সোনার কণার ঝরনায় সারে হৃদরোগ! -ফাইল ছবি।
সোনায় সত্যি সত্যিই খুব তুষ্ট হয় হৃদয়! সোনায় মুড়ে দেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হৃদয় ফের চলতে শুরু করে চেনা ছন্দে!
অতি মূল্যবান ধাতু সোনার ঝরনাধারায় ভিজিয়ে দিলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায় অনেক জটিল হৃদ্রোগ। সেরে ওঠে হৃদয়ের যাবতীয় ক্ষত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম— ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কেশন’। সোনার জাদুমন্ত্রে!
গল্পগাছা নয়, কল্পকাহিনীও নয়। সাম্প্রতিক একটি নজরকাড়া গবেষণা এই খবর দিয়েছে। আমেরিকার ওটাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও চিলের ট্যাল্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, বিজ্ঞানীদের যৌথ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘এসিএস ন্যানো’-তে। মঙ্গলবার।
মানুষের হৃদপিণ্ডের ক্ষত কী ভাবে সারিয়ে তোলা যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে বহু দিন ধরেই। উদ্ভাবন হয়েছে নানা ধরনের অস্ত্রোপচারের। কিন্তু মূল সমস্যা হল, হাতে গোনা খুব সামান্য কয়েকটি প্রাণী ছাড়া অন্যদের হৃদপিণ্ডের ক্ষতবিক্ষত কোষ, কলাগুলিকে আর পুনরুজ্জীবিত (‘রিজেনারেট’) করার কাজটা অত্যন্ত কঠিন। সম্ভব হয় না বলাই শ্রেয়। ফলে, কোনও জটিল হৃদরোগকেই পুরোপুরি সারানো যায় না। সেই রোগ সঙ্গী হয়ে থাকে আমৃত্যু।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এই জমাট অন্ধকারেই কিছুটা আলো দেখালেন গবেষকরা। হৃদ্রোগ সারাতে অস্ত্রোপচারের যে পদ্ধতির ব্যবহার এখন সবচেয়ে বেশি, সেই ‘করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি’কে কী ভাবে আরও নিখুঁত, কম সময়ে আরও বেশি কার্যকরী করে তোলা যায় তারই পথ দেখাল এই গবেষণা। যা আগামী দিনে বাইপাস সার্জারির অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
নিখাদ সোনায় গয়না বানানো যায় না। গয়না বানাতে হলে কিছুটা খাদ মেশাতেই হয় বহু মূল্যবান ধাতু সোনায়।
হৃদরোগ সারানোর নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে গিয়ে গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরাও ‘খাদ’ মিশিয়েছেন সোনায়। সোনার সঙ্গে মিশিয়েছেন অ্যামাইনো অ্যাসিডের ক্ষুদ্র শৃঙ্খল দিয়ে গড়া এক ধরনের প্রোটিন— পেপটাইড অণু।
আর সোনার কণিকাগুলির আকার যতটা সম্ভব কমানো যায়, কমিয়েছেন। যাতে সোনার কণিকাগুলি হয়ে উঠেছে ‘ন্যানো পার্টিকল্স’। মাথার চুল যতটা সরু তার ৬০ হাজার ভাগের এক ভাগ যাদের ব্যাস (মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় এক ন্যানোমিটার। মাথার চুলের ব্যাস হয় বড়জোর ৬০ হাজার ন্যানোমিটার। এক থেকে ১০০ ন্যানোমিটারের মধ্যে ব্যাস হয় যে সব কণার তার নাম— ন্যানো পার্টিকল্স)।
পেপটাইড মেশানো সোনার সেই ন্যানো পার্টিকল্গুলিকে তার পরে স্প্রে করা হয় ইঁদুরের ক্ষতবিক্ষত হৃদপিণ্ডে। স্প্রে করার পর সোনার ন্যানো পার্টিকল্গুলি গিয়ে হৃদপিণ্ডের ক্ষতস্থানগুলির উপর সেঁটে বসে যায়।
বলা যায়, সোনায় মুড়ে দেওয়া হয় হৃদপিণ্ডকে! গবেষকরা দেখেছেন, তাতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রাণ ফিরে পায় ক্ষতবিক্ষত হৃদপিণ্ড। ক্ষতগুলি সেরে যায়। ফের তার চেনা ছন্দ ফিরে পায় হৃদপিণ্ড।
কেন এমন হয়, তারও ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। দেখেছেন সোনার অনেক গুণ। সোনা যে সুপরিবাহী ধাতু জানা ছিল। গবেষণা দেখিয়েছে, সোনার ন্যানো পার্টিকল্গুলি হৃদপিণ্ডের ক্ষতস্থানগুলির উপর সেঁটে বসলেই হৃদপিণ্ডে বিদ্যুৎপ্রবাহের চক্রটি (‘ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট’) আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে অল্প সময়ের মধ্যেই। তার ফলে, মাত্র কয়েক সপ্তাহেই হৃদপিণ্ডের নানা ধরনের কাজকর্ম ফিরে পায় তাদের স্বাভাবিক ছন্দ। হৃদপিণ্ডের কোষগুলির বিপাকক্রিয়ার পথ ও গতিও (‘কার্ডিয়াক ফাংশনস’) ফের স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
মূল গবেষক ওটাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হার্ট ইনস্টিটিউটের ‘বায়ো-ন্যানো মেটিরিয়ালস কেমিস্ট্রি’ বিভাগের অধিকর্তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এমিলিও অ্যালার্কন বলেছেন, ‘‘আগামী দিনে বাইপাস সার্জারিতে এই পদ্ধতির ব্যবহার আর সামান্য ক’দিনের অপেক্ষা মাত্র। সোনার কণাগুলি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হৃদপিণ্ডের কোষগুলিতে থাকা নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রবণে পুরোপুরি দ্রবীভূত হয়ে যায়। ফলে, সেগুলি শরীরের পক্ষেও ক্ষতিকারক হয় না। আর সোনার ন্যানো পার্টিকল্গুলি হৃদপিণ্ডের ক্ষতস্থান ছাড়া অন্য কোথাও গিয়ে সেঁটে বসে না। পৌঁছয় একেবারে নির্ভুল লক্ষ্যে।’’
গবেষকরা এ বার এই পদ্ধতির পরীক্ষা চালাতে চান আরও উন্নত আরও বড় আকারের প্রাণীর উপর। তাঁদের লক্ষ্য, মানুষের উপর এই পরীক্ষা চালানোর আগে এই পদ্ধতি খরগোশ ও শুয়োরের উপর প্রয়োগ করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy