিল্পসৃষ্টিকে সকলে পছন্দ না-ও করতে পারেন। কিন্তু ব্যক্তিগত মতের ভিত্তিতে কোনও সরকারি আধিকারিক এই শিল্পগুলিকে নিষিদ্ধ বা নষ্ট করতে বলতে পারেন না। আদালতের মতে, সহকারি কমিশনার শুধুমাত্র নিজের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির বিচারেই চিত্রগুলিকে ‘অশ্লীল’ বলে মনে করছেন। কোনও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনাও করেননি। পুরনো কোনও নথিপত্রও দেখেননি। এ প্রসঙ্গে ৬০ বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের কথাও তুলে ধরে বম্বে হাই কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, চিত্রশিল্পী মাইকেল্যাঞ্জেলোর (‘লাস্ট জাজমেন্ট’ চিত্রের) পরী ও সন্তদের প্রদর্শনীর আগে পোশাক পরানোর প্রয়োজন নেই।

প্রসঙ্গত, সুজ়া এবং পদমসি উভয়েরই সৃষ্টি ভারতীয় শিল্পী মহলে ভীষণ ভাবে আলোচিত এবং সমাদৃত। দিল্লিতে ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট-সহ একাধিক সংগ্রহশালায় তাঁদের শিল্পকর্ম সংরক্ষিত রয়েছে। নিলামে তাঁদের আঁকা চিত্র চড়া দামে কেনেন শিল্পের সমঝদারেরা। চলতি বছরের মার্চ মাসেই সুজ়ার একটি চিত্র নিউ ইয়র্কে ৪.৮ মিলিয়ন ডলারে (ভারতীয় মুদ্রায় ৪০ কোটি টাকারও বেশি) বিক্রি হয়েছে। সেটির চিত্রায়ন তাঁর সৃষ্টি ‘লাভার্‌স’-এরই অনুরূপ। পদমসিকেও ২০১০ সালে পদ্ম সম্মানে ভূষিত করেছিল ভারত।

অন্য বিষয়গুলি:

Bombay High Court Mumbai Customs Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE