মধ্য চল্লিশের স্বাস্থ্যবান ডাকাবুকো উজ্জ্বলও সে দিন ভয়ে আঁতকে উঠেছিল! রাতে অন্ধকার, শুনশান রাস্তায় হাঁটার সময় হঠাৎ দু’দিকের দু’টি গলি থেকে বেরিয়ে যখন উজ্জ্বলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গুন্ডারা। উজ্জ্বল বুঝে গিয়েছিল, ওকে বাঁচতে হবে। শরীর-স্বাস্থ্য ভাল বলে প্রথমে সে লড়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যখন দেখল, ওদের এক জনের হাতে রয়েছে ছুরি, তখন বুঝল, পারবে না। পালাতে হবে, বাঁচতে হলে। ‘ফাইট অর ফ্লাইট’। এই দু’টোই রাস্তা তার সামনে খোলা রয়েছে, বাঁচার জন্য। অনেক কসরতে এক গুন্ডার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে শেষমেশ পালাতে পেরেছিল উজ্জ্বল। বেঁচে গিয়েছিল। ওই গুন্ডাদের দেখে ভয় না পেলে উজ্জ্বল সে দিন বাঁচতেই পারতো না। ভয়ই তাকে শিখিয়েছিল, পারলে লড়ো, না হলে পালাও।
উজ্জ্বলেরই বন্ধু জয়দীপ। রোগা, পাতলা চেহারা। কারও সঙ্গে সে বাদ-প্রতিবাদে জড়ায়নি কখনও। যেন অজাতশত্রু! তবু, তার সব কিছুতেই ভয়। কেউ তার ওপর চড়াও হবে, সব সময় এই ভয়ে ভোগে জয়দীপ। উজ্জ্বলের মুখেই শুনেছে ওই গুন্ডাদের কথা। তার পর থেকে ওই রাস্তা বা অন্ধকার গলি দিয়ে আর হাঁটা-চলাই করতো না জয়দীপ! অকারণ ভয়ে। পরে মানসিক অবসাদজনিত জটিল রোগে কাবু হয়ে পড়ে জয়দীপ।
ভয় ভাল। তা আমাদের বাঁচতে শেখায়। ভয় পাই বলেই আমরা বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। তার জন্য হয় লড়ি, নয়তো পালিয়ে গিয়ে বাঁচি।
কিন্তু অকারণ ভয় আমাদের কুরে কুরে খায়। আজীবন। জড়িয়ে ফেলে নানা ধরনের দুরারোগ্য জটিল অসুখে। অকারণ ভয়ই তো আমাদের বয়সের চেয়ে বেশি বুড়ো করে দেয়। দুর্বল থেকে করে তোলে দুর্বলতর। যা নিশ্চিত ভাবে সারানোর জন্য এখনও কোনও ওষুধ আসেনি বাজারে।
আরও পড়ুন- বিশ্বের অর্ধেক শিশুকে কাবু করা ভাইরাস ঠেকানোর রাস্তা খুলল
অকারণ ভয়ের জন্য কি এ বার আর আমাদের ভুগতে হবে না মানসিক অবসাদজনিত রোগে? বা, পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) অথবা জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের (জিএডি বা ‘গ্যাড’) মতো দুরারোগ্য জটিল অসুখে?
সেই সম্ভাবনা এ বার জোরালো হয়ে উঠল দুই বাঙালির সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়। এই প্রথম। তাঁরা দেখালেন, ভয়কে বাঁচিয়ে রেখেও অকারণ ভয়ের হাত থেকে পুরোপুরি রেহাই পাওয়ার সত্যি-সত্যিই একটা রাস্তা রয়েছে। যে পথ ধরে এগোলে আগামী দিনে অকারণ ভয়ের হাত থেকে পুরোপুরি রেহাই মেলার ওষুধ হয়তো বা বানিয়ে ফেলা যাবে। যা এত দিন ছিল কল্পনারও অতীত!
আরও পড়ুন- গবেষণা বলছে, কেমো বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্যানসার, সত্যিই তাই?
বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস (এনসিবিএস)-এর অধ্যাপক স্নায়ুবিজ্ঞানী সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর পোস্ট ডক্টরাল ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমানের সেই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘ইলাইফ’-এর ৩০ মে সংখ্যায়। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘অ্যাক্টিভেশন অফ দ্য সেম এমগ্লুআর-৫ রিসেপ্টর্স ইন দ্য অ্যামিগডালা কজেস ডাইভারজেন্ট এফেক্টস অন স্পেসিফিক ভার্সাস ইনডিসক্রিমিনেট ফিয়ার’। রয়েছেন দুই সহযোগী গবেষকও। এনসিবিএসের সোনাল কেডিয়া ও গিসেল ফার্নান্ডেজ।
দুই বাঙালি নিউরো-সায়েন্টিস্ট। (বাঁ দিক থেকে) অধ্যাপক সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় ও পোস্ট ডক্টরাল ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান। বেঙ্গালুরুতে।
অকারণ ভয় সারানোর ওষুধ নেই কেন? কেন নেই তেমন জোরালো চিকিৎসা পদ্ধতি?
অন্যতম প্রধান গবেষক, বিশিষ্ট স্নায়ুবিজ্ঞানী অধ্যাপক সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অসুবিধেটা এখানেই যে, ভয় (স্পেসিফিক ফিয়ার) আর অকারণ ভয় (ইনডিসক্রিমিনেট ফিয়ার), এই দু’টোরই জন্ম হয় আমাদের মগজ বা মস্তিষ্কের (ব্রেন) একটি নির্দিষ্ট জায়গায়। যে এলাকাটির নাম- ‘অ্যামিগডালা’। যে ভয় আমাদের বিপদ, আপদ থেকে বাঁচার প্রেরণা জোগায়, তার জন্ম দেয় সেই অ্যামিগডালাই, যেখানে তৈরি হয় অকারণ ভয়ও। যা আমাদের ধীরে ধীরে মানসিক ও শারীরিক ভাবে শেষ করে দেয়। স্মৃতি, রাগ, দুঃখ, অভিমান, সুখ, আনন্দ, ভয়ের মতো বিভিন্ন অনুভূতির অন্যতম প্রধান উৎসস্থল এই অ্যামিগডালাই।’’
সেই অ্যামিগডালা থাকে আমাদের মগজের সামনের দিক বা ফ্রন্টাল লোবের (কপাল, কানের ওপরের অংশ) ঠিক পিছনে থাকা টেম্পোরাল লোবের অনেক অনেক গভীর অন্তর, অন্দরে।
আরও পড়ুন- মাছও যেন জলপরী! প্রমাণ করে চমকে দিলেন বাঙালি কন্যা
এত দিন জানা ছিল, প্রায় একই সময়ে ভয় আর অকারণ ভয়ের জন্ম হয় অ্যামিগডালায়। যেহেতু একই জায়গায় আর প্রায় একই সঙ্গে একই সময়ে ভয় আর অকারণ ভয়ের জন্ম হয় মগজে, তাই ভয়কে টিঁকিয়ে রেখে অকারণ ভয়কে পুরোপুরি দূর করাটার কোনও পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি এত দিন। তার ফলে অকারণ ভয় তাড়ানোর কোনও ওষুধ তেমন কার্যকরী হয়নি। চালু হয়নি জোরলো কোনও চিকিৎসা পদ্ধতিও।
হালের গবেষণা, সেই অর্থে, একটি আলোকপাত। এমনটাই মনে করছেন কলকাতার স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনস্তত্ত্ববিদরা। মনস্তত্ত্ববিদ কনসালট্যান্ট সাইকিয়াট্রিস্ট জয়রঞ্জন রাম ও সঞ্জয় গর্গ মনে করছেন, অকারণ ভয়কে দূর করার একটা রাস্তা হয়তো এ বার খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। আরও দূর এগোতে হবে গবেষকদের। তা সম্ভব হলে আগামী দিনে ওষুধ আবিষ্কারকদের কাজটা সহজ করে তুলতে পারে এই গবেষণা আর তার পরের ধাপগুলি। তাঁদের কথায়, ‘‘অকারণ ভয় বেশি পায় শিশুরা। বাস্তবটা তারা কম চেনে বলে। যুক্তিবোধটা তাদের কমজোরি হয় বলে। এই গবেষণা শিশুদের সেই অকারণ ভয়ের হাত থেকে একেবারে রেহাই মেলার পথ দেখাতে পারে।’’
অসাধ্যসাধনের সম্ভাবনাটা কী ভাবে জোরালো করল এই গবেষণা?
আমেরিকার নর্থ-ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-সায়েন্স বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বুলা ঝা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এই গবেষণাই প্রথম দেখাল মগজের টেম্পোরাল লোবের অনেক গভীরে থাকা অ্যামিগডালায় আগে তৈরি হয় অকারণ ভয় বা অ্যাংজাইটি। তার পর জন্মায় ভয় বা স্পেসিফিক ফিয়ার। আরও দেখাল, অকারণ ভয়ের জন্ম হয় ‘ইমিডিয়েট’। তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়ায়। আর তা হয় শর্ট-লিভ্ড’। মানে, তাৎক্ষণিক ভয়টা বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয় না। কিন্তু ভয় বা স্পেসিফিক ফিয়ার জন্মাতে একটু বেশি সময় লাগে। আর সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়। গবেষণার এই ফলাফলই অসাধ্যসাধনের সম্ভাবনাটা জোরালো করে তুলল।’’
তবে ব্যাতিক্রমও আছে। যখন অকারণ ভয়টাও দীর্ঘমেয়াদী হয়। তার কারণ হতে পারে মগজের কোষ বা নিউরনগুলোর মধ্যে ক্রিয়া-বিক্রিয়াগুলোর বৈচিত্র্য। সেগুলোর আলাদা আলাদা ধাপ। পর্যায়। মেকানিজম। গবেষকরা এ বার নামবেন তার সন্ধানে।
অকারণ ভয় কতটা ক্ষতিকর, তাঁর ননসেন্স রাইমে তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সুকুমার রায়। তাই ‘মিথ্যে ভয়’ (পড়ুন, অকারণ ভয়) পেলে কামড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন! তার আগে অবশ্য ‘মিথ্যে ভয়’ না পাওয়ার জন্য ‘সত্যি বলছি, মারব না’ বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন!
অকারণ ভয়কে আদৌ ভয় থেকে আলাদা করা যায় কি না, কী ভাবেই বা তা করা সম্ভব, তারই সন্ধানে নেমেছিলেন গবেষকরা। পরীক্ষাটা চালিয়েছিলেন তাঁরা ইঁদুরের ওপর। ইঁদুরের মগজের অ্যামিগডালার কোষ বা নিউরনগুলোর ‘পাঁচিল’ (বা, মেমব্রেন)-এর একেবারে বাইরের স্তরে থাকে একটা রিসেপ্টর প্রেটিন। যার নাম- ‘এমগ্লুআর-৫’। ওই প্রোটিনের সক্রিয়তার ওপরেই ভয় আর অকারণ ভয়ের জন্ম ও তাদের বাড়া-কমার মাত্রা নির্ভর করে। ওই রিসেপ্টর প্রোটিন বেশি সক্রিয় হলে ভয় ও অকারণ ভয়ের মাত্রা বাড়ে। প্রোটিনের সক্রিয়তা কমলে ভয়, অকারণ ভয়- দু’টোরই মাত্রা কমে যায়।
রিসেপ্টর প্রোটিন ‘এমগ্লুআর-৫’-এর সেই ‘অ্যাক্টিভেটর’। যার নাম- ডিএইচপিজি। এরা ভয়, অকারণ ভয়ের মাত্রা বাড়ায় অ্যামিগডালায়
ওই রিসেপ্টর প্রোটিনের সক্রিয়তা কমাতে গবেষকরা প্রথমে কৃত্রিম ভাবে বানানো খুব ছোট একটা অণুকে ব্যবহার করেছিলেন। অণুটি কাজ করেছিল ‘অ্যান্টাগোনিস্ট এজেন্ট’ হিসেবে। মানে, রিসেপ্টর প্রোটিনটি যাতে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য তাকে বেঁধে ফেলেছিল। প্রোটিনটির কাজকর্ম ‘ব্লক’ করে দিয়েছিল। এগুলোকে বলে ‘ব্লকার’। ওই ব্লকারের জন্য রিসেপ্টর প্রোটিনের সক্রিয়তা কমে গিয়েছিল। তার ফলে, ভয় আর অকারণ ভয়- দু’টোরই মাত্রা কমে গিয়েছিল। কিন্তু দু’টোই কমেছিল একই সঙ্গে, একই সময়ে।
এর পর উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করলেন গবেষকরা। নেমে পড়লেন ওই রিসেপ্টর প্রোটিনের সক্রিয়তা বাড়ানোর কাজে। তার জন্য কৃত্রিম ভাবে তাঁরা বানালেন খুব ছোট আরেকটি অণু। যার নাম-‘ডিএইচপিজি’। আগের ছোট অণুটি কাজ করেছিল রিসেপ্টর প্রোটিনের ‘ব্লকার’ হিসেবে। এ বার ডিএইচপিজি নামে ছোট অণুটি কাজ করল ‘অ্যাক্টিভেটর’ হিসেবে। গবেষকরা ওই অ্যাক্টিভেটর দিয়ে রিসেপ্টর প্রোটিনের সক্রিয়তা বাড়িয়ে দেখলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইঁদুরের মগজে জন্মাচ্ছে অকারণ ভয় বা অ্যাংজাইটি। বা, ইনডিসক্রিমিনেট ফিয়ার। আর সেটা তেমন একটা স্থায়ীও হচ্ছে না। এক দিন পরেই তা ইঁদুরের স্মৃতি থেকে তা মুছে যাচ্ছে।
এও দেখা গেল, সময় যত গড়াচ্ছে, ততই জন্ম হচ্ছে স্পেসিপিক ফিয়ার বা আদত ভয়ের। যা দীর্ঘমেয়াদি। এক দিন বাদে গবেষকরা দেখলেন, অকারণ ভয়ের লেশমাত্র নেই ইঁদুরের স্মৃতিতে। কিন্তু ভয়টা বেশ বড় জায়গা জুড়ে টিঁকে রয়েছে। দেখা গেল, অকারণ ভয়ের পর তৈরি হচ্ছে ভয়। আর সেই ভয়টাই দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
গবেষণার টার্নিং পয়েন্ট
মূল গবেষক মোস্তাফিজুরের দাবি, ‘‘এটাই আমাদের গবেষণার টার্নিং পয়েন্ট। অভিনবত্ব। যা এর আগে বিশ্বে আর কোথাও কেউ পরীক্ষামূলক ভাবে দেখাতে পারেননি। আমরাই প্রথম দেখাতে পারলাম, মগজের অ্যামিগডালায় অল্প সময়ের মধ্যেই জন্মায় অকারণ ভয়। তা তেমন স্থায়ী হয় না। আর ভয়টা জন্মাতে একটু বেশি সময় লাগে। কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।’’
পরের ধাপগুলো কী কী?
তবে আরও অনেক দূর যেতে হবে গবেষকদের। আদত লক্ষ্যে পৌঁছতে। অকারণ ভয়ের হাত থেকে আমাদের পুরোপুরি রেহাই দেওয়ার জন্য যদি ওষুধ আবিষ্কার করতে হয় বা চালু করতে হয় কোনও কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি, তা হলে মগজের কোষ বা নিউরনগুলোর মধ্যে এই ভয় আর অকারণ ভয়ের জন্মের পর্যায় ও পদ্ধতিগুলো (মেকানিজম) গবেষকদের জানতে, বুঝতে হবে।
সেই ‘এমগ্লুআর-৫’ রিসেপ্টর প্রোটিনের আদত চেহারা। অণুবীক্ষণের নীচে
মোস্তাফিজুরের কথায়, ‘‘মগজের কোষগুলোর (নিউরন) মধ্যে কোন পদ্ধতিতে ও কোন কোন পর্যায়ে তৈরি হচ্ছে অকারণ ভয় আর আদত ভয়, সেগুলো জানাই এখন আমাদের প্রাইম টার্গেট। এই পদ্ধতি আর তাদের পর্যায়গুলোর ‘পায়ের ছাপ’ মিলবে নিউরনগুলোর মধ্যেই। তখন ওষুধ আবিষ্কার বা চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবনের কাজটা আরও সহজ হয়ে যাবে।’’
তাই ভয় বেঁচে থাক। দূরে যাক অকারণ ভয়। এই মন্ত্রেই আপাতত এগিয়ে চলেছেন দুই বাঙালি স্নায়ুবিজ্ঞানী। নির্ভয়ে!
ছবি সৌজন্যে: ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস (এনসিবিএস), বেঙ্গালুরু
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy