—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
মাঝেমধ্যেই দু’চোখের পাতা এক হয় না, মনে হয় এই বুঝি অনিদ্রার সমস্যা ধরল— এমন দুশ্চিন্তাতেই কত মানুষের রাতের ঘুম উড়েছে! এই সূত্রেই বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, রাতে কত ঘণ্টা ঘুম হয়েছে বা অনিদ্রার সমস্যা হচ্ছে কি না, এই নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়াই শ্রেয়। ঘুমকে নিশ্চিন্তে ঘুম হিসেবে থাকতে দেওয়াই ভাল। এই ভাবনার সমর্থন মিলছে ব্রিটেন, অসলো, টরন্টোর গবেষকদের সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা থেকেও।
অনিদ্রা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন রোগ। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে ‘প্যারাডক্সিক্যাল ইনসমনিয়া’ বা ‘আপাত অনিদ্রা-বিভ্রম’। অর্থাৎ ধরা যাক, কোনও ব্যক্তি সারাক্ষণ ক্লান্ত বোধ করছেন। মনে করছেন যে তাঁর পর্যাপ্ত সময় ঘুম হচ্ছে না বা রাতে বার বার ঘুম ভাঙছে। কিন্তু তা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে দেখা যাচ্ছে, কোথাও কোনও সমস্যা নেই। এই ক্ষেত্রে বলা যায় যে তাঁর ‘অনিদ্রা-বিভ্রম’ রয়েছে। এর থেকেই বাড়ছে উদ্বেগ, কমছে ঘুম, মানসিক শান্তি। ফলে বলা চলে, কেমন ঘুম হল— এই বিষয়ে আমরা নিজেদের কী বোঝাচ্ছি, তা-ই অনেকাংশে প্রভাব ফেলে আমাদের পরের দিনের ক্লান্তি বোধ কিংবা ঝরঝরে ভাবের উপরে।
ব্রিটেনের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্লিপ অ্যান্ড পেইন ল্যাব’-এর ডিরেক্টর নিকোল ট্যাং সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্রে দাবি করেছেন যে, রাতে ঘুমের পরে সকালে কতটা ঝরঝরে লাগছে, তা নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের উপরে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, কত ক্ষণ ঘুম হয়েছে, কতটা ক্লান্ত লাগছে বা সে দিন কেমন ধরনের কাজ রয়েছে, এই নিয়ে আমাদের ভাবনা (কিংবা দুশ্চিন্তা)। বস্তুত, আমাদের ভাবনা-চিন্তার মধ্যেই রয়েছে দিনে কত ঘণ্টা ঘুমনো উচিত। সেই নির্ধারিত সময়ে ঘুম না হলে আমরা উদ্বিগ্ন হতে থাকি। চিকিৎসকদের মতে, অনিদ্রা রোগের চিকিৎসা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু সারাক্ষণ যদি অনিদ্রা-উদ্বেগ তাড়া করে বেড়ায়, তা হলে না চাইলেও মানসিক এবং
শারীরিক ভাবে ক্লান্ত লাগতে পারে। যার প্রভাব আখেরে পড়তে পারে ঘুমের উপরেই।
এই বিষয়ে অপর এক দল গবেষকের দাবি, আমাদের ‘যথাযথ ঘুমের’ ধারণাটি কিছুটা খামতিতে ভরা। বিষয়টি ভাল ভাবে বুঝতে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্লিপ অ্যান্ড হিউমান ইভোলিউশন ল্যাব’-এর ডিরেক্টর ডেভিড স্যামসন-সহ কয়েক জন গবেষক নামিবিয়া, বলিভিয়ার কিছু শিকারি সম্প্রদায়ের মানুষজনের ঘুমের গুণমান নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তাতে ডেভিড জানিয়েছেন, খাতায়-কলমে নির্ধারিত ঘুমের সময়ের থেকে কিছুটা কমই ঘুমোন এই সম্প্রদায়ের মানুষজন। অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত দেশগুলির বাসিন্দাদের ঘুমের সময়কালের সঙ্গে তুলনা করলেও তা বেশ কম। তবে এঁদের যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে নিজেদের ঘুম নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট কি না, উত্তর মেলে ইতিবাচকই। আর অনিদ্রার আশঙ্কা? তা যেন এঁদের কার্যত ধারণাতেই নেই। ইউনিভার্সিটি অব অসলোর গবেষকেরা আবার এই প্রসঙ্গেই ‘ঘুম না হওয়ার অতিমারি’, এই বিষয়টি নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলছেন। কারণ, তাঁদের মতে, প্রত্যেক মানুষ, তাঁদের জীবনধারা আলাদা। কোনও ব্যক্তি সারা দিনে কত ঘণ্টা ঘুমোচ্ছেন বা কোনও দিন কম-বেশি ঘুম হচ্ছে কি না, তা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক নানা ঘটনার উপরেও। তাই ভাবনার স্তরে নির্ধারিত নির্দিষ্ট ঘণ্টা ঘুমোলে তবেই যে ‘পর্যাপ্ত’ ঘুম হবে, এ কথা
ভাবা ঠিক নয়।
বিশেষজ্ঞদের তাই পরামর্শ, ‘যথাযথ’ ঘুম হল কি হল না, ভাবনার এই চক্রব্যূহে বন্দি না হয়ে বরং ঘুমের সময়ে মনকে শান্ত রাখাই শ্রেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy