The mystery of Ariel School UFO incident in Zimbabwe dgtl
Ariel School UFO incident
‘পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে’, স্কুলে এসে ৬২ পড়ুয়াকে বার্তা ‘ভিন্গ্রহী’দের! কী ঘটেছিল আফ্রিকার দেশে?
মহাকাশ এবং ভিন্গ্রহের প্রাণীদের নিয়ে চর্চা এবং জল্পনা চলে আসছে বহু যুগ ধরেই। সেই জল্পনায় বার বার নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা। কল্পবিজ্ঞানের গল্প হোক বা বিবিধ দাবি, মোটামুটি ভাবে উড়ন্ত চাকির মাধ্যমেই পৃথিবীতে ‘এসেছে’ ভিন্গ্রহীরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
মহাকাশ এবং ভিন্গ্রহের প্রাণীদের নিয়ে চর্চা এবং জল্পনা চলে আসছে বহু যুগ ধরেই। সেই জল্পনায় বার বার নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা। কল্পবিজ্ঞানের গল্প হোক বা বিবিধ দাবি, মোটামুটি ভাবে উড়ন্ত চাকির মাধ্যমেই পৃথিবীতে ‘এসেছে’ ভিন্গ্রহীরা।
০২২৩
মনে করা হয় এক-দু’বার নয়, বহু বার বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে উড়ন্ত চাকি (ইউএফও) দেখতে পাওয়ার দাবি করেছেন অসংখ্য মানুষ। ২১৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ইউএফও দেখার দাবি উঠেছে বার বার।
০৩২৩
সে রকমই একটি ঘটনা ঘটে ১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। আফ্রিকার দেশ জ়িম্বাবোয়ের রুওয়া শহরে। দাবি করা হয়, রুওয়া শহরের একটি স্কুলের বাইরে উড়ন্ত চাকির দেখা পেয়েছিল ৬ থেকে ১২ বছর বয়সি ৬২ জন পড়ুয়া।
০৪২৩
এরিয়েল স্কুলের ওই ছাত্রছাত্রীদের দাবি ছিল, এক বা একাধিক রুপোলি রঙের উড়়ন্ত চাকিকে আকাশ থেকে স্কুলের কাছে একটি মাঠে নামতে দেখেছিল তারা।
০৫২৩
রুওয়া হল একটি ছোট কৃষিপ্রধান শহর যা জ়িম্বাবোয়ের রাজধানী হারারে থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে। যদিও ১৯৯৪ সালে এই শহর মফস্সল ছিল।
০৬২৩
এরিয়েল স্কুল ছিল একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি স্কুল। পড়়ুয়াদের অধিকাংশই ছিল হারারের ধনী পরিবারের সন্তান।
০৭২৩
ওই পড়ুয়ারা দাবি করে, ১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এক বা একাধিক প্রাণী কালো পোশাক পরে তাদের কাছে আসে এবং টেলিপ্যাথির মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আরও দাবি করেছিল, বহিরাগত ওই প্রাণীরা পরিবেশ নিয়ে বার্তা দিয়েছিল এবং ভয় দেখিয়েছিল। সেই বার্তা পেয়ে তারা কান্নাকাটি করেছিল বলেও দাবি করে পড়ুয়ারা।
০৮২৩
লেখক জেরোম ক্লার্ক সেই ঘটনাটিকে ‘নব্বইয়ের দশকের অন্যতম অসাধারণ ঘনিষ্ঠ সাক্ষাৎ’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
০৯২৩
কয়েক জন আবার এই ঘটনাকে একসঙ্গে অনেকের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা বলে দাবি করেছিলেন। উল্লেখ্য, সে দিন স্কুলে উপস্থিত সব শিশু কিন্তু ওই ঘটনা দেখেনি। তবে বেশ কয়েক জন দাবি করেছিলেন যে, ঘটনাটি সত্য।
১০২৩
এই ঘটনার দু’দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে অনেকগুলি উড়ন্ত চাকি দেখতে পাওয়া যায় বলে দাবি ওঠে। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে আকাশের মধ্যে দিয়ে উজ্জ্বল আগুনের গোলা দেখা গিয়েছিল বলেও অনেকে দাবি করেছিলেন।
১১২৩
যদিও কিছু প্রত্যক্ষদর্শী আগুনের গোলাকে ধূমকেতু বা উল্কা হিসাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তবে এরিয়েল স্কুলে ভিন্গ্রহীদের দেখতে পাওয়ার দাবি পুরো বিষয়টিতে নয়া মাত্রা যোগ করে।
১২২৩
পড়ুয়াদের দাবি ছিল, সে বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা নাগাদ স্কুলের মাঠে দেখা গিয়েছিল ভিন্গ্রহীদের। স্কুলের শিক্ষকেরা সেই সময়ে একটি সভা করছিলেন। পুরো ঘটনাটি প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল বলে দাবি।
১৩২৩
কিন্তু যখন ওই পড়ুয়ারা বিষয়টি শিক্ষকদের জানায়, তখন তাদের গাঁজাখুরি গল্প বলার জন্য বরখাস্ত করা হয়। বাড়ি ফিরে ওই পড়ুয়ারা তাদের বাবা-মাদেরও বিষয়টি জানায়। অভিভাবকদের একাংশ পরদিন স্কুলে এসে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
১৪২৩
বিবিসির স্থানীয় এক সংবাদিক ১৯ সেপ্টেম্বর স্কুল পরিদর্শন করে পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের সাক্ষাৎকার নেন। ঘটনার তদন্ত করার পর টিম লিচ নামে ওই সাংবাদিক বলেন, ‘‘আমি যুদ্ধের খবর করতে পারি, কিন্তু এই খবর করতে আমি অপারগ।’’
১৫২৩
এর পর অন্য এক সাংবাদিক ওই স্কুল পরিদর্শন করেন। কয়েক জন খুদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তারা যা দেখেছে তার ছবি আঁকতে বলেন। তিনি দেখেন, সব শিশুই মোটামুটি একই ছবি এঁকেছে।
১৬২৩
এর মাস দুয়েক পরে, নভেম্বরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক এবং পুলিৎজ়ার পুরস্কার বিজয়ী লেখক জন ম্যাক খুদে পড়ুয়াদের সাক্ষাৎকার নিতে এরিয়েল স্কুলে যান।
১৭২৩
সেই সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, ছয় থেকে ১২ বছর বয়সি ৬২ জন শিশু স্কুলের সামনে রুপোলিরঙা উড়ন্ত চাকি দেখেছিল। তারা জানায়, এক থেকে চার জন বড় চোখযুক্ত এবং কালো পোশাক পরা প্রাণী তাদের কাছে এসেছিল।
১৮২৩
অনেক খুদে পড়ুয়া ভয় পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলেও বেশির ভাগ ছাত্র পুরো বিষয়টি নাকি দেখেছিল। ম্যাকের সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, ওই অদ্ভুত প্রাণীরা গোলকযানে ফিরে যাওয়ার আগে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরিবেশ নিয়ে বার্তাও দেয়। আর সেই বার্তা শুনেই ভয় পেয়ে যায় তারা। কেউ কেউ নাকি কেঁদেও ফেলে।
১৯২৩
ম্যাকের সাক্ষাৎকারে এক পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জানিয়েছিল, ভিন্গ্রহীরা তাদের দূষণ সম্পর্কে অবগত করে এবং দূষণ কী ভাবে পৃথিবীকে ধ্বংস করতে পারে তা জানায়।
২০২৩
এক জন ১১ বছর বয়সি ছাত্রী ম্যাককে নাকি বলে, ‘‘আমি মনে করি যে ওই ভিন্গ্রহীরা আসলে আমাদের জানাতে চেয়েছিল যে আমরা বিশ্বের ক্ষতি করছি এবং আমাদের খুব বেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত নয়।’’ অন্য এক খুদে পড়ুয়া আবার বলেছিল যে, যত্ন না নেওয়ার কারণে এক দিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
২১২৩
অনেক করে বোঝানো হলেও ওই শিশুরা নিজেদের দাবিতে অনড় ছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল যে, তারা ভিন্গ্রহীদেরই দেখেছে।
২২২৩
এরিয়েল স্কুলের ভিন্গ্রহীদের ঢুঁ মারার সেই ঘটনা আফ্রিকার সবচেয়ে বিখ্যাত উড়ন্ত চাকি সংক্রান্ত গল্পগুলির অন্যতম। বিবিসির ‘উইটনেস হিস্ট্রি’-এর ২০২১ সালে জুন মাসের একটি পর্বে ঘটনাটিকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভিন্গ্রহীদের ঘটনাগুলির মধ্যে একটি’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
২৩২৩
তবে যুক্তিবাদী অনেকেরই দাবি ছিল, ওই পড়ুয়ারা কোনও বিশেষ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। অনেকে মনে করেন, এডস সম্পর্কে সচেতনতা প্রচারের জন্য পরিকল্পিত ভাবে কয়েক জন মানুষকে ভিন্গ্রহী সাজিয়ে ওই স্কুলে পাঠানো হয়েছিল এবং তাঁদের দেখেই ভয় পেয়েছিল শিশুরা। তবে এত বছর পরেও সে দিনের রহস্যের সমাধান হয়নি।