পঞ্চাশ বছর আগের কথা।
কিংবা তারও বেশি।
শীতের দুপুরে মিঠেকড়া রোদ্দুরে পিঠ পেতে গল্পে মেতেছে বাড়ির বউরা। তাদের সঙ্গে হাজির প্রতিবেশিনীর দলও।
দঙ্গলে এক-আধটা বয়স্কা ভাসুরঝি ঠাকুরঝি থাকাও বিচিত্র নয়। মাঝে মাঝেই তুমুল হাসির ফোয়ারা ছুটছে।
আবার পরক্ষণেই সব ক’টা গলা নেমে যাচ্ছে খাদে। কাছাকাছি ঘুর ঘুর করছে বাড়ির কচিকাঁচা মেয়েরা। মা জেঠি কাকি পিসিদের টুকরো টাকরা কথা যদি একটুও ভেসে আসে কানে, এই আশায়। আড্ডার কারও চোখ পড়লেই কড়া ধমক। ওমনি সুড়ুৎ সাড়ুৎ পালাচ্ছে সেই মেয়েরা...
আহা, সেই ছবি এখন আর কোথায়!
বউরা রোজ রোজ একসঙ্গে জড়ো হবে কোত্থেকে, একান্নবর্তী পরিবারই তো ভেঙে খানখান।
বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরাও এখন আর তেমন কৌতূহলে ভোগে না। বড়দের রহস্যময় জগৎ আর মোটেই রোমাঞ্চিত করে না তাদের। কেনই বা করবে? ছোট ছোট নিউক্লিয়াস পরিবারে সবই তো এখন খোলামেলা। বাবা-মা’দের ভুবনের কী’ই বা রহস্য অবশিষ্ট আছে আর?
আমরা কিন্তু সত্যিই ছটফট করতাম ছোটবেলায়। কী নিয়ে এত হাসাহাসি করছে মা জেঠিমারা? এত ঢাকঢাক গুড়গুড়ই বা কীসের?
পরে বড় হয়ে জেনেছি, তাদের টপিক মোটেই নিরামিষ থাকত না সর্বদা। কার বর কাকে কী ভাবে আদর করতে ভালবাসে, কোন পুরুষকে দেখলে হৃৎপিণ্ডের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তাকে হাতের কাছে পেলে কে কী কাণ্ড করে বসবে... সবই ছিল সেই আসরে অবারিত।
সঙ্গে সোয়েটারের ডিজাইন তোলাও চলছে, আবার নতুন রান্নার রেসিপি শেখাচ্ছে কেউ, শাশুড়িনিন্দাও থেমে নেই, পাশাপাশি নরমগরম আদিরসের লহরীও বইছে সমানে।
আর একটা বিষয়ও আসত ঘুরে ফিরে, প্রায় সব মেয়ে-বউ মহলের মজলিশেই। কোনও এক বিশেষ মহিলার অবিশ্রান্ত নিন্দা।
আমার এক ঠাকুমা ছিলেন একটু অন্য ধাতের। বাইরের জগতে ছিল তাঁর অবাধ যাতায়াত, নিজের মেয়েদের নাচগান শিখিয়েছেন, কোনও পুরুষমানুষের সামনে লজ্জাবতী লতাটি হয়ে পড়া তাঁর স্বভাবেই ছিল না। পরেও দেখেছি, একটু বেশি বয়সে তিনি একা একাই বেরিয়ে পড়তেন দেশভ্রমণে। ট্রেনের কামরায় যে কোনও বয়েসের ছেলেদের ডেকে নিয়ে তিনি অনায়াসে ব্রিজ খেলতে বসে যেতেন। সেই কেয়ারফ্রি সুন্দরী ঠাকুমাকে নিয়ে কত যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে তখনকার মেয়েলি আড্ডায়।
এখন তার কারণটা স্পষ্ট বুঝতে পারি। পুরুষদের গড়া অবরোধে হাঁসফাঁস তখনকার মেয়ে-বউদের মনের গভীরে একটা ক্ষোভ তো ছিলই। আর আমার সেই ঠাকুমা ছিলেন সেই প্রথার বিরুদ্ধে একটি মূর্তিমান প্রতিবাদ। নিজেরা যা কখনও করতে পারেনি, পারবেও না, ঠাকুমা সেই কাজটিই করে চলেছেন অবলীলায়। দেখে বুঝি নিজেদের না-পাওয়ার ব্যথাটা অন্য একটা চেহারা নিয়ে ফুটে বেরোত মহিলা জমায়েতে। আবার ওই ঠাকুমাই ছিলেন তাদের সামনে মুক্তির আইকন। আর ওই নিন্দেমন্দ যেন প্রশংসারই ছদ্মবেশ।
আচ্ছা, ছেলেদের বেলায়ও কি এমনটা হয় না?
গড়পড়তা মানুষের চেয়ে যারা একটু ওপরে, তাদের চরিত্রে কালি ছিটিয়ে খুশির হিল্লোল কি বয় না ছেলেদের আড্ডায়? রাজা রামমোহনের উপপত্নী ছিল কিনা, রবিঠাকুর কী ভাবে মেয়েদের সঙ্গে লটঘট করতেন, বিদ্যাসাগরের বর্ণ পরিচয় লেখা স্রেফ একটা ব্যবসায়িক ধান্দা, সত্যজিৎ রায়ের কোন নায়িকার প্রতি একটা বিশেষ দুর্বলতা ছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কোন হিরোইনের সঙ্গে ইন্টুমিন্টু চালাচ্ছে...। এও তো অক্ষমতাপ্রসূত ঈর্ষা ছাড়া আর কিছু নয়।
তা হলে পুরুষালি আড্ডা আর মেয়েলি আড্ডার তফাত কোথায়?
আছে। আছে।
পুরুষমহলের আড্ডায় অজস্র ফাঁপা কথার তুবড়ি ছোটে, রাজাউজির মারা হয় অহরহ, সবজান্তা সেজে দুনিয়ার তাবড় বিষয়ে মতামত জাহির করার বিরাম নেই, হাস্যকর অজ্ঞানতা নিয়েও তর্ক জোড়ার উৎসাহ সীমাহীন।
স্বীকার করতেই হয়, সাদাসাপটা মেয়েলি আসরে এই প্রবণতা নেই বললেই চলে।
তা ছাড়া একটা ব্যাপারে পুরুষরা প্রবল গোঁড়া। অতি বড় চরিত্রহীনও তার বন্ধুবান্ধবদের আসরে বউয়ের সঙ্গে কোনও ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের প্রসঙ্গ আনে না। বউ যে তার একান্ত ব্যক্তিগত সম্পত্তি, মুখরোচক আলাপচারিতায় তার সেই অধিকারবোধ ক্ষুণ্ণ হতে পারে, এবং বউয়ের ইজ্জত তো যাবেই, সম্ভবত এই ভাবনাটা তাদের মনে জন্ম থেকেই পাকাপাকি ভাবে গেঁথে থাকে।
যদিও কোনও বন্ধুর গরহাজিরায় তার কনজুগাল লাইফ তথা বন্ধুপত্নীর রমণকুশলতার ব্যাখ্যান নাকি তাদের আড্ডাকে অনেক বেশি মুচমুচে করে তোলে। তুলনায় মেয়েরা বরং অনেক বেশি খোলামেলা। এবং হিপোক্রেসি মুক্ত। নিজের বরের দোষত্রুটি হোক কী প্রেম করার ধরনধারণ, কোনও গপ্পোই তাদের আড্ডায় নিষিদ্ধ নয়।
তবে হ্যাঁ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েলি আড্ডার ধারা অনেকটাই বদলে গেছে।
কিশোরীবেলার কথাই ধরি। স্কুলে আমাদের পাঁচ-ছ’জনের একটা ঘনিষ্ঠ বৃত্ত ছিল, ক্লাসটুকু ছাড়া সারাক্ষণ নিজেদের মধ্যেই মগ্ন থাকতাম আমরা।
সেই বৃত্তে পড়াশুনোর আলোচনা ছিল গৌণ, দেশ-কাল-সমাজ নিয়ে আমরা মোটেই ভাবিত ছিলাম না। তবু নিত্যনতুন বিষয় এসেই যেত নানা ভাবে।
এক বার আমাদের পাড়ার একটা মেয়ের ওপর মা কালীর ‘ভর’ হল, বেচারা মেয়েটা মৃগীরোগের কল্যাণে দেবী বনে গিয়ে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শেষমেশ বিনা চিকিৎসাতেই মরে গেল। কত দিন যে সে আমাদের আড্ডাকে মুহ্যমান করে রেখেছিল তার ঠিক নেই।
আবার আমাদেরই একজন হঠাৎ পড়ল এক প্রেমিকের পাল্লায়। পথে বেরলেই সেই প্রেমিক নাকি তাকে ঘিরে সাইকেলে চড়ে চক্কর মারে, আর প্রেমপত্র ছোড়ে। ব্যস, আড্ডা তখন সেই নিয়ে সরগরম।
একদিন চিঠির সঙ্গে একটা আধুলি ছুঁড়ে ছিল ছেলেটা। লিখেছিল, ‘যা হয় কিছু কিনিয়া খাইও।’ আড্ডায় সেই চিঠি পড়ে আমরা তো হেসে কুটিপাটি। সেই প্রেমিকের সঙ্গে কোনও দিন বাক্য বিনিময় হল না, কিন্তু আড্ডাকে সে বেশ কিছু দিন সপ্রাণ করে রাখল।
কার মা কত নিষ্ঠুর এই বিষয়টাও প্রায়শ ঢুকে পড়ত আড্ডায়। ক্লাস নাইনে লুকিয়ে লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার পড়ে ফেললাম, সেই নিষিদ্ধ ফল চাখার উত্তেজনায় ক’দিন মশগুল হয়ে রইল আমাদের আড্ডা। আধবুড়ো মেলর্স আর অভিজাত-ঘরনি কনস্ট্যান্ট ছাড়া আর তখন কোনও আলোচনাই নেই!
কেজো দুনিয়ায় পা রাখার পর অনেকটাই যেন বদল ঘটল আড্ডার চালে। প্রথম চাকরিতে ঢুকেছিলাম নিতান্তই অল্প বয়েসে। প্রাইভেট কোম্পানিতে।
সেই সময়, যখন কলকাতা শহরে ছ-ছখানা ঋতু আলাদা আলাদা ভাবে চেনা যেত, হেমন্তে একটা মনখারাপ করা বাতাস বইত, লেডিস ট্রামে যেতে যেতে তখন চাকরি বদলাবদলি করত মেয়েরা।
অফিসে আমার তিন বান্ধবী জুটেছিল একেবারে ভিন্ন গোত্রের। ক্রিস্টিন, ডোমা আর শার্লি। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, তিব্বতি আর চিনা। তারা একেবারেই বাঙালি মেয়েদের মতো আড়ষ্ট নয়, তাদের সঙ্গে আড্ডার অনেকটাই জুড়ে থাকত কোন কোম্পানিতে কেটে পড়তে পারলে কত টাকা মাইনে বাড়বে, কোথায় প্রমোশনের কতটুকু সম্ভাবনা। তার মধ্যেই আসত বয়ফ্রেন্ডের প্রসঙ্গ।
ডালহৌসি পাড়ায় জনের হোল-ইন-দি-ওয়াল জয়েন্টে চাউ-থুপকা সাঁটাতে সাঁটাতে আমাদের চার বান্ধবীর কিচিরমিচিরে আর একটা প্রসঙ্গ তো আসতই। বস। তার প্রতি দিনের মুড, কাকে কেন দাবড়াচ্ছে, কেনই বা তোল্লাই দিচ্ছে কারওকে, তাই নিয়েই চলত রসালো গবেষণা। টেলিফোন বোর্ড চালাতে চালাতে তখন সুযোগ পেলেই বসের ফোনও ট্যাপ করি, অবৈধ প্রেমিকার সঙ্গে তার শৃঙ্গাররসে ভরপুর কথোপকথন গিলে উগরে দিই আড্ডায়। উহ্, কী আজব উত্তেজনায় যে মশগুল থাকতম তখন!
সরকারি কিংবা আধা সরকারি অফিসে মেয়েলি আড্ডার চরিত্র আবার আরেক রকম। সেখানে চাকরি করতে গিয়ে দেখি, মেয়েরা একত্র হলেই শুরু হয় শ্বশুরবাড়ির উপাখ্যান। ত্যাঁদোড় ননদ, নিজের কোলে ঝোলটানা দেওর-ভাশুর-জা এবং অবশ্যই এক ভয়ংকরী শাশুড়িই তাদের ত্রিভুবন।
টপিক হিসাবে বরটিও আছে বটে, তবে খানিকটা যেন ত্রিশঙ্কু হয়ে। কোনও দিন তার শ্রাদ্ধ চলছে তো কোনও দিন তার প্রেমে শ্রীমতীটি ডগমগ। ননদ দেওররা তাও এক আধদিন ছাড় পেতে পারে, শাশুড়িকে খানিক গাল দিতেই হবে। শাড়িগয়নার ডিজাইন, বাচ্চার অসুখ কিংবা পড়াশুনো, অফিসে কার সঙ্গে কার রঙিন সম্পর্ক গজিয়ে উঠেছে, কে কে পরকীয়ায় মাতোয়ারা, আড্ডায় তাও আসত বইকী। কিন্তু শাশুড়ি নিন্দা ছাড়া সেই মেয়েলি আসর যেন অসম্পূর্ণ, ম্যাড়ম্যাড়ে।
এর একটা বিপরীত ছবিও আছে বইকী। কয়েকজন প্রবীণা একসঙ্গে হলে আড্ডার মূল বিষয় একটাই। বউ। সোনার চাঁদ ছেলেটিকে পরের ঘরের মেয়ে এসে কী ভাবে বেদখল করে নিল, তা নিয়ে কোরাসে দীর্ঘশ্বাস।
আর বউ যদি চাকুরে হয়, তো কথাই নেই। বউয়ের হাতে যে কত ভাবে শাশুড়িকে হেনস্তা হতে হয়, তার দৃষ্টান্ত দাখিল হয় ভূরিভূরি। সংসারে ক’টা পয়সা আনছে বলে ধরাকে কেমন সরা জ্ঞান করে, কুটোটি নেড়ে দু’খান করে না, টাইমে মহারানির মুখের সামনে ভাতের থালা ধরতে হয়, কখন অফিস থেকে ফিরছে জিজ্ঞেস করলেই কত মুখঝামটা শুনতে হয়... ফিরিস্তির শেষ নেই। তাদের শাশুড়িরা কী সাঙ্ঘাতিক দজ্জাল ছিল, তা সত্ত্বেও তারা কেমন মুখ বুজে অত্যাচার সয়েছে, সেই উপাখ্যানও বাদ যেত না। মেয়েলি মজলিশে এই একটা বিষয় যেন আবশ্যিক।
পতিচর্চা আর শাশুড়ি-বউয়ের দ্বন্দ্বই যেন আড্ডার প্রাণভোমরা। এক অধ্যাপিকা বান্ধবীর কাছে শুনেছি, তাদের স্টাফরুমের গুলতানিতেও বর আর শাশুড়ি মাস্ট।
ইদানীং অবশ্য শাশুড়ি-বউ দ্বৈরথ অত প্রকট নেই আর। বয়স্করা আজকাল ভাল শাশুড়ি হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বউরাও যথেষ্ট মধুরভাষিণী।
তবু নিজস্ব পরিমণ্ডলে আলটপকা দু-চারটে আগুনের ফুলকি ঠিকরে বেরোয় বইকি। শাশুড়ির মুখ থেকেও। বউয়ের মুখ থেকেও। মেয়েলি আড্ডার চাটনি!
ও হ্যাঁ, আর একটা টপিক তো আছেই মেয়েলি আড্ডার। কাজের লোক। কী রেটে তিনি কামাই করছেন, কত ভাবে তাকে তুইয়ে বুইয়ে চলতে হয়, দাবির কোনও শেষ নেই। দিয়ে থুয়েও মন পাওয়া যায় না, ফুড়ুৎ ফাড়ুৎ উড়ে যাচ্ছে অন্য ডালে...।
ও দিকে আবার কাজের মেয়েদের নিজস্ব কলকলানিতে নাগাড়ে চলছে গিন্নিদের তুলোধোনা। কোন গিন্নি কতটা মুখরা, কোন বাবুর নজর ভাল নয়, কোন বাড়ির বউ লুকিয়ে লুকিয়ে ঘরে নাগর ডাকে... এ রকম হরেক গল্পে ঝুড়ি তাদের বোঝাই।
আশ্চর্য, একটু নেড়েঘেঁটে দেখলে বোঝা যাবে, এই সব কাজের মেয়েদের টকঝাল বিষয়ের সঙ্গে প্রাইভেট কোম্পানির প্রমীলাকুলের আড্ডার কিন্তু তেমন কোনও ফারাক নেই।
আচ্ছা, এখন ফেসবুক টুইটারের যুগে এসে মেয়েলি আড্ডার ধাঁচ কি বদলছে একটুও?
আগে ছেলেরা মেয়েরা একসঙ্গে আড্ডা জমালেও কিছু কিছু অদৃশ্য লক্ষ্মণরেখা টানা থাকত, এখন তো সে সব বেবাক উধাও। স্পর্শকাতর দৈহিক ব্যাপার স্যাপার নিয়েও ছেলেদের সঙ্গে অবাধে আলোচনা চালায় মেয়েরা।
কিছু দিন আগে বাইপাসের এক শপিংমলের সামনে এক দল ছেলেমেয়ের কথা শুনছিলাম। কানে আসছিল আর কি। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে তিন অক্ষর, চার অক্ষরের যা তুবড়ি ছোটাচ্ছিল, বাপস্! দেখে মনে হয় আর বুঝি আলাদা করে মেয়েলি আড্ডার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। নাকি ওটা এক ধরনের দেখনদারি? আধুনিকতা প্রদর্শনের একটা কায়দা?
আমি জানি না।
তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত, মেয়েরা যতই ছেলেদের সঙ্গে অবাধে মিশুক, রাজনীতি সমাজনীতি নিয়ে তর্কে গলা ফাটাক, মেয়েদের নিজস্ব আড্ডার একটা আলাদা দুনিয়া আছে। থাকবেও। সংসার নিয়ে। নিজের বর ছেলেমেয়ে বাড়িঘর সমেত অজস্র দৈনন্দিন টুকিটাকিকে ঘিরে।
মুখে যতই বলা হোক না কেন, নারী পুরুষ হাতে হাত মিলিয়ে সংসার রচনা করে, কিন্তু আদতে কি তাই? যে অদৃশ্য বাঁধুনিশক্তি একটা সংসারকে ধরে রাখে, যার অভাবে একটা পরিবার পুরোপুরি পরিবার হয়ে উঠতে পারে না, সেই শক্তির কতটুকুই বা জোগায় ছেলেরা?
ঘর তো মেয়েরাই গড়ে। লালন পালনও করে মেয়েরাই। আবার সেই মেয়েকেই কাজের জায়গায় প্রতি পদে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়, সেটা তাদের আর একটা লড়াই। জীবিকার জন্য সে সংসারকে কতটা কম সময় দেবে, কিংবা সংসারের জন্য সে তার উচ্চাশাকে লাগাম পরাবে কিনা, এই টানাপড়েন তো মেয়েদেরই। ছেলেদের নয়। এখনও।
আর এই সব সমস্যা নিয়ে যে আড্ডা চলে, তা যে শুধু মেয়েদেরই, এও তো সত্যি। জীবনে উচ্চপ্রতিষ্ঠিত চার বান্ধবীকে জানি, যারা নিজেদের মধ্যে নিজেরা একটা আলাদা বৃত্ত রচনা করে নিয়েছে। তারা একসঙ্গে দেশেবিদেশে বেড়াতে যায়, প্রাণ খুলে হইচই করে আর মন খুলে নিজেদের জীবনের ঝাঁপি খুলে বসে। কত ঘাতপ্রতিঘাতের কথা, সংসার ভেঙে যাওয়ার গল্প, হাজারো পাওয়া, না পাওয়ার কাহিনি...। বর ছেলেমেয়ে হোক কিংবা অন্য পুরুষ, অথবা বোকো হারাম থেকে বৈতরণী, কিছুই তাদের আসরে অচ্ছুৎ নয়। এও তো এক মেয়েলি আড্ডা। মেয়েদের নিজস্ব পরিমণ্ডল।
যে আড্ডার ব্যাপ্তি পুরুষদের এঁকে দেওয়া জগতের চেয়ে ঢের ঢের বড়। অর্ধেক নয়, পুরো আকাশ জোড়া।
অলংকরণ: সুব্রত চৌধুরী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy