নাটকের নাম ‘নোলক রহস্য’। কিন্তু কোথায় রহস্য? সম্প্রতি থিয়েটার কমিউনের প্রযোজনায় মঞ্চস্থ নাটকটি বুঝতে সময় লাগে। অন্য দিকে নাটকের সময়সীমা অযথা দীর্ঘ হওয়ায় দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সান্যাল পরিবারের যুবক সমু। শৈশব থেকেই একটি ঘটনা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় তাকে। জন্মরহস্য। জন্মের পর মা-বাবা এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে জানতে পারে, তার মায়ের বিয়ের দিন থেকে পরা নাকের নোলকটি সে তিন মাস বয়সে টান মেরে ছিঁড়ে ফেলে। আর তাতেই মায়ের নাকের লতিটা ছিঁড়ে যায়। ছাত্রাবস্থাতেই সমুর মা মারা যান, কিছু দিন পরে বাবাও। এর পর থেকে ছোট কাকার আদর ও প্রশ্রয়ে বড় হতে থাকে সে। কিন্তু সমুর ধারণা তার মায়ের নোলক ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাটা মিথ্যে। যদিও বাড়ির সকলে এ ঘটনার জন্য তাকেই দায়ী করে। শুরু হয় সত্যের অনুসন্ধান। আর তাতেই রহস্যের জাল কেটে শেষপর্যন্ত বেরিয়ে আসে প্রকৃত সত্য।
নাটকের প্রথম পর্বে চলতে থাকে সেই অনুসন্ধান। প্রথম দৃশ্যে অবশ্য ছোটকা এবং বান্ধবী ঝিনুকের সঙ্গে নানা বিষয়ে সমুর কথপোকথন চলতে থাকে। নোলকের সঠিক রহস্য জানতে এর পর ডাক পরে সমুর ঠাকুমা হেমাঙ্গিনীর। তিনি আবার কানে ভাল শোনেন না। হেমাঙ্গিনীর চরিত্রে ছন্দা চক্রবর্তীর অভিনয় মনে রাখার মতো। তবে এই দৃশ্য অতি দীর্ঘ। নাটকের দ্বিতীয় পর্ব তুলনায় গতিময়। সমুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন নির্দেশক প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত। বয়স একটু বেশি হওয়ার কারণে যুবক চরিত্রে তিনি মানানসই নন। সে কারণে চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলতে অভিনয়ে খামতি না থাকলেও ঠিক বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে না। নাটকে সমুর বান্ধবী ঝিনুকের চরিত্রটি বেশ বুদ্ধিদীপ্ত। চরিত্রটির মনন ও চিন্তনের গভীরতা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তনুশ্রী চক্রবর্তী। অভিনয়গুণে ছোটকা (রবীন কুমার চৌধুরী) চরিত্রটিও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। সমুর বন্ধু সুব্রত (সম্বিত গুহ) চরিত্রের বয়সও কিছুটা কম হলেই ভাল হত। তবে সকলের অভিনয়ই যথাযথ।
শুরু থেকেই সম্পর্কের টানাপড়েন
‘চতুষ্কোণ’ নাটকে। লিখছেন মনসিজ মজুমদার।
ব্রাত্য কালিন্দীর বার্ষিক আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে স্থানীয় প্রযোজনা অনেক থাকলেও মূল আকর্ষণ ছিল অনেকগুলি বিদেশি বা ভারতেরই অন্য শহরের প্রযোজনা। দিল্লির নাটক চতুষ্কোণ অবশ্য কলকাতার বাংলা নাটক, (রচনা: ব্রাত্য বসু), হিন্দি অনুবাদে প্রযোজনা করছেন দিল্লির আকার কলাসঙ্গম (পরি: সুরেশ ভরদ্বাজ)। মূল বাংলা নাটক একটি চমৎকার ক্রাইম থ্রিলার। তিনটি পুরুষ ও একটি নারীর কাহিনি হলেও মঞ্চে কেবল তিনটি চরিত্র – নায়িকা, তার স্বামী ও দু-নম্বর প্রেমিক যাকে প্ররোচিত করে স্বামীকে হত্যা করতে যাতে পয়লা প্রেমিকের সঙ্গে তার মিলনের পথ সুগম হয়। নাটকের শেষে মঞ্চে পড়ে থাকে দুটি লাশ, নায়িকা ও তার স্বামীর। আর হত্যাকারী, প্রতারিত দু-নম্বর প্রেমিক, প্রতীক্ষা করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের জন্যে।
সরল পরকীয়া প্রেমের কাহিনি না হলেও নাটকের টেক্সটে সাংগাঠনিক ঋজুতা আছে এবং নাটক জমে ওঠার জন্যে চাই সুবদ্ধ টানটান প্রযোজনা। তিনটি চরিত্রের নাট্যগত টানাপড়েনের সূক্ষ্ম ঘাত-প্রতিঘাত।
এমনই ছিল এই নাটকের ২০০৪ সালের প্রথম বাংলা প্রযোজনা। আলোচ্য প্রযোজনায় সেই সাংগাঠনিক মসৃণতা মঞ্চে প্রতিভাত হয়নি। নায়িকার স্বামী অশিক্ষিত মদ্যপ, স্থূল রুচির এক নোংরা ধনী (ফিলদি রিচ) এবং তার পাশে তার প্রেমিক সংস্কৃতিমান মার্জিত রুচির যুবা। স্বভাবতই দর্শকমনের সহানুভূতি টেনে রাখার কথা নায়িকা ও তার প্রেমাসক্ত যুবার, যাতে নাটকের পরিণতিতে ওই নারী ও তার নেপথ্য নায়কের চক্রান্তের অভিঘাত তীব্র হয়।
চরিত্রগুলির ভূমিকায় কুশীলবেরা যথাযথ অভিনয় করেছেন সন্দেহ নেই কিন্তু দর্শকমনে প্রত্যাশিত নাটকীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেন নি। নায়িকা নিনার (নিধি মিশ্র) শঠতা, তার মদ্যাসক্ত স্বামী শেখরের (রমেশ মাঞ্চান্দা) লাম্পট্য এবং দু-নম্বর প্রেমিক সৌম্যের (অনুরাগ অরোরা) তারুণ্য, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক দীপ্তি, সব কিছুর অধিকাংশই অভিনয়ের অভিঘাতে নয় কাহিনিসূত্রে মঞ্চে ধরা দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy