‘অন্তরীক্ষ ভবন’। দেশের মহাকাশ গবেষণার ‘হৃদপিণ্ড’। বেঙ্গালুরুতে ইসরোর সদর দফতরে। ছবি সৌজন্যে: ইসরোর ওয়েবাসাইট।
গত কয়েক দশকের লৌহকপাট এ বার খুলে যাচ্ছে!
আমজনতার জন্য দরজা হাট করে খুলে দিচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’র মতোই। চাইলে, এ বার ইসরোয় ঘুরতে যেতে পারবেন। দেখে আসতে পারবেন, কোথায় বানানো হয় রকেট আর স্যাটেলাইট, তা কী ভাবে বানানো হয়। দেখে আসতে পারবেন কোথা থেকে রকেট, স্যাটেলাইটগুলিকে পাঠানো হয় মহাকাশে।
ইসরো সূত্রের খবর, গত ১২ অগস্ট ভারতে মহাকাশ গবেষণার জনক প্রয়াত বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান কে সিভান তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ইসরো বলতে তো দেশের সাধারণ মানুষ বোঝেন, রকেট আর স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) বানায়। আর রকেটের পিঠে চাপিয়ে উপগ্রহ পাঠায় মহাকাশে। এর বেশি কিছু তাঁরা জানেন কি? রাখেন কি তার খবরাখবর, সাধারণ মানুষের রোজকার জীবনে কাজে লাগার জন্য ইসরো কী করছে? যখন কোনও উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হয়, তখন তার খবর সংবাদমাধ্যমে ছড়ালে ইসরোর নামটা কানে আসে সাধারণ মানুষের। ইসরোর নামটা হঠাৎ কাউকে বললে তিনি আকাশের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ওই মুলুকের ব্যাপারস্যাপার! দোষটা আমজনতার নয়। দায়টা ইসরোর। তাঁদের কাছে দরজাটা খুলে দেওয়া হয়নি। যেমন নাসা করেছে।
বেঙ্গালুরুতে ইসরোর সদর দফতর।
সিভান জানিয়েছেন, নাসা যে ভাবে তাদের বিভিন্ন খবরাখবর প্রচার করে নিয়মিত, তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামিল করে স্কুল ও কলেজ স্তরের ছাত্রছাত্রীদের, আমজনতার মধ্যে সচেতনতা ও আগ্রহ, উৎসাহ বাড়াতে মাঝেমধ্যেই আয়োজন করে প্রদর্শনীর, ইসরোও এ বার সেই পথেই হাঁটবে। দরজা হাট করে খুলে দেবে সাধারণ মানুষের জন্য। যাতে ইসরোর কর্মসূচি, দেশের সাধারণ মানুষের ওপর ইসরোর কর্মসূচি, মিশনগুলির প্রভাব সম্পর্কে অআকখ জানা মানুষকেও সচেতন করে তোলা যায়।
ইসরোর কয়েকটি সাড়াজাগানো মহাকাশ অভিযান, দেখুন ভিডিয়ো
ইসরো সূত্রের খবর, তার জন্য একেবারে স্কুল স্তরের ছাত্রছাত্রীদের থেকে শুরু করতে চাইছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। এ বার সারা দেশে স্কুলের অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া পড়ুয়াদের নিয়ে বছরে এক বা দু’বার করে ২৫/৩০ দিনের প্রশিক্ষণ দেবে ইসরো। যাতে তাদের মহাকাশ গবেষণা সম্পর্কে আগ্রহী, উৎসাহী করে তোলা যায়। ওই স্কুলপড়ুয়ারাই নানা রকমের কনসেপ্টে বিভিন্ন ধরনের উপগ্রহের ছোট ছোট মডেল বানাক, চাইছে ইসরো।
শ্রীহরিকোটায় ইসরোর রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র
আরও পড়ুন- আগে যাচ্ছে ইজরায়েল, ‘চন্দ্রযান-২’ উৎক্ষেপণের দিন ফের পিছল
আরও পড়ুন- বাজ পড়ার ৩ ঘণ্টা আগেই এ বার আসবে এসএমএস অ্যালার্ট!
বেঙ্গালুরুতে ইসরোর মুখ্য জনসংযোগ অধিকর্তা দেবীপ্রসাদ কার্নিক আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, যেখানে কৃত্রিম উপগ্রহগুলি বানানো হচ্ছে, আর যেখান থেকে সেই উপগ্রহগুলিকে মহাকাশে পাঠানো হয়, এ বার সেই জায়গাগুলি ঘুরে দেখতে পারবেন আমজনতা। শুধু চোখের দেখাই নয়, রকেট ও স্যাটেলাইট বানানো আর তাদের উৎক্ষেপণের প্রযুক্তিও তাদের যতটা সহজে বোঝানো সম্ভব, গাইড তা বুঝিয়ে দেবেন। এখনও পর্যন্ত ওই সব ‘জোন’-এ দেশের অনেক বিজ্ঞানীও ঢুকতে পারেন না। তাঁদের সেই অনুমতি দেওয়া হয় না। সাধারণ মানুষ, স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আয়োজন করা হবে প্রদর্শনীরও।
বিক্রম সারাভাইয়ের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন। গত ১২ অগস্টের ওই অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের সঙ্গে ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভান (ডান দিক থেকে চতুর্থ)
ইসরোর চেয়ারম্যান সিভান নিজেও কৃষক পরিবারের সন্তান। তাঁর বাল্য ও কৈশোর কেটেছে প্রত্যন্ত গ্রামে।
ইসরো সূত্রের খবর, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষও যাতে দেশের হালের মহাকাশ গবেষণার যাবতীয় খবরাখবর সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল থাকেন, তার জন্য দেশের সর্বত্র ‘ইসরো টিভি’র সম্প্রচারও শুরু হতে চলেছে।
ছবি সৌজন্যে: ইসরো ওয়েবসাইট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy