জগৎসভায় আবার ডাক পড়েছে ভারতের।
ভিন গ্রহে প্রাণ খুঁজতে ভারতই হয়ে উঠছে ‘পঞ্চ পাণ্ডবে’র অন্যতম ‘অর্জুন’।
ভারতই একুশ শতকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারিগর হতে চলেছে। সেই টেলিস্কোপটি বানানো আর তা বসানোর জন্য ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মেধা ও প্রযুক্তি-প্রকৌশলকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাকি চার ‘পাণ্ডবে’র মধ্যে রয়েছে- আমেরিকা, কানাডা, চিন ও জাপান। ওই যুগান্তকারী প্রকল্পের কর্ণধারদের আশা, ২০২৩/’২৪ সালের মধ্যেই ওই টেলিস্কোপটি চালু হয়ে যাবে।
থার্টি মিটার টেলিস্কোপের অবজারভেটরির মডেল।
এর ফলে, ভিন গ্রহে প্রাণের সন্ধানে বিশ্বের বৃহত্তম টেলিস্কোপকে এ বার স্বাধীন ভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন ভারতীয় জোতির্বিজ্ঞানীরা। বছরে অন্তত ৩৫টি রাত। মহাকাশ গবেষণার কাজে। ১০০ বছর পর ভারতের জোতির্বিজ্ঞান গবেষণা এ ভাবেই সমাদৃত হল গোটা বিশ্বে। ভারতের বিজ্ঞান-চর্চার ইতিহাসে যা আক্ষরিক অর্থেই, একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও বটে।
১৫০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে মার্কিন মুলুকে হাওয়াই দ্বীপের মওনাকোয়ায় পাহাড়-চুড়োয় বসানো হচ্ছে ২০ তলা বাড়ির মতো উঁচু আর একটা ফুটবল মাঠের মতো চেহারার টেলিস্কোপ। যার লেন্সের ব্যাস ৩০ মিটার। মানে, গ্রামের একটা পুকুরকে ওপর থেকে দেখলে যেমন লাগে, প্রায় সেই রকমই। লেন্সের ব্যাস ৩০ মিটার বলেই তার নাম দেওয়া হয়েছে-‘থার্টি মিটার টেলিস্কোপ’ বা টিএমটি।
আমেরিকার মওনাকোয়ায় টিএমটি-র ‘প্রোজেক্ট -সাইট’।
ভারতে ‘টিএমটি কো-অর্ডিনেশন সেন্টারে’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর বচম ঈশ্বর রেড্ডি এক একান্ত টেলিফোন সাক্ষাৎকারে আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘গোটা বিশ্বে এখন সবচেয়ে শক্তিশালী যে টেলিস্কোপ ব্যবহার করা হয়, তার ব্যাস বড়জোড় আট বা দশ মিটার। তার নিরিখে টিএমটি হবে তিন গুণ বেশি শক্তিশালী। আর ভারতে এখন সবচেয়ে শক্তিশালী যে টেলিস্কোপটি ব্যবহার করা হয়, তামিলনাড়ুতে বসানো সেই ভাইনু বাপ্পু টেলিস্কোপের ব্যাস মাত্র ২.৩ মিটার।
পড়ুন- কী বলছেন টিএমটি-ইন্ডিয়ার প্রোগ্রাম ডিরেক্টর বচম ঈশ্বর রেড্ডি
এর মানে, টিএমটি-র দৌলতে ১৫ গুণ বেশি শক্তিশালী টেলিস্কোপে চোখ রেখে এ বার ভিন গ্রহে প্রাণের সন্ধান করতে পারবেন ভারতের মহাকাশবিজ্ঞানীরা। ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ের এই প্রকল্পে ভারত দিচ্ছে এক হাজার তিনশো কোটি টাকা।’’
আমেরিকা, কানাডা-সহ পাঁচটি দেশের এই ‘জায়ান্ট প্রোজেক্টে’ কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ভারতকে?
‘টিএমটি -ইন্ডিয়া’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর বচম ঈশ্বর রেড্ডি।
ভারতে টেলিস্কোপ-প্রযুক্তির এক নম্বর ব্যক্তিত্ব ঈশ্বর রেড্ডি জানিয়েছেন, ‘‘ওই বৃহত্তম টেলিস্কোপের ৪৯২টি ‘হেক্সাগোনাল সেগমেন্টে’র মধ্যে ৯০টি সেগমেন্ট যে শুধুই ভারতে বানানো হচ্ছে, তা-ই নয়, তার প্রযুক্তি-প্রকৌশলও পুরোপুরি ভারতীয়। ওই টেলিস্কোপটির জন্য একটি ‘কমপ্লিট সেগমেন্ট সাপোর্ট সিস্টেম’ বা ‘সিএসএসএ’-ও বানিয়ে দিচ্ছে ভারত। যে ‘সিএসএসএ’-তে রয়েছে প্রায় হাজার দেড়েক ‘অ্যাকচ্যুয়েটর’ ও তিন হাজার ‘এজ সেন্সর’। এখানেই শেষ নয়। মওনাকোয়ায় বিশ্বের ওই বৃহত্তম টেলিস্কোপটি বসাতে যে অবজারভেটরি বা মানকেন্দ্র গড়ে উঠবে, তাকে সার্বিক ভাবে চালানোর সফ্টওয়্যারটিও বানিয়ে দিচ্ছে ভারত। ‘এজ সেন্সর’ বানানোর ব্যাপারে পুদুচেরির সংস্থা জেনারেল অপটিকস এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ওই টেলিস্কোপটির জন্য সর্বাধুনিক ‘অ্যাকচ্যুয়েটর’ বানানোর কাজ চলছে মুম্বইয়ের দুই সংস্থা- গোদরেজ ও আভাসরলা টেকনোলজিসে।’’
দেখুন ভিডিও-- টিএমটি কী, কোথায় ও কেন?
সৌজন্যে- রাজ্যসভা টিভি।
এই টেলিস্কোপ ভারত, আমেরিকা-সহ বিশ্বের পাঁচটি দেশকে কী কী সুয়োগ-সুবিধা দিতে পারে?
ভারতের অন্যতম সেরা টেলিস্কোপ-বিশেষজ্ঞ ঈশ্বর রেড্ডি জানাচ্ছেন, ‘‘লেন্সের ব্যাস দশ থেকে পনেরো গুণ বেড়ে যাওয়ায় ভিন গ্রহে প্রাণের সন্ধান অনেকটাই সহজতর হয়ে যাবে। এর ফলে ব্রহ্মাণ্ডের আরও বেশি অতীতের ঘটনার ওপর করা যাবে আলোকপাত। এমনকী, এতাবৎ যার বিন্দুমাত্র হদিশ মেলেনি, সেই ডার্ক এনার্জিরও সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy