Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আইনস্টাইন কি নির্ভুল পুরোপুরি? সেই ঘোষণা হতে পারে কাল

আইনস্টাইন কি পুরোপুরি সঠিক ছিলেন? তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা বাদ (জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি বা জিটিআর) কি নির্ভুল ছিল পুরোদস্তুর? এ বার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিশ্বের তিনটি জায়গা থেকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ কিছু আবিস্কারে’র ঘোষণা করতে চলেছে আগামী কাল, বৃহস্পতিবার। একই সঙ্গে সেই ঐতিহাসিক ঘোষণাটি হতে চলেছে ওয়াশিংটন, পুণে আর ইতালিতে। একেবারেই আনুষ্ঠানিক ভাবে, সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে।

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৫:২৬
Share: Save:

আইনস্টাইন কি পুরোপুরি সঠিক ছিলেন?

তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ (জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি বা জিটিআর) কি নির্ভুল ছিল পুরোদস্তুর?

তাঁর একশো বছরের পুরনো তত্ত্বের পূর্বাভাসগুলোর মধ্যে কিছুতেই যার সরাসরি দেখা মিলছিল না, সেই মহাকর্ষীয় তরঙ্গও কি এ বার আমাদের নজরে পড়ে গেল?

কতটা পথ পেরলে তবে পথিক বলা যায়?

তার উত্তরটা হয়তো আমাদের এখনও কারও জানা নেই।

আরও পড়ুন- আর বিদ্যুতের অপচয় নিয়ে ভাবতে হবে না, নয়া দিশা বিজ্ঞানে

কিন্তু, একশোটা বছর পেরিয়ে আসার পর হয়তো এ বার আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ সার্বিক ভাবেই প্রমাণিত হতে চলেছে।

হয়তো জট খুলতে চলেছে আইনস্টাইনের বলা সেই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (গ্র্যাভিটি ওয়েভ)-রহস্যেরও। যা আমাদের এই ‘চেনা’ ব্রহ্মাণ্ডের অনেক অচেনা রূপ আর অজানা কথা ও কাহিনী জানা ও বোঝার একেবারে নতুন একটা জানলা খুলে দেবে। ১৪০০ কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডের জন্মের সময়ে যে বিস্ফোরণ হয়েছিল (বিগ ব্যাং), সেখান থেকে জন্মানো তরঙ্গই হল মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। যাকে প্রাইমর্ডিয়াল গ্র্যাভিটি ওয়েভও বলে।

একেবারেই একটা ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে একুশ শতকের পদার্থবিজ্ঞান। উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। নির্ভুল ভাবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের হদিশ পাওয়ার জন্য গত সেপ্টেম্বর থেকে আমেরিকার ওয়াশিংটন স্টেটের হ্যানফোর্ড ও লুইজিয়ানার লিভিংস্টোনে একেবারে সর্বাধুনিক উপায়ে নজরদারি শুরু করেছে ‘লেসার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি’ (লাইগো)-র দু’টি অত্যাধুনিক সন্ধানী যন্ত্র বা ‘অ্যাডভান্সড্ লাইগো ডিটেক্টর’। যা দেখতে ইংরেজির ‘L’ বর্ণের মতো। আর যার দু’টি ‘হাত’ই চার কিলোমিটার করে লম্বা। মাস কয়েক আগেই গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, এই প্রথম সেই অত্যাধুনিক লাইগো ডিটেক্টরের ‘নজরে’ পড়েছে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। কিন্তু, তা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ওই তরঙ্গের হদিশ পাওয়ার ব্যাপারে একশো ভাগ নিশ্চিত হতে পারেননি বলে।

সেই ‘লাইগো-কনসর্টিয়াম’ এ বার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিশ্বের তিনটি জায়গা থেকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ কিছু আবিস্কারে’র ঘোষণা করতে চলেছে আগামী কাল, বৃহস্পতিবার। একই সঙ্গে সেই ঐতিহাসিক ঘোষণাটি হতে চলেছে ওয়াশিংটন, পুণে আর ইতালিতে। একেবারেই আনুষ্ঠানিক ভাবে, সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে।

দেখুন ভিডিও- মহাকর্ষীয় তরঙ্গ কী জিনিস

ভারতের পক্ষে এই সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় খুশির খবরটা কী?

ভারতে ‘লাইগো-কনসর্টিয়ামে’র প্রধান মুখপাত্র, পুণের ‘ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ (আয়ুকা)-এর অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মহাকাশবিজ্ঞানী তরুণ সৌরদীপ বলেছেন, ‘‘আমরা এখনও জানি না, কী ঘোষণা করা হবে। তবে সরাসরি মহাকর্ষীয় তরঙ্গের হদিশ গত একশো বছরে পাওয়া যায়নি। ১৯১৫ সালে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর চার বছরের মধ্যে তার বেশির ভাগ গাণিতিক পূর্বাভাসই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু পরোক্ষে প্রমাণিত হলেও, সরাসরি মহাকর্ষীয় তরঙ্গের হদিশ পাওয়াটা এখনও পর্যন্ত আমাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গিয়েছে। তাই সরাসরি মহাকর্ষীয় তরঙ্গের হদিশ মিললে আমাদের খুশির যথেষ্ট কারণ তো থাকবেই। তা ছাড়াও, আমাদের গর্বিত হওয়ার বড় কারণ, গত সেপ্টেম্বর থেকে আমেরিকায় ‘অ্যাডভান্সড্ লাইগো ডিটেক্টর’ কাজ শুরুর সময় থেকেই ওই প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় জড়িত রয়েছেন পাঁচ বাঙালি বিজ্ঞানী। রয়েছেন ‘আয়ুকা’র অধিকর্তা বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোমক রায়চৌধুরী, সুকান্ত বসু, সঞ্জিত মিত্র। আমিও রয়েছি। রয়েছেন আইআইটি গান্ধীনগরের অধ্যাপক আনন্দ সেনগুপ্ত। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণার জন্য আর যাঁর নাম করতে হয়, তিনি কলকাতার ‘আইসার’-এর ডিপার্টমেন্ট অফ ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ইন স্পেস সায়েন্সেসের বিশিষ্ট অধ্যাপক রাজেশ নায়েক।’’

পুণের ‘আয়ুকা’র অধিকর্তা জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোমক রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে, একশো বছর পরে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ একটা বড় মাইলস্টোনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।’’

সোমকবাবুর কথাটা আক্ষরিক অর্থেই, ইঙ্গিতবাহী!

অন্য বিষয়গুলি:

science physics bio logo water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE