Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
UEFA Euro 2024

১৬ বছরের ইয়ামালের পায়ে হার মানলেন এমবাপেরা, ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরোর ফাইনালে স্পেন

ইউরো কাপের ফাইনালে উঠল স্পেন। সেমিফাইনালে পিছিয়ে পড়েও ফ্রান্সকে ২-১ গোলে হারাল তারা। স্পেনের হয়ে গোল করলেন লেমিনে ইয়ামাল ও ড্যানি অলমো। ফ্রান্সের হয়ে গোল করেন কোলো মুয়ানি।

football

গোলের পরে উল্লাস স্পেনের লেমিনে ইয়ামালের। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪ ০২:২৪
Share: Save:

স্পেন — ২
ফ্রান্স — ১

‘সাবালক’ হলেন লেমিনে ইয়ামাল। বয়স ১৬ বছর হলেও ফুটবলে সাবালক হলেন তিনি। এত দিন তাঁকে সবাই বলত দুর্দান্ত প্রতিভা। স্পেনের বিস্ময় বালক দেখিয়ে দিলেন, শুধু প্রতিভা হয়ে থাকতে আসেননি তিনি। ইউরো কাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের মতো দলের বিরুদ্ধে যে খেলাটা তিনি খেললেন, তা দেখে অবাক হতে হয়। গোল করলেন। ইউরোর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হলেন। বার বার গোলের সুযোগ তৈরি করলেন। তাঁর পায়েই পিছিয়ে পড়েও ফ্রান্সকে হারাল স্পেন। ইউরো কাপের ফাইনালে উঠল তারা। সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হল কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্সকে। তবে ইউরোয় প্রথম বার ফর্মে দেখা গেল এমবাপেকে। স্পেনের বিরুদ্ধে তিনি যা খেললেন তাতে মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়তে পারবেন এমবাপে।

মিনিটে মিনিটে বদলে গেল খেলার ছবিটা। এই স্পেন আক্রমণে উঠল তো পর ক্ষণেই পাল্টা স্পেনের রক্ষণে বিপদ তৈরি করল ফ্রান্স। চোট পাওয়ার পর থেকে ফেস গার্ড পরে খেলছিলেন এমবাপে। চেনা যাচ্ছিল না তাঁকে। পায়ে বল রাখতে পারছিলেন না। সেই চেনা দৌড় দেখা যাচ্ছিল না। সেই কারণেই হয়তো সেমিফাইনালে ফেস গার্ড খুলে নামেন এমবাপে। ফেস গার্ড খুলতেই বদলে গেল এমবাপের খেলা। স্বমহিমায় ফিরলেন তিনি। সেই পুরনো গতি। সেই পরিচিত দৌড়। সেই রক্ষণের উপর সারা ক্ষণ চাপ তৈরি করা। এমবাপে চেনা ছন্দে ফিরতে বদলে গেল ফ্রান্সের খেলাও।

ম্যাচে গোল করার প্রথম সুযোগ পেয়েছিল স্পেন। সেই ইয়ামালের পা দিয়ে। ৫ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে বল পান ইয়ামাল। বক্সে ঢুকে বল ভাসান তিনি। দ্বিতীয় পোস্টের কাছে ছিলেন ফাবিয়ান রুইজ়। তিনি হেড করলেও গোলের মধ্যে রাখতে পারেননি। আর একটু লাফাতে পারলে ভাল ভাবে হেড করতে পারতেন তিনি।

স্পেনের সুযোগ নষ্টের ফায়দা তোলে ফ্রান্স। বাঁ প্রান্তে বল ধরে বক্সে ঢোকেন এমবাপে। ডিফেন্সের জঙ্গলের মাঝে বল বাড়ান রান্ডাল কোলো মুয়ানির দিকে। ঠান্ডা মাথায় হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন কোলো মুয়ানি। রুইজ় যে কাজটা করতে পারেননি, সেটাই করে দেখান ফরাসি ফুটবলার। চলতি ইউরোয় প্রথম বার ওপেন প্লে থেকে গোল করে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।

গোল খাওয়ার পরে যে স্পেনের আক্রমণের গতি আরও বাড়ে। বিশেষ করে দুই প্রান্তে ইয়ামাল ও নিকো ইউলিয়ামস ভাল খেলছিলেন। দ্রুত বল নিয়ে ঢুকছিলেন তাঁরা। কিন্তু বক্সের মধ্যে স্পেনের অধিনায়ক আলভারো মোরাতা কাজের কাজ করতে পারছিলেন না। ২১ মিনিটে জাদু দেখালেন ইয়ামাল। বক্সের বাইরে বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারকে নাচিয়ে ছাড়েন তিনি। প্রথমে ডান দিকে ঘুরে চকিতে বাঁ দিকে ঘোরেন। ফলে দুই ডিফেন্ডার কেটে যায়। ইয়ামাল বুঝতে পারেন গোলের সুযোগ রয়েছে। বাঁ বায়ে বাঁক খাওয়ানো শট মারেন তিনি। ১০২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে মারা সেই শট ফরাসি গোলরক্ষক মাইক মাইগনান বাঁচাতে পারেননি। বল জালে জড়িয়ে যায়। ইউরোয় নিজের প্রথম গোল করে সমতা ফেরান ইয়ামাল। গোল করে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি ইয়ামাল। সতীর্থকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। তাঁর আবেগ বুঝিয়ে দিচ্ছিল এই গোলের গুরুত্ব তাঁর কাছে কতটা।

চার মিনিট পরে ফ্রান্সকে দ্বিতীয় ধাক্কা দেয় স্পেন। জেসুস নাভাসের কাছ থেকে বল পান ড্যানি অলমো। বল নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে গোল লক্ষ্য করে শট মারেন। বল বাঁচানোর চেষ্টা করেন ফ্রান্সের জুলস কুন্ডে। কিন্তু বল তাঁর পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। প্রথমে কুন্ডের আত্মঘাতী গোল দিলেও পরে অলমোর নামেই সেই গোল দেওয়া হয়। ০-১ পিছিয়ে থেকে চার মিনিটের ঝড়ে ২-১ এগিয়ে যায় স্পেন।

গোটা প্রথমার্ধ জুড়ে টান টান লড়াই হল। এমবাপে বল পেলেই প্রান্ত ধরে এগোচ্ছিলেন। তাঁকে সাহায্য করছিলেন হাবিয়ঁ। ডান প্রান্ত ধরে উঠছিলেন উসমান ডেম্বেলে। দু’দলই প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণ করছিল। তবে মাঝেমধ্যে থ্রু বল খেলে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করছিল তারা। সুযোগ তৈরি হলেও প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর গোল হয়নি। ২-১ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় স্পেন।

এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আগ্রাসী ফুটবল খেলা থামায়নি স্পেন। কোচ লুই দে লা ফুয়েন্তে জানতেন, রক্ষণাত্মক হয়ে পড়লে ফ্রান্সকে আটকানো কঠিন। ফ্রান্সও আক্রমণ করছিল। ৫৭ মিনিটের মাথায় ফাটকা খেলেন স্পেনের কোচ। ৩৮ বছর বয়সি নাভাসকে তুলে নেন তিনি। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের ভূমিকায় খেলা নাচোকে রাইট ব্যাক করে দেন। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের জায়গায় যান লাপোর্তে। ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশঁও তিনটি বদল করেন। হাবিয়ঁ, এঙ্গোলে কান্তে ও গোলদাতা কোলো মুয়ানিকে তুলে বার্কোলা, আন্তোনিয় গ্রিজ়ম্যান ও কামাভিঙ্গাকে নামিয়ে দেন তিনি।

এই পরিবর্তনের ফলে ফ্রান্সের খেলা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে যায়। বিশেষ করে বার্কোলা নামার পর থেকে বাঁ প্রান্ত ধরে বার বার স্পেনের বক্সে ঢুকে পড়তে থাকেন এমবাপেরা। তার মাঝেই দেম্বেলের শট ভাল বাঁচেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমোন। কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে স্পেন। বেশ কয়েক বার গোল করার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল ফ্রান্স। কিন্তু গোলের মুখ খুলছিল না।

প্রতিটি বলের জন্য লড়াই চলছিল। সেই কারণে মাঝেমধ্যেই ফাউল করে ফেলছিলেন দু’দলের ফুটবলারেরা। স্পেন খেলার গতি কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছিল। তার মাঝেই ৮৫ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণ থেকে বল পান এমবাপে। গতিতে বক্সে ঢুকে শট মারেন তিনি। কিন্তু বেশি জোরে মারতে যান তিনি। ফলে বল বার উঁচিয়ে চলে যায়। বল গোলে রাখতে পারলে সিমোনের কিছু করার ছিল না।

সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হল ফ্রান্সকে। বাকি সময়ে অনেক চেষ্টা করেও সমতা ফেরাতে পারেনি তারা। হতাশ হয়েই মাঠ ছাড়তে হয় এমবাপেদের। ফাইনালে উঠে উল্লাসে মাতে স্পেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy