৭২ বছরে অমিতাভ বচ্চন অনায়াসে সাইকেল চালিয়ে শ্যুটিং করছেন! হতে পারে এটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। তবে আধুনিক চিকিত্সা ব্যবস্থা, খাদ্যাভ্যাস, সংক্রমণ-সতর্কতায় বার্ধক্যও পিছু হটছে।
আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে বিচার করলে ৬৫-র আগে কাউকে ‘বৃদ্ধ’ তকমা দেওয়া যাচ্ছে না। এই ‘জেরিয়্যাট্রিক’ জনসংখ্যা তিন ভাগে ভাগ করা হয়। ৬৫ থেকে ৭৫ বছর, এই বয়সের মানুষেরা ‘ইয়ং জেরিয়্যাট্রিক’। ৭৫ থেকে ৮৫ ‘এলডার্লি জেরিয়্যাট্রিক’। ৮৫ বছর থেকে ‘ভেরি ওল্ড জেরিয়্যাট্রিক’।
মেনোপজের পরে অবশ্যই চাই ক্যানসার-সচেতনতা
৭০ বছরে যে সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করা, কোলেস্টরাল। তবে এ সব তো অল্প বয়সেও হয়। কিন্তু বেশি বয়সে এর প্রকোপ বাড়ে। এ ছাড়াও রয়েছে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেলিওর, বাত, অস্টিওপোরোসিস, চোখে ছানির মতো সমস্যার আশঙ্কা। আবার মহিলা ও পুরুষের রোগেরও ভেদাভেদ আছে। পুরুষদের প্রস্টেট, কোলোন ক্যানসার এবং মহিলাদের জরায়ু, ডিম্বাশয় ও স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা। ধূমপায়ীদের ফুসফুসে ক্যানসারের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার নয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মেনোপজের পরে প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতাও কমে যায় ‘ইনকনটিনেন্স অব ইউরিন’। কারও কারও সংক্রমণ, জ্বর-সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়ার প্রবণতাও বাড়ে।
মানসিক সমস্যা
ডিপ্রেশন। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এর প্রবণতা অনেক বেশি। অবসরের পরে একাকীত্ব, জীবনসঙ্গীর অসুস্থতা বা মৃত্যু... তার উপর এখন তো সব অণু পরিবার। ছেলেমেয়েরাও কাজ বা বিয়ের কারণে দূরে... সব মিলিয়ে সময়টা বড়ই নিঃসঙ্গতার। এই বয়সের আরও একটা সমস্যা হচ্ছে মস্তিষ্ক অনেক সময় শুকিয়ে যায়। ‘ডিমেনশিয়া’। যার একটা রূপ ‘আলঝাইমার’। বয়স যত বাড়বে আলঝাইমারের প্রকোপ বাড়বে।
কী ভাবে ভাল থাকা যায়
এক-খাবার: পুষ্টিকর খাবার। সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। রক্তে চিনি বা উচ্চ রক্তচাপ হলে খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। শাকসব্জি/ইসবগুল/ওষুধে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায়। শরীর বুঝে সবই খাবেন। তবে কিছুটা সংযম তো প্রয়োজন।
দুই-প্রতিষেধক ব্যবস্থা: যাঁদের সংক্রমণের প্রবণতা বেশি, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রবণতা বেশি, বা যাঁদের হাঁপানি আছে, তাঁদের টিকা নেওয়া উচিত।
ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা বছরে এক বার ও নিউমোনিয়ার টিকা জীবনে এক বার বা পাঁচ বছর অন্তর এক বার।
তিন-নিয়মিত ব্যায়াম: ব্যায়াম করা ভাল, তবে চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করে। যাঁর হার্টের অসুখ আছে, তিনি যদি খুব বেশি ছোটেন তা ঠিক হবে না।
তবে নিয়মিত ব্যায়াম, ট্রেডমিলে হাঁটা খুব জরুরি। দেহের পেশি ও হাড় ব্যায়ামের মাধ্যমে সতেজ থাকে ও স্ট্যামিনা রক্ষা পায়।
চার-চিকিত্সকের পরামর্শ: কোন ওষুধ খাবেন আর কী খাবেন না, দয়া করে নিজে সিদ্ধন্ত নেবেন না।
ভাল থাকার জন্য ৬০ থেকে প্রস্তুতি
নিয়মিত স্ক্রিনিং টেস্ট দরকার। অর্থাত্ কোনও অসুখ দেহে জাঁকিয়ে বসার আগেই তা ধরে ফেলা। পুরুষদের প্রস্টেটের জন্য পিএসএ। যাঁরা নিয়মিত ধূমপায়ী তাঁরা মাঝেমধ্যে ফুসফুসের এক্স রে করাতে পারেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাফি। তলপেটের আলট্রাসাউন্ড, প্যাপস্মিয়ার। প্যাপ থেকে সারভাইক্যাল ক্যানসার নির্ণয় করা।
তরুণ বন্ধু মন ভাল রাখে
বয়স বাড়ার সঙ্গে ভয়ঙ্কর সমস্যা ডিপ্রেশন। কারও কারও কাউন্সেলিং প্রয়োজন। খবরের কাগজ পড়া, রেডিও শোনা, টিভি দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া চালিয়ে যেতে হবে। মনটাকে সতেজ রাখতে হবে। তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে মেলামেশাও করতে হবে।
ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। নিজেকে আপডেটেড রাখতে হবে। আবার কখনও কখনও চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ দরকার। কারও অ্যান্টি-ডিপ্রেসান্ট ড্রাগ দরকার। কারও মস্তিষ্কের কোষগুলিকে তাজা রাখার জন্য ওষুধের দরকার। আর অবশ্যই দরকার মাঝে মধ্যে ছুটি কাটানো।
বয়স্করা মিলিত ভাবে ‘আনন্দ’ করুন
আমাদের দেশে জেরিয়্যাট্রিক পরিষেবা এখনও সেই ভাবে উন্নত হয়নি। বয়স্কদের ব্যস্ত রাখতে ও বিনোদনের জন্য অনেক কিছু করা যায়। যেমন, তাঁদের নিয়ে একটা দল তৈরি করা হল। এ বার সেই দল একসঙ্গে আলোচনা সভা করল, পথশিশুদের পড়াল, ছবি আঁকা শেখাল। সামাজিক সেবা থেকে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। সৃষ্টিশীল কাজে ডিপ্রেশন, একাকীত্ব কমে যায়।
সাধারণ সমস্যা মিটিয়ে জীবনকে সহজ করে নেওয়া যায়
কেউ হয়তো কানে কম শোনেন, এমন মানুষকে অনেকে এড়িয়ে চলে। তাঁকে একটা শ্রবণযন্ত্র দিলেই সমস্যা মিটে যায়। বা কারও চোখে ছানি হয়েছে। তা কাটিয়ে দিলেই সমস্যা মিটে যায়। এই সাধারণ সংশোধনটুকু করলেই তো জীবনের মান উন্নত হয়। দুঃখ ঘুচে যায়, হতাশা কমে যায়।
স্বাস্থ্য বিমা প্রয়োজন
আধুনিক চিকিত্সা ব্যয়বহুল। অনেক সময় হাসপাতালে চিকিত্সা করাতে গিয়ে অবসর জীবনের সব অর্থ খরচ করে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। তাই বিমা করিয়ে রাখা ভাল।
মেডিক্যাল ইচ্ছাপত্র
মৃত্যুর পরে চোখ বা কিডনি দান করতে চাইলে তার আগাম লিখিত নির্দেশ দিয়ে গেলে ভাল হয়। কী ধরনের চিকিত্সা চাই, যেমন ভেন্টিলেটরে দেওয়া হবে কি হবে না, তা লিখিত থাকলে পরিবারের জন্যও সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সেই ইচ্ছাপত্র করতে হবে। চিকিত্সকেরা তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ইচ্ছানুসারে চিকিত্সা করবেন।
যৌন জীবন
বিদেশে যৌন জীবন নিয়ে আলোচনা করলেও, আমাদের দেশে বয়স্করা এই নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। নারী ও পুরুষ উভয়েই হরমোন থেরাপির সাহায্যে যৌন জীবন উপভোগ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন চিকিত্সকের সঙ্গে আলোচনা না-করে কোনও থেরাপি কখনও নয়।
সাবধান থাকুন নিজেও
• শীতকাল এসে গিয়েছে। ঠান্ডা লাগাবেন না কোনও মতেই। অ্যালার্জি বা হাঁপানি থাকলে ইনহেলার নেবেন নিয়মিত
• বাথরুমের মেঝে যেন সব সময় শুকনো থাকে। এটি অত্যন্ত জরুরি। বাথরুমে পড়ে গিয়ে অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত মানুষটি চিরকালের জন্য বিছানাবন্দি হয়ে গিয়েছেন এমন ঘটনা প্রচুর আছে
• বাড়িতে সব সময় ব্যথা-অম্বল-গ্যাস-ঘুমের ওষুধ রাখা উচিত
• বাথরুমে যাওয়ার সময়, রাতে বিছানা ছেড়ে উঠলে বা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হাত ধরে সাপোর্ট নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy