সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অস্তিত্ব’ নাটকে উঠে এসেছে আদর্শ বিচ্যুতি থেকে রাজনীতি, একাকীত্বের যন্ত্রণা থেকে নিঃসঙ্গতা। প্রতিফলিত হয় নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও। সুব্রত দত্তের নির্দেশনায় অভিনীত এই নাটকে অষ্টাদশী কিশোরী ভ্রমর। যার মা পনেরো বছর ধরে কোমায় আচ্ছন্ন। সে কারণে শৈশব থেকেই মায়ের স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত সে। মাকে পুরোপুরি চেনা একটি অসমাপ্ত ডায়েরি আর টুকরো কিছু চিঠি পড়েই। বাবা নীলেশ বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদে কর্মরত। ব্যস্ত মানুষ। যৌথ পরিবার ভ্রমরদের। দাদু গগনবাবু, আদর্শবাদী প্রবীণ রাজনৈতিক কর্মী। এছাড়াও বাড়িতে আছেন অন্যরাও।
একটি দুর্ঘটনা দিয়ে নাটকের শুরু। যদিও সেই দুর্ঘটনার দৃশ্য বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে, পর্দার ওপার থেকে ভেসে আসা আর্তনাদ আর সংঘর্ষের শব্দ বেমানান। এই দৃশ্য নির্মাণে আলোর ব্যবহারেও আরেকটু যত্নবান হওয়া উচিত ছিল। এরপর একে একে মঞ্চে এসে হাজির হলেন চরিত্ররা। ভ্রমরের নিজের দাদা আকাশ ম্যানেজমেন্ট পাশ করে হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছে। ওর প্রেমিকা অন্বেষা স্কুলে পড়ায়। একসময় জানা যায় অন্বেষার মা-বাবা প্রথাগতভাবে বিয়ে করেননি। এ কথা প্রকাশ্যে আসা মাত্রই ভেঙে যায় বিয়ে, সম্পর্কও। হতাশা থেকে নিজের প্রেমিকাকেই ধর্ষণ করে বসে আকাশ। ভ্রমরের খুড়তুতো দাদা উগ্র স্বভাবের শৈবাল আদর্শহীন, রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে বিপরীত মেরুর রঙ্গন চিত্রশিল্পী। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। মৃত্যু যার দরজায় কড়া নাড়ছে। ভ্রমর ভালোবাসে রঙ্গনকে। কিন্তু কঠিন রোগের কারণে হারাতে হয় তাকে।
একাধিক ঘটনার সমাহারে নাটকটি ক্রমশ মূল লক্ষ্য থেকে সরে যায়। কিছু অসঙ্গতিও চোখ এড়ায় না। যেমন- রঙ্গনের মৃত্যুর পর তার ভালবাসার মানুষ ভ্রমরের মধ্যে শোকের ছায়া তেমন দীর্ঘতর হল না। তবে প্রত্যেকের অভিনয়ই যথাযথ।
ফাগুন রাতের গপ্পো
সার্থক শেক্সপিয়রের গল্প। লিখছেন দেবজিত বন্দ্যোপাধ্যায়
সাড়ে চারশো বছর পেরোলেও বিশ্ব জুড়ে আজও অটুট উইলিয়াম শেক্সপিয়র-এর দর্শক-চাহিদা। পরাধীন ভারতে ইংরেজ-বৈরিতার মধ্যেই নাট্য-দীক্ষাতে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির আদর্শ শিক্ষাগুরু। মহাকবিকে আদর্শ দ্রষ্টা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন গিরিশচন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথ। বিলিতি ছাঁদে নয়া গড়ন জুটল বাঙালি মননে। শেক্সপিয়রের ‘আ-মিড-সামার নাইটস্ ড্রিম’ অবলম্বনে সৌমিত্র বসুর ভাবানুবাদ ‘ফাগুন রাতের গপ্পো’। রবীন্দ্রভারতী থিয়েটার রেপার্টারি-র প্রযোজনায় এক সার্থক মঞ্চ-রূপান্তর। ভিক্টোরীয় যুগের বিলিতি বুলিতে গাঙ্গেয় কাদামাটির প্রলেপ পড়ে যেন বাংলা ভাষার সহজতায়। এমন স্বচ্ছ-সরল ভাষার কারিকুরিতে ধন্যবাদ পাবেন রূপান্তরী সৌমিত্র। নাট্যকাহিনিকে লোকজ উপাদানের মিশেলে, কখনও লালমাটিতে, কখনও সুন্দরবনের জংলি বাতাসে মায়াবী করে তুলেছেন নির্দেশক তরুণ প্রধান। লোক-নাট্যের আঙ্গিকে নাচ-গান-সংলাপে নির্দেশকের নিয়ন্ত্রণে মঞ্চ মাতিয়ে দেয় তরুণ অভিনেতার দল। তবু আলাদা করে বলতে হয় ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব দাস, সমরেশ বসুর প্রসঙ্গ। তবে একটা প্রশ্ন জাগে, যখন বঙ্গীকরণ-ই হল তখন বাঙালি সাজে নামগুলো কি পাল্টানো যেত না? গ্রামীণ বিয়ের গানে ‘লাজে রাঙার’ বদলে ‘লীলাবালি’ কি সমীচীন হত না? তবে শুভব্রত সিংহ রায়কে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। যার তত্ত্বাবধানে এমন মঞ্চায়ন সম্ভব হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy