অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেতা জিন হ্যাকম্যানের পিয়ানোবাদিকা স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়ার মৃত্যুর কারণ হান্টাভাইরাস। নিউ মেক্সিকো পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হান্টাভাইরাসের সংক্রমণে বহু দিন ধরেই ভুগছিলেন বেটসি। কোনও একটি বিরল রোগে আক্রান্তও হয়েছিলেন। তবে ঠিক কেমন উপসর্গ দেখা দিয়েছিল তাঁর, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ আগেও হয়েছে। কী এই ভাইরাস? কতটা বিপজ্জনক হতে পারে?
হান্টাভাইরাসের সংক্রমণে হতে পারে বিরল রোগ
আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি)-র তথ্য বলছে, ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলিতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হত। এখন উত্তর আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। হান্টাভাইরাস ইঁদুর জাতীয় প্রাণী থেকেই ছড়ায়। ইঁদুরের মলমূত্র, দেহাংশ বা লালা থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরেও ঢুকতে পারে। হান্টাভাইরাসের সংক্রমণে কিছু বিরল রোগ হতে পারে মানুষের শরীরে। সাধারণত এই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে তছনছ করে দেয়। দু’ধরনের সিনড্রোম হতে দেখা যায়— ‘হান্টাভাইরাস পালমোনারি সিনড্রোম’ (এইচপিএস) এবং ‘হেমারেজিক ফিভার উইথ রেনাল সিনড্রোম’ (এইচএফআরএস)।
ভাইরাসের সংক্রমণে ফুসফুসের বিরল রোগ হতে পারে। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা ছাড়া গতি থাকবে না। তা ছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণে শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। হান্টাভাইরাস খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে সংখ্যায় বাড়তে পারে। মানুষের দেহকোষে ঢুকে কোষের রিসেপ্টরকে কব্জা করে নিয়ে সংখ্যায় বেড়ে আশপাশের সুস্থ কোষগুলির ক্ষতি করতে শুরু করে। ফলে খুব দ্রুত শরীরের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লক্ষণ কী কী
গোড়ায় ঘন ঘন জ্বর আসবে, সেই সঙ্গে পেশির ব্যথা শুরু হবে। হান্টাভাইরাস ঘটিত রোগে পা, কোমর ও কাঁধের পেশিতে ব্যথা বেশি হয়। পেশিতে টান ধরবে, হাঁটাচলা করতে সমস্যা হবে।
রোগীর খিদে কমে যাবে, বমি, ডায়েরিয়া-সহ তলপেটে যন্ত্রণা শুরু হবে।
রোগ বাড়লে শ্বাসকষ্ট শুরু হবে। হৃৎস্পন্দনের হার বাড়বে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করবে। রক্তচাপ কমে যাবে এবং ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেবে।
চিকিৎসা কি আছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তথ্য অনুযায়ী, হান্টাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে তেমন কোনও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা টিকা নেই। এই ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্ব জুড়ে মৃত্যুর হারও বেশি। একমাত্র চিকিৎসা হল অক্সিজেন থেরাপি বা রোগীকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা। বাড়িঘর পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর উৎপাত যাতে না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখাও জরুরি।