ভিন গ্রহ ‘কে-২-২৮৮বিবি’। -ছবি সৌজন্যে: নাসা।
ভিন গ্রহের ভিন মুলুকে প্রাণের হদিশ পাওয়ার আশা ফের জোরালো হল। খোঁজ মিলল ৪টি ভিন গ্রহের। যার একটি আকারে পৃথিবীর প্রায় দ্বিগুণ। এবং আমাদের নেপচুন গ্রহের অর্ধেক। নাসার ‘টেস’ উপগ্রহের চোখে আলাদা ভাবে ধরা পড়ল বাকি তিনটি ভিন গ্রহ। সেইগুলিও অনেকটাই পৃথিবীর মতো। নাসার উপগ্রহের নজরে পড়া তিনটি ভিন গ্রহ রয়েছে আমাদের খুব কাছে।
তবে সবক’টি ভিন গ্রহই রয়েছে তাদের নক্ষত্র থেকে এমন একটি দূরত্বে, যাকে বলে ‘হ্যাবিটেব্ল জোন’ বা বাসযোগ্য এলাকা। যেখানে জলের তরল অবস্থায় থাকার সম্ভাবনা থাকে যথেষ্টই। গ্রহটির পাথুরে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ বার ওই ভিন গ্রহগুলিতে যদি বায়ুমণ্ডলের অস্তিত্বেরও প্রমাণ মেলে, তা হলে সেই মুলুকে প্রাণের হদিশ পাওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরালো হবে।
সিয়াট্লে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২৩৩তম বৈঠকে, সোমবার একটি ভিন গ্রহের আবিষ্কারের ঘোষণা করা হয়। জানানো হয়েছে নাসার কেপলার টেলিস্কোপের পাঠানো তথ্যাদিই ওই ভিন গ্রহটির খোঁজখবর দিয়েছে। ভিন গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘কে-২-২৮৮বিবি’। রয়েছে আমাদের থেকে ২২৬ আলোকবর্ষ দূরে। ‘টরাস’ নক্ষত্রপুঞ্জে। আমাদের সূর্যের চেয়ে আকারে অনেক ছোট, অনেক হাল্কা আর প্রায় ‘টিমটিম’ করে জ্বলা একটি তারাকে এক বার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে ভিন গ্রহটি সময় লাগে ৩১.৩ পার্থিব দিন। মানে, আমাদের ৩১ দিনের মাস পেরনোর পর আরও ৩টি ঘণ্টা। পরে নাসার সায়েন্স মিশন ডাইরেক্টরেটের অ্যাসোসিয়েট অ্য়াডমিনিস্ট্রেটর থমাস জুরবুচেন তাঁর টুইটেও ওই আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন।
সেই ভিন গ্রহটি কেমন, রয়েছে কোথায়? দেখুন ভিডিয়ো। সৌজন্যে: নাসা ও ভোকিট
আরও পড়ুন- কর্পূরের মতো উবে যাচ্ছে পৃথিবীর ৪ গুণ একটা গ্রহ!
আরও পড়ুন- পৃথিবীর ২৫ হাজার গুণ বড় গ্রহের সন্ধান দিলেন বাঙালি বিজ্ঞানীরা
গবেষকদলের নেতৃত্বে রয়েছেন যিনি, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই স্নাতক স্তরের ছাত্রী আদিনা ফিনস্টিন জানিয়েছেন, ওই ভিন গ্রহটি যে তারামণ্ডলে রয়েছে তার নাম ‘কে-২-২৮৮’। সেখানে দু’টি তারা একে অন্যকে প্রদক্ষিণ করছে। কোনও তারামণ্ডলের এই অবস্থাকে বলে ‘বাইনারি সিস্টেম’। সেখানকার দু’টি তারাই আমাদের সূর্যের চেয়ে আকারে অনেকটা ছোট। তাদের তেজও খুব কম। সূর্যের তুলনায় বলা ভালো, তারা ‘টিমটিম করে জ্বলছে’। তবে এই ভিন গ্রহটির বিশেষত্ব এটাই যে, তা তুলনায় আরও ছোট আর বেশি টিমটিম করে জ্বলা তারাটিকেই প্রদক্ষিণ করছে। ওই নক্ষত্রমণ্ডলের দু’টি তারা একে অন্যের চেয়ে রয়েছে ৫১০ কোটি মাইল দূরে। যার মানে, আমাদের সূর্য থেকে বলয় গ্রহ শনি যতটা দূরে রয়েছে, ওই নক্ষত্রমণ্ডলের দু’টি তারা একে অন্যের চেয়ে রয়েছে তার ৬ গুণেরও বেশি দূরত্বে।
গবেষণাপত্রটি শীঘ্রই বেরতে চলেছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ।
গবেষকরা এও জানিয়েছেন, ওই তারামণ্ডলের দু’টি নক্ষত্রের মধ্যে যেটি বেশি ঝকঝকে, আলো ঠিকরোচ্ছে বেশি, তার ভর আমাদের সূর্যের ভরের অর্ধেক। আর যে তারাটি তুলনায় বেশি ‘টিমটিম’ করে জ্বলছে, সেটির ভর আমাদের সূর্যের এক-তৃতীয়াংশ।
আরও পড়ুন- বিদ্যুতের অপচয় আর হবে না! এক শতাব্দী পর খোঁজ মিলল সেই ‘দুর্লভ’ পদার্থের
আরও পড়ুন- চাঁদের ‘আঁধার দুনিয়া’য় পা ফেলল চিনের যান
মূল গবেষক ফিনস্টিন বলেছেন, ‘‘আকারের জন্যই এই ভিন গ্রহটি কিছুটা বিরল প্রকৃতির। এখনও পর্যন্ত যত ভিন গ্রহের হদিশ মিলেছে (প্রায় ৪ হাজারটি), তাদের প্রায় কেউই আকারে, আচরণে এই ভিন গ্রহটির মতো নয়। তাই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি রহস্যের জট খুলতে এই ভিন গ্রহটি পথ দেখাতে পারে।’’ গবেষক ফিনস্টিন ইনটার্ন হিসেবে কাজ করেন নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে।
ও দিকে, পরে নাসার সায়েন্স মিশন ডাইরেক্টরেটের অ্যাসোসিয়েট অ্য়াডমিনিস্ট্রেটর থমাস জুরবুচেন আর একটি টুইটে জানিয়েছেন, নাসার ‘টেস’ উপগ্রহের নজরে ধরা পড়েছে আরও তিনটি ভিন গ্রহ।
নাসার ‘টেস’ উপগ্রহের নজরে ধরা পড়েছে এই তিনটি ভিন গ্রহ। দেখুন ভিডিয়ো
তাদের প্রথমটি রয়েছে আমাদের থেকে ৬০ আলোকবর্ষ দূরে ‘মেন্সা’ নক্ষত্রপুঞ্জে। তার নাম- ‘পাই মেন্সি-সি’। আকারে পৃথিবীর দ্বিগুণ। সেই ভিন গ্রহটি তার নক্ষত্র ‘পাই মেন্সি’কে এক বার প্রদক্ষিণ করে ৬ দিনে। ‘পাই মেন্সি’ নক্ষত্রটি আকারে ও ভরে আমাদের সূর্যের মতোই।
দ্বিতীয় যে ভিন গ্রহটির হদিশ মিলেছে, তার নাম- ‘এলএইচএস-৩৮৮৪বি’। সেই পাথুরে গ্রহটি আকারে পৃথিবীর ১.৩ গুণ। রয়েছে আমাদের থেকে ৪৯ আলোকবর্ষ দূরে, ‘ইন্ডাস’ নক্ষত্রপুঞ্জে।
সন্ধান মিলেছে আরও একটি ভিন গ্রহের। তার নাম- ‘এইচডি-২১৭৪৯বি’। এটি আকারে পৃথিবীর তিন গুণ। ২৩ গুণ ভারী। ৫৩ আলোকবর্ষ দূরে, ‘রেটিক্যুলাম’ নক্ষত্রপুঞ্জে থাকা সেই ভিন গ্রহটি তার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৩৬ দিন।
ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy