প্র: ভিড়বাসে নামতে গিয়ে কোমরে প্রচণ্ড চোট। সেই অবস্থায় কী করব?
উ: এটা অনেকেরই হয়। অটো দুর্ঘটনাতেও কারও কারও হয়। কোমরের চোট মারাত্মক হতে পারে। ব্যথা বাড়তে থাকলে বাড়িতে কিছু না করে কাছের কোনও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে পরামর্শ নেবেন।
প্র: এই ব্যথা মারাত্মক বলতে?
উ: অনেক কিছুই হতে পারে। চোট স্পাইনাল কর্ডে লাগলে পা দুটো প্যারালিসিস হয়ে যেতে পারে। সঙ্গে ব্লাডারের কাজ বন্ধ হয়ে রোগীর স্বাভাবিক প্রস্রাব করার ক্ষমতা চলে যেতে পারে।
প্র: কোমরের চোট থেকে প্যারালিসিস?
উ: কোনও অ্যাক্সিডেন্ট বা উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে কোমরে মারাত্মক চোট পেলে এমনটা প্রায়ই হয়। চোট যত ওপরের অংশে হয়, সমস্যা তত বেশি হয়। ঘাড়ের কাছে আঘাত লাগলে দুই পা’য়ের সঙ্গে হাত দুটোও প্যারালিসিস হয়ে যেতে পারে।
প্র: প্যারালিসিস হলে তো হয়েই গেল। বাকি জীবনটা বিছানায়...
উ: না, তা নয়। এ সব ক্ষেত্রে আঘাত লাগার পর পরই অপারেশন বা ওষুধের পাশাপাশি রিহ্যাব চিকিৎসা শুরু করে দিতে হয়। তাতে প্যারালিসিস অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা বাড়ে।
প্র: রিহ্যাব চিকিৎসাটা তবে কি?
উ: এই যে হঠাৎ আঘাতে মাসলগুলো অকেজো হয়ে গেল, এটা শুধু ওষুধে ঠিক হয় না। তার সঙ্গে এক্সারসাইজ ও নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এক্সারসাইজ করিয়ে মাসলের জোর ফিরিয়ে আনা হয়। সঙ্গে নানা রকম কিটস আর ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করা হয়। তার সঙ্গে খুব হাই প্রোটিন খাবার খাওয়াতে হয়। এই পুরোটাই রিহ্যাব চিকিৎসা।
প্র: তার মানে তো ফিজিয়োথেরাপি? সেটা তো বাড়িতেই করা যায়?
উ: ফিজিয়োথেরাপি রিহ্যাবের একটা অংশ। রিহ্যাব আরও অনেক কিছু। এত সব বাড়িতে সম্ভব হয় না।
প্র: এতে আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যাবে?
উ: অনেকটাই। তবে নির্ভর করছে আঘাত কতখানি। আর সময়মতো ঠিকঠাক রিহ্যাব শুরু করেছিলেন কি না।
প্র: ঠিক সময়টা কখন?
উ: অপারেশনের পর দিন থেকেই রিহ্যাব শুরু করে দিতে হয়। অপারেশন না হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
প্র: অপারেশনের পরপরই? এতে অসুবিধে হবে না তো?
উ: না করলেই বরং অসুবিধে হবে। প্যারালাইজড হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা ওই ভাবে রেখে দিলে মাসল সরু হতে শুরু করে। রিহ্যাব করে স্বাভাবিক জিনিসটাকে বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। এই যে একটানা শুয়ে থাকতে হয়, তার জন্য অস্টিয়োপোরেসিস হতে পারে। তাতে রোগীর হাত-পা একটু টানলেই মট করে ভেঙে যেতে পারে। এ সব যাতে না হয় তার জন্যই রিহ্যাব। মস্তিষ্কে আঘাত লেগে কোমায় থাকলেও রিহ্যাব করতে হয়।
প্র: কোমাতে আবার রিহ্যাব?
উ: তাতে কী! চোখটাকে খুলে আলো দেখানো, গান শোনানো ইত্যাদি করে বাইরে থেকে স্টিমুলাস পাঠানো হয়। বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ তো আছেই। বেডসোর যাতে না হয় তার ব্যবস্থাও করা হয়। ওষুধ তো থাকেই।
প্র: তাতে রোগী কোমা থেকে ফিরে আসবেন?
উ: সেটা সঠিক বলা যায় না। তবে বাইরে থেকে স্টিমুলাস পাঠানোয় মস্তিষ্ক অনেক সময় সাড়া দেয়।
প্র: এমনিতে কত দিন ধরে রিহ্যাব করতে হয়?
উ: সেটাও নির্ভর করছে আঘাত কতখানি তার ওপর। মোটামুটি ভাবে পনেরো দিন থেকে দুই-চার মাস পর্যন্ত ভর্তি থাকতে হতে পারে।
প্র: এত দিন হাসপাতালে? বাড়িতে রিহ্যাব সম্ভব নয়?
উ: রিহ্যাবে একসঙ্গে অনেক সমস্যার মোকাবিলা করা হয়। এত সব একসঙ্গে বাড়িতে সম্ভব নয়।
প্র: সে তো হাত-পা’ প্যারালিসিস হয়ে যাওয়া। আর কী?
উ: একটানা শুয়ে থাকার জন্য রোগীর আরও পাঁচ রকমের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। যেমন পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। রক্ত না গললে পা বাদ পর্যন্ত দিতে হতে পারে। এ জন্য ওষুধের পাশাপাশি পায়ে একটা ইলাস্টিক স্টকিনেট পরিয়ে নানা রকম এক্সারসাইজ করাতে হয়। আবার ধরুন কারও কারও নতুন করে হাড় গজায়। তাতে রিহ্যাবের বারোটা বাজে। সেটা যাতে না হয় সেটাও খেয়াল রাখা হয়। আবার হঠাৎ করে এই শয্যাশায়ী হয়ে পড়াটাও মেনে নেওয়া রোগীর পক্ষে মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে সুইসাইডও করতে যান। তাঁকে এই জীবনের সঙ্গে মানসিক ভাবে মানিয়ে নেওয়ার জন্যও রিহ্যাবের দরকার।
প্র: মানে টিমওয়ার্ক?
উ: হ্যা।ঁ পুরোটাই টিমওয়ার্ক। রোগী কী সমস্যা নিয়ে এসেছেন, আর কী কী হতে পারে, সব দিক দেখেশুনে রিহ্যাবের প্ল্যান করা হয়। রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য যা যা দরকার, তাই করা হয় রিহ্যাবে।
প্র: ধরুন দেখা গেল কারও পা দুটো অকেজোই রয়ে গেল। তা হলে তিনি কী করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন?
উ: দুটো পা প্যারালিসিস হয়ে গেছে এই অবস্থায় রোগী এলে প্রথমেই রিহ্যাব চিকিৎসায় তাঁর হাতের জোর বাড়ানো হয়। যাতে পরে পা ঠিক না হলেও পায়ের কাজ খানিকটা হাত দিয়ে করতে পারেন। চলাফেরার জন্য হুইল চেয়ার ট্রেনিং দেওয়া হয়। একই ভাবে ব্লাডারের কাজ করার ক্ষমতা ফিরে না এলে তিনি যাতে নিজেই ক্যাথিটারের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন তার জন্য ক্যাথিটার ট্রেনিং দেওয়া হয়।
প্র: এরা কি পরে নিজের পেশায় যোগ দিতে পারেন?
উ: সেটা নির্ভর করে তিনি কী কাজের সঙ্গে যুক্ত। তবে রোগী কী কাজ করতেন রিহ্যাবের সময় সেটাও খেয়াল রাখা হয় ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাঁর সমস্যা বেশি, রিহ্যাবে তাঁকে বিকল্প পেশার জন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে উপযোগী করে তোলা হয়।
যোগাযোগ-৯০৫১৬০৩৪৩১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy