রোজ ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ানো যাবে? -ফাইল ছবি।
রোজ গাদাগাদা ওষুধ খাই আমরা অভ্যাসে বা বদভ্যাসে। প্রয়োজনে, এমনকি অপ্রয়োজনেও। যেন ওষুধ না খেলে দিনে কি একটা করা হয়নি বলে মনে হয়, তাই না?
এই অভ্যাস বা বদভ্যাস থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার পথ দেখাল মানবশরীরে ওষুধ প্রয়োগের অভিনব একটি পদ্ধতি। যাতে যে ওষুধ আমরা রোজ খাই তা সপ্তাহে এক বার বা মাসে এক বার খেলেও সমান কাজ হবে। ফলে, অপ্রয়োজনে ওষুধ খেয়ে যেতে হবে না রোজ। তাতে রোজ ওষুধ খাওয়ার অনেক হ্যাপার অন্যতম— কিডনির দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়াও রোখা যাবে। আর এই অভিনব পদ্ধতিতে মানবশরীরে ওষুধ প্রয়োগে যেমন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা কমিয়ে সারানো যাবে স্কিজোফ্রেনিয়া-সহ বহু দুরারোগ্য বা জটিল রোগ, তেমনই দূর করা যাবে অপ্রয়োজনেও ওষুধ খাওয়ার বদভ্যাসও।
মানবশরীরে ওষুধ প্রয়োগের এই অভিনব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে লিন্ড্রা নামে একটি সংস্থা, যাদের অর্থসাহায্য করেছে ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’-এ। গত ১০ মার্চ।
গবেষকরা এমন একটি ক্যাপসুল বানিয়েছেন যা পাকস্থলীতে গিয়ে তার ভিতরের অংশটুকু বার করে দিয়েই তার কাজ শেষ করে দেয় না। তার পর সঙ্গে সঙ্গেই অন্ত্রের মাধ্যমে তা শরীর থেকে বেরিয়েও যায় না। বরং পাকস্থলিতে থাকে অন্তত সপ্তাহ তিনেক। ক্যাপসুলটি পাকস্থলিতে গিয়ে নানা ধরনের তরল রাসায়নিকে দ্রবীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাকস্থলির ভিতরেই এমন একটি কাঠামো গড়ে ওঠে যার ছ’টি বাহু রয়েছে। তার পর প্রতিটি বাহু থেকে বেরিয়ে আসে কৃত্রিম হরমোন। যে যে রোগ ঠেকাতে যে যে হরমোনের প্রয়োজন সেই সব হরমোন। সেই হরমোনগুলির ক্ষরণের সপ্তাহতিনেক পর সেই ছয় বাহুর কাঠামোটিও দ্রবীভূত হয়ে যায় পাকস্থলিতে। তখন ক্যাপসুলটির অপ্রয়োজনীয় অংশগুলি অন্ত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
গবেষকরা এই নতুন পদ্ধতিতে ওষুধ প্রয়োগের পরীক্ষা করে দেখেছেন শুয়োরের শরীরে। এ বার এর প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও শুরু হতে চলেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, মানবশরীরে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভাবে এই পদ্ধতি চালুর জন্য আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর অনুমোদন পেতে আবেদন জানানো হবে আগামী বছরে। যাতে ২০২৪ সালের মধ্যেই এই পদ্ধতির সুযোগ নিতে পারেন সাধারণ মানুষ।
গর্ভনিরোধক বড়িগুলি যে কাজ করে সেই কাজ এই পদ্ধতিতে করা হলে তার সুফল কী কী হতে পারে তা পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকরা। তবে তাঁরা এও জানিয়েছেন, স্কিৎজোফ্রেনিয়া-সহ নানা ধরনের স্নায়ুরোগ, ম্যালেরিয়া সারাতেও এই পদ্ধতি খুব ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে পারে আগামী দিনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy