Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ক্যানসার জয়ের লড়াইয়ে এশিয়াডে সোনাজয়ী বক্সার

অন্য রিং। অসম যুদ্ধ। নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে এখন ক্যানসারের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ১৯৯৮ ব্যাঙ্কক এশিয়াডে সোনাজয়ী বক্সার ডিঙ্কো সিংহ। মারণরোগে ইতিমধ্যেই তাঁর লিভারের ৭০ শতাংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।

ব্যাঙ্ককের সেই ছবি। সোনা জিতে ডিঙ্কো। -ফাইল চিত্র

ব্যাঙ্ককের সেই ছবি। সোনা জিতে ডিঙ্কো। -ফাইল চিত্র

স্বপন সরকার
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১২
Share: Save:

অন্য রিং। অসম যুদ্ধ।

নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে এখন ক্যানসারের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ১৯৯৮ ব্যাঙ্কক এশিয়াডে সোনাজয়ী বক্সার ডিঙ্কো সিংহ। মারণরোগে ইতিমধ্যেই তাঁর লিভারের ৭০ শতাংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।

এশিয়াডে সোনাজয়ের জন্য ইম্ফলে তাঁকে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিল মণিপুর সরকার। শয্যাশায়ী ডিঙ্কো এ দিন আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘স্যার ফ্ল্যাটটা ধরে রাখতে পারলাম না। বেচে দিলাম মাত্র তিরিশ লাখে। কী করব বলুন, বাঁচতে গেলে যে অনেক টাকা লাগবে আমার।’’ কথা বলার সময় চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না ডিঙ্কো।

ডিঙ্কো স্পোটর্স অথরিটি অফ ইন্ডিয়াতে (সাই) চাকরি করেন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে সাই। বক্সিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়াও দিয়েছে ৪৫ হাজার। কিন্তু তাঁর চিকিৎসার যে বিপুল খরচ, তার কাছে এ সব সাহায্য নস্যি। বাধ্য হয়েই ডিঙ্কোকে তাই ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। নিজের চিকিৎসার পিছনে ১০ লাখ টাকা খরচও করে ফেলেছেন।

দিল্লির এক বন্ধু এই বিপদে তাঁকে নিজের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অসুস্থ ডিঙ্কো সিংহকে দেখাশুনোর জন্য রয়েছেন তাঁর স্ত্রী গানগুম গাবাবাই। স্বামীর অবস্থা দেখে ভেঙে পড়েছেন গানগুম। ‘‘সবাই জানে ক্যানসারের চিকিৎসার খরচ কত। সত্যিই আমাদের পক্ষে অত টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। আর পারছি না। এখনও তো কেমোথেরাপি শুরু হয়নি। জানি না কোথায় যাব, কার কাছে হাত পাতব। মনে হচ্ছে যেটুকু গয়নাগাটি এখনও আছে সেটাও বিক্রি করতে হবে,’’ বলছিলেন গানগুম। প্রত্যেক সপ্তাহে দু’দিন ডিঙ্কোকে তিনিই হাসপাতালে নিয়ে যান। কাঁদতে কাঁদতে গানগুম বলছিলেন, সারা রাস্তা স্ত্রী-র হাতটা চেপে ধরে রাখেন ডিঙ্কো।

তবে পরিস্থিতি যত খারাপই হোক, জীবনের রিংয়ে হারতে চান না ডিঙ্কো। তার কথাতেই সেটা পরিষ্কার। বলছিলেন, সাইয়ের ইম্ফল অফিস থেকে তাঁর গ্রামের বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। সেই গ্রামেই বাচ্চাদের বক্সিং শেখাতেন। ‘‘একটু সুস্থ হলেই আবার ছোটদের ট্রেনিং করাতে চাই। আশা করি আমার সেই স্বপ্ন সত্যি হবে। এমনিতে কারও উপর আমার কোনও অভিযোগ নেই। সবাই আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছে। শুধু একটাই আর্জি। সাই যেন তাদের অসুস্থ অ্যাথলিটদের কথা আর একটু ভাবে,’’ প্রায় ধুঁকতে ধুঁকতেই ডিঙ্কো বলতে থাকেন, ‘‘আমি বাঁচবই। অত সহজে আমাকে হারানো যাবে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE