হতাশ: এশিয়াডের সঠিক প্রস্তুতিই হচ্ছে না দীপাদের। ফাইল চিত্র
দু’বছর পর প্রতিযোগিতায় ফিরছেন। প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রাখতে পদক জিততে মরিয়া দীপা কর্মকার।
সব জল্পনা উড়িয়ে দীপা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী অগস্টে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে নামবেন। ঠিক করে ফেলেছেন, প্রোদুনোভা ছেড়ে কোন দু’টো ভল্টকে অস্ত্র করবেন। কিন্তু অনুশীলন করার সরঞ্জামের সাহায্যই তো পাচ্ছেন না অলিম্পিক্সের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসাবে ফাইনালে উঠে চতুর্থ হওয়া দীপা। সোমবার আগরতলা থেকে ফোনে দীপা বলে দিলেন, ‘‘জাকার্তা এশিয়াডে নামব। কিন্তু যেটা আমার পদক জেতার জায়গা, সেই ভল্টই তো শুরু করতে পারছি না ফোম পিটের অভাবে। শারীরিক সক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য আগরতলায় নিয়মিত চার ঘণ্টা অনুশীলন করছি। কিন্তু এখানে তো ফোম পিটই নেই। দিল্লিতে জাতীয় শিবির না শুরু হলে ভল্টই শুরু করতে পারব না।’’
দীপার কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী ভারতীয় জিমন্যস্টিক্স ফেডারেশনের কাছে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলেন এপ্রিলের মাঝামাঝি শিবির শুরু করতে। কিন্তু কিছুই হয়নি। সোমবার বিকেলে ছাত্রীকে অনুশীলন করানোর ফাঁকে বিশ্বেশ্বর বলছিলেন, ‘‘অগস্টে এশিয়াড। এখন থেকে অনুশীলন না করাতে পারলে সমস্যা হবে। অস্ত্রোপচারের পর কতটা জোর দিয়ে দীপাকে ভল্ট শুরু করাব, তার জন্য ডাক্তার ও ফিজিওথেরাপিস্টের নিয়মিত পরামর্শ দরকার। শিবির শুরু না হলে তা সম্ভব নয়।’’ শিবির শুরু না হওয়ায় জাতীয় কোচ জয়প্রকাশ চক্রবর্তীও চিন্তিত। ‘‘দিল্লি এবং কলকাতার সাইতে ফোম পিট আছে। কিন্তু দিল্লিতে সুযোগ সুবিধা বেশি। সমস্যা থাকলে কলকাতায় তো করা যেত। শিবির এখনই শুরু না হলে পদক জেতার স্বপ্ন দেখা উচিত নয়।’’ জয়প্রকাশবাবুর ছাত্রী প্রণতি দাশ কমনওয়েলথে নেমেছিলেন। বলছিলেন, ‘‘ফোম পিট না পেলে জিমন্যাস্টদের অনুশীলন সম্ভব নয়। শিবির কেন শুরু হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।’’
শোনা যাচ্ছে জিমন্যাস্টিক্স সংস্থা ও আইওএ কর্তাদের প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিরক্ত কেন্দ্রীয় সরকার। সাইয়ের পক্ষে যিনি জিমন্যাস্টিক্স দেখা শোনা করেন সেই প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইন্দর সিংহ পাবলাও তা স্বীকার করলেন। দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনই তো নেই। আইওএ-র সঙ্গে ওদের সমস্যা। আমাদেরই সব করতে হচ্ছে। কিন্তু কমনওয়েলথের ঝামেলার পর কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক বারবার শিবিরের ফাইল ফেরত পাঠাচ্ছে। অনেক কিছু জানতে চাইছে। তাতেই দেরি হচ্ছে।’’ কিন্তু অনুশীলনে নামতে মরিয়া দীপা বলছিলেন, ‘‘আমার অবস্থা এখন যা, তাতে কাল যদি বিকেলে শিবির শুরু হয় সকালে আমি দিল্লি পৌঁছে যাওয়ার জন্য তৈরি। ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি।’’
কিন্তু কেন কোচেরা চাইলেও শুরু হচ্ছে না শিবির? কমনওয়েলথ গেমসে রাতের অন্ধকারে শেয দিনে গোল্ড কোস্টে পাঠান হয়েছিল দল। পরিস্থিতি এতটাই জটিল ছিল যে মেয়েদের দলের সঙ্গে কোচ গেলেও পুরুষ দলের সঙ্গে যাননি কোচ। দল নির্বাচন নিয়েও মামলা হয়েছিল। এই অবস্থায় সব দিক খতিয়ে না দেখে শিবির করার অনুমতি দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রক। আর তাতেই তীব্র সমস্যায় দীপা-সহ দেশের সেরা জিমন্যাস্টরা।
২০১৬-র অগস্টে রিও অলিম্পিক্সের পর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয় দীপার। ফিজিওর কাছে অনুশীলন করার পর সুস্থ হননি বলে তিনি নামেননি কমনওয়েলথে। তাঁর কোচের দাবি দীপা পুরোপুরি সুস্থ। ‘‘আগেই বলেছিলাম দীপা নামলে পদক জেতার জন্য নামবে। সে জন্যই জাকার্তা এশিয়াডকে বেছে নিয়েছি। ওকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ভল্ট শুরু করা দরকার।’’ অস্ত্রোপচারের পর ফিরে দীপা বলেছিলেন তাঁর নামের সঙ্গে সমার্থক হয়ে যাওয়া প্রোদুনোভা ভল্ট দেওয়ার ঝুঁকি এখন নেবেন না। এশিয়াডে পদক জেতার জন্য দীপা বেছেছেন হ্যান্ডস্প্রিং সমারসল্ট ৫৪০ ডিগ্রি টার্ন ও সুকাহারা ৭২০ ডিগ্রি ভল্ট। বলছিলেন, ‘‘এশিয়াডে পদক জেতা বেশ কঠিন। এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে। ফোম পিট না পেলে ভল্ট শুরু করাটা ঝুঁকির।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy