বাংলা হরফে লেখা এই সেই ঐতিহাসিক ঘড়ি
বউবাজারে ভীম চন্দ্র নাগের মিষ্টির দোকানে মিষ্টি খেতে এসেছেন। বিখ্যাত ঘড়ি কোম্পানি ‘কুক অ্যান্ড কেলভি’-র বড়সাহেব।
মিষ্টি খেয়ে তিনি মোহিত। এ কথা সে কথার পর বললেন, “বাবু, তুমি এত ভাল মিষ্টি বানাও, এত বড় দোকান তোমার। কিন্তু দোকানে একটা ঘড়ি নাই কেন!”
ভীম নাগ অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, “ওই আর কী, কেনা হয়ে ওঠেনি।”
সাহেব বললেন, “না না, তোমার দোকানে একটা ঘড়ি না থাকলে মানায় না। তুমি কালকেই আমাদের আপিসে লোক পাঠিয়ে দাও। আমি তোমাকে একটা দেওয়াল ঘড়ি উপহার দিতে চাই।”
নাগমশাই খুশি হয়ে বলেছিলেন, “বেশ কথা। কিন্তু সাহেব, আমার দোকানের কর্মচারীরা তো সবাই ইংরেজিতে লেখা সংখ্যা পড়তে পারবে না। আর তোমাদের সায়েবি কোম্পানি তো বাংলায় এক-দুই-তিন লেখা ঘড়ি বানায় না।”
কিন্তু ভীম নাগের মিষ্টির এমনই মাহাত্ম্য, খাস লন্ডন শহর থেকে বাংলা হরফে লেখা ডায়াল তৈরি হয়ে এসেছিল। সে ঘড়ি এখনও বউবাজারের দোকানের দেওয়ালে শোভা বর্ধন করছে এবং দিব্যি সময় দিচ্ছে। ঘড়ির মাঝখানে কুক অ্যান্ড কেলভি-র নামটাও বাংলাতেই লেখা, নীচে লেখা লন্ডন। সাহেবি পেইন্টারের আড়ষ্ট হাতে লেখা বাংলা, কিন্তু আসলে এক টুকরো ইতিহাস।
কুক অ্যান্ড কেলভি অব লন্ডনের শুরুটা কিন্তু কলকাতা শহরেই। ১৮৫৮ সালে রবার্ট টমাস কুক এবং চার্লস কেলভি কোম্পানিটার পত্তন করেন। “ওয়াচ, ক্লক অ্যান্ড ক্রোনোমিটারস মেকার টু হিজ এক্সেলেন্সি দ্য ভাইসরয় অ্যান্ড গভর্নর জেনারেল অব ইন্ডিয়া”।
ঘড়ির কেস আর ডায়াল তৈরি হয়ে আসত লন্ডন থেকে। মুভমেন্ট অবশ্যই সুইস। ইংলন্ড, ফ্রান্স, জার্মানি আর সুইৎজারল্যান্ডে তখন একের পর এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন ঘড়ি নির্মাতারা।
ভীম নাগের ঘড়ির গল্পটা শোনার জন্য ওঁদের বউবাজারের দোকান পর্যন্ত কিন্তু যেতে হয় না। যাঁরা পুরোনো ঘড়ির সংগ্রাহক, তাঁদের সবার এই ইতিহাস কণ্ঠস্থ।
ওঁরা খোঁজ রাখেন, কোথায় কোন ঘড়ি যত্নআত্তিতে সুখে আছে, কোন ঘড়ি অযত্নে, অনাদরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
খবর পেলে ওঁরা খুঁজেপেতে তাকে উদ্ধার করে আনেন। আবার কখনও এমন হয়, দুর্লভ কোনও ঘড়ি হাতের নাগালে এসেও হারিয়ে যায়।
বেলগাছিয়ার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী অমিতাভ সাহার ঘড়ির নেশা। শুরু হয়েছিল উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বেশ কিছু পকেট আর রিস্ট ওয়াচ এবং ম্যান্টেলপিস দিয়ে। তাদের প্রেমে পড়েই পুরোনো ঘড়ি সংগ্রহের খেয়াল মাথায় সওয়ার হয়েছে।
“পুরোনো ঘড়ি যদি অকেজো হয়, তা হলে প্রায় জলের দরে পাওয়া যায়। আর দুর্লভ কোনও ঘড়ি যদি সচল থাকে, তা হলে যে দামে কিনতে হয়, তাতে একটা ‘টু বিএইচকে’ ফ্ল্যাট হয়ে যায়”, হাসতে হাসতে বলেছিলেন অমিতাভবাবু। তা সত্ত্বেও রাত জেগে ই বে-র অনলাইন অকশনে পুরোনো ঘড়ি কেনার অভ্যেস ছাড়তে পারেননি।
আর শহরে কোনও পুরোনো ঘড়ি এলেও ঠিক খবর চলে আসে। একবার এরকমই পরিচিত একজন খবর পাঠালেন, একটা পুরোনো পকেট ঘড়ি হাতে এসেছে। তাঁর পুরোনো সোনা বেচাকেনার ব্যবসা ছিল। সোনার জিনিস গলিয়ে খাদ আলাদা করে সোনাটা বের করে নিতেন তিনি। সেই ব্যবসার সূত্রেই তাল তুবড়োনো আঠারো ক্যারেট সোনার ট্যাঁকঘড়িটা কেউ বিক্রি করে দিয়ে গিয়েছিল তাঁর কাছে। কিন্তু এত চমৎকার দেখতে সেই ঘড়িখানা, যে খুব মায়া হয়েছিল ভদ্রলোকের। ভেঙে টুকরো করে আগুনে দিয়ে দিতে হাত ওঠেনি।
সেই ঘড়ি দেখে অমিতাভবাবুর চক্ষু চড়কগাছ। ১৭৯০ সালের তৈরি একখানি ‘চেন সুইস রিপিটার’! সোনার দাম বাদ দিলেও, শুধুমাত্র ওই বিরল এবং মহার্ঘ প্রযুক্তির কারণে ঘড়িটি একেবারে দুর্মূল্য এক সম্পদ। ওই একবারই ঘড়িটি চোখের দেখা দেখেছিলেন অমিতাভ সাহা। ভদ্রলোক মারা যাওয়ার পরে অমিতাভবাবু আবার যখন খোঁজ করলেন, তখন আর ঘড়িটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভদ্রলোকের ছেলেরা অবশ্য জানতেনও না ওঁদের প্রয়াত পিতৃদেবের অমন মহা মূল্যবান একটি সংগ্রহ ছিল!
বেখেয়ালে রাখা ঘড়ি চুরি হয়ে যায় প্রচুর। শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রায় দু’দশক ঘড়িবাবু ছিলেন মিন্টু দে।
বাড়ির সবাই ডাক্তার, ওর একারই ঘড়িরোগ। কাকা ছিলেন রাজবাড়ির হাউস ফিজিশিয়ান। সেই সূত্রে ও বাড়ির ঘড়িদের সেবা-শুশ্রূষার ভার পেয়েছিলেন মিন্টুবাবু।
রোলেক্স, ওমেগা, টিসো থেকে শুরু করে অনেক কুলীন গোত্রীয় হাতঘড়ি তাঁর পরিচর্যায় থাকলেও মিন্টুবাবুর বিশেষ করে মনে আছে বিখ্যাত ‘সেট-টমাস’ কোম্পানির একটি চাইমিং ম্যান্টল ক্লকের কথা। প্রহরে প্রহরে সুরেলা ঘণ্টা বাজিয়ে সময় জানান দিত। রাখা থাকত রাজবাড়ির বৈঠকখানা ঘরে। এক নির্জন দুপুরে চুরি হয়ে যায় সেটি। এত বছর পরেও সে নিয়ে আফশোস যায়নি ঘড়িবাবুর।
কোথায় যায় এই সব চোরাই ঘড়ি? বিরাট বাজার রয়েছে বিদেশে। সঙ্গে সঙ্গে পাচার হয়ে যায়, বলছিলেন মিন্টুবাবু।
অবশ্য অনেক সময় এমনও হয় যে চুরি করল, তার কোনও ধারণাই থাকে না, ঘড়ির বাজারদর সম্পর্কে। দার্জিলিঙের এক কিউরিও শপ থেকে জলের দরে এমনই একটি ঘড়ি কিনে ফেলেছিলেন গড়িয়াহাটের রাজর্ষি সেনগুপ্ত। আঠারো ক্যারেট সোনায় মোড়া সেই ট্যাঁক-ঘড়ির চেন-এ বহুমূল্য চুনী-পান্না বসানো ছিল।
জহুরিকে দিয়ে যাচাই করানোর পর সেই ঘড়ি ঘরে রাখতে সাহস হয়নি। চলে গিয়েছে ব্যাঙ্কের ভল্টে। কিন্তু থেকে গিয়েছে ঘড়ি সংগ্রহের নেশা। পারিবারিক সূত্রে পাওয়া বেশ কিছু ‘কালেকটার্স’ আইটেম এখন রয়েছে রাজর্ষিবাবুর কাছে।
তবে পড়ন্ত বনেদিয়ানার এই শহরে যত পুরোনো ঘড়ি হাতবদল হয় তার অধিকাংশই পারিবারিক সূত্রে পাওয়া এবং অভাবের তাড়নায় বেচে দেওয়া।
এই অভিজ্ঞতা ভবানীপুরের ‘ক্যালকাটা ওয়াচ’-এর সঞ্জয় ভট্টাচার্যর। আটচল্লিশ বছর ধরে এই পেশায় আছেন।পুরোনো, অকেজো ঘড়ির পুনর্জীবনে তাঁর শহরজোড়া নামডাক। যদিও তিনি নিজে বিনয় করে বলেন, “না না, অনেকেই আছেন, যাঁরা আমার থেকেও ভাল কাজ করেন।”
কিন্তু বিরল থেকে বিরলতর প্রযুক্তির ঘড়ির প্রাণ ফেরাতে সঞ্জয়বাবু ধন্বন্তরীবিশেষ। যে সংগ্রাহকরা খোঁজ পেয়েছেন, তাঁরা তাঁকেই ধরে বসে আছেন। আর যাঁদের পরে আলাপ হয়েছে, তাঁরা আফশোস করেন, আহা, আরও আগে কেন খোঁজ পাইনি! তাহলে ঠাকুর্দার ওই ঘড়িটা বেঘোরে মারা যেত না। ধর্মতলার সেই বিখ্যাত দোকান যেটা সারানোর নামে দফারফা করে ছেড়েছিল!
“কিন্তু কাজটা আদৌ সহজ নয়, বরং ভীষণ শক্ত চ্যালেঞ্জ, কখনও কখনও প্রায় অসম্ভব”, বলছিলেন সঞ্জয়বাবু। কারণ, পুরোনো এবং ভাল ঘড়ি মানেই ওস্তাদ কারিগরের হাতে তৈরি। হ্যান্ড ক্রাফটেড। তার প্রতিটা লিভার, প্রত্যেকটি স্প্রিং যত্ন করে, ধরে ধরে হাতে তৈরি। যার দরুন প্রায়শই একই প্রযুক্তির, বা একই মডেলের দুটো ঘড়ির যন্ত্রাংশ একটা অন্যটার থেকে আলাদা। ফলে সেগুলো ভাঙলে, অকেজো হলে স্পেয়ার পাওয়ার প্রশ্নই নেই। মেরামত করাও যায় না। নতুন করে তৈরি করাতে হয়। নিখুঁতভাবে বানিয়ে নিতে হয়।
কলকাতা শহরে একটা সময় প্রায় প্রতিটি নামীদামি ঘড়ি পাওয়া যেত। কিন্তু বহু দিন বস্তুটি কেবলমাত্র বিত্তবানের হাতে বা পকেটেই শোভা পেয়েছে। ১৯৬৬-৬৭ সাল নাগাদ সব থেক সস্তা হাতঘড়ি ছিল অ্যােংলা সুইস, ১০০ থেকে ১২৫ টাকা। এর পরের ধাপে ছিল সুইস প্রতিষ্ঠান ফাভ লিউবার ঘড়ি, ১৫০-২০০ টাকা। এটা সেই সময়, যখন পদস্থ সরকারি চাকুরেদের মাসিক বেতনই হত কুল্যে শ’দুয়েক টাকা।
আর বরাবরই প্রথম সারিতে থেকেছে টিশো, ওমেগা আর রোলেক্স। টিশোর দাম ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ওমেগা সি-মাস্টার পাওয়া যেত সাড় পাঁচশো ছশো থেকে হাজার এগারোশোর মধ্যে। ওমেগার কনস্টেলেশন ক্রোনোমিটার-এর দাম ছিল পনেরোশো টাকা। সব থেকে মহার্ঘ ছিল রোলেক্স পারপেচুয়াল ডেটজাস্ট, ২৯০০ টাকা। ভারতে রোলেক্সের এজেন্ট ছিল কুক এ্যন্ড কেলভি, এখনও আছে। তখন কলকাতা ছাড়া কুক অ্যান্ড কেলভির শাখা ছিল দিল্লি আর লাহোরে।
ঘড়ির ব্যবসায়ে দিল্লি, বম্বের নাম অনেক পরে যোগ হয়েছে। ১৮ শতক জুড়ে কলকাতারই বোলবোলাও। তার পর ছিল হায়দরাবাদ, যেখানকার নিজামদের ঘড়ির শখের কিছু নমুনা এখনও আছে সালার জং মিউজিয়ামে। ফাভ লিউবার নিজস্ব দপ্তর ছিল হায়দরাবাদে। অবশ্য কুক অ্যান্ড কেলভি সিমলাতেও ওমেগার দোকান খুলেছিল, যেখানে গরমের ছুটি কাটাতে সপার্ষদ এবং সপরিবারে যেতেন খোদ বড় লাটসাহেব।
১৮ শতকের শেষ পর্যন্ত কলকাতায় তাবড় সব ব্রিটিশ, ফরাসি আর সুইস ঘড়ি কোম্পানি ছিল। তাদের কলকাতার মেরামতিশালায় কাজ করতেন ও সব দেশ থেকে আসা দক্ষ কারিগরেরা। এদেশীয় কারিগরেরা সবাই সরাসরি তাঁদের থেকে কাজ শিখেছিলেন। ওমেগার কলকাতার কারখানায় যেমন এক সুইস মহিলা কারিগর ছিলেন, যাঁর দক্ষতা ছিল কিংবদন্তিপ্রায়। তিনি হাতে ধরে এদেশের অনেক ঘড়িমিস্ত্রিকে কাজ শিখিয়েছিলেন।
এঁরা বেশির ভাগই নিম্ন মধ্যবিত্ত হিন্দু বাঙালি পরিবার থেকে আসা ছেলেপুলে, যাদের পড়াশোনা বেশি দূর ছিল না। কিন্তু প্রায় কিশোর বয়স থেকে কাজ শিখতে শিখতে, হাতেকলমে কাজ করতে করতে এঁরা অনেকেই ওস্তাদ হয়ে উঠেছিলেন। সেই কারিগরি বিদ্যে তার পরেও বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে হাতবদল হয়েছে।
আর এখন কাজ জানা লোক প্রায় পাওয়াই যায় না। তবু জোড়াতালি দেওয়া একটা ব্যবস্থা চালু আছে। এখনও সারাতে আসে রোলেক্স প্রিন্স, যেটা এক সময় ছিল বড়লোক বাঙালির বিয়ের ঘড়ি। এখন দাম লাখ ছয়েক টাকা। বিলেতে রোলেক্সের নিজের কারখানায় সারাতে গেলে সাত-আটশো পাউন্ড চেয়ে বসে। লন্ডনে পাঠানো, ফেরত আনার খরচ আলাদা। কলকাতায় সেই কাজটাই হাজার পাঁচেক টাকায় হয়ে যায়।
“তবে ভাল ঘড়ি যত্ন করে রাখলে অক্ষয়, অমর। বছরের পর বছর ঠিক থাকে। নির্ভুল সময় দেয়”, বলছিলেন অমিতাভ সাহা।
অবশ্য অযত্নে অকেজো ঘড়ি সারাইঘরে নবজন্ম পেয়েছে, এমন নজিরও আছে। সাহা বাড়ির ১৯১২-১৩ সালে তৈরি একখানি টাইমপিস বার বার পড়ে গিয়ে চোট পেতে পেতে এক সময় দেহ রেখেছিল। ১৯৫০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ঘড়িটা বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল।
মেরামতির পর সে ঘড়ি আবার চলছে নিখুঁত ছন্দে। গ্র্যান্ডফাদার ক্লকগুলো একবার অয়েলিং করালে ষাট-সত্তর বছর নাকি আরামসে চলে। পকেট আর হাতঘড়িগুলো দেড়শো-দুশো বছর বিনা ঝঞ্ঝাটে টিকটিকিয়ে যায়। আজকের কোয়ার্টজ যুগে এসব শুনলে মনে হয় গল্প।
তবে বিলিতি ঘড়ি সারানোর বিদ্যেটা এই শহরে আদৌ কত দিন টিকে থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ, একে ওস্তাদ কারিগরের সংখ্যা ক্রমশই কমছে। দ্বিতীয়ত, পুরোনো ঘড়ির যে কোনও মেরামতিই খরচসাপেক্ষ। কখনও কখনও একটা ঘড়ি সারাতে কমপক্ষে পাঁচ-সাত হাজার টাকা খরচ হয়। সবার সে সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু এই কাজটা আবার এমনই যে, কেউ খরচ দিতে পারবেন না বলে একটা অসাধারণ মাস্টারপিস অকেজো হয়ে পড়ে থাকবে, সেটাও গায়ে লাগে। ফলে এমনও হয়েছে যে পনেরোশো টাকা বিল হয়েছে, কিন্তু খদ্দেরের থেকে নিয়মরক্ষায় দেড়শো টাকা নিয়েছে ক্যালকাটা ওয়াচ।
কী ঘড়ি ছিল সেটা?
প্রশ্নটা শুনে ম্লান হাসলেন ক্যালকাটা ওয়াচের সঞ্জয় ভট্টাচার্য। পেরিগাল রিপিটার। যে ঘড়ির কথা সত্যজিৎ রায় মশাই তাঁর ফেলুদার গল্পে লিখেছিলেন। পকেট ওয়াচ, যার কেসের ধারে একটা বোতাম থাকে। ডালাবন্ধ অবস্থায় বোতামে চাপ দিলে মৃদু আওয়াজে ঘড়ি জানান দেয় ক’টা বেজেছে। প্রথমে ঘণ্টা, তারপর কোয়ার্টারের চাইম।
ক্যালকাটা ওয়াচে যে বৃদ্ধ ভদ্রলোক স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রিপিটারটা সারাতে এনেছিলেন, সুপুরুষ সেই মানুষটির আদবকায়দা, তাঁর হাবভাব বুঝিয়ে দিচ্ছিল, তিনি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত বংশের কেউ। তাঁর সাজপোশাকের মালিন্য থেকে এটাও বোঝা যাচ্ছিল যে তাঁর খুব আর্থিক দুর্দশা চলছে। ঘড়িটা তিনি সচল করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একটু বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে।
কোন পরিবারের লোক তিনি? জানতে চাননি?
“নাহ্।” মাথা নাড়েন সঞ্জয়বাবু। “যদি কিছু মনে করতেন....।”
বছর কুড়ি আগের এক সন্ধেয়, শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে গিয়েছিলেন অজ্ঞাতপরিচয় সেই দারিদ্রপীড়িত মানুষটি, যার পকেটে ছিল রাজৈশ্বর্য!
প্রাণে ধরে ঘড়িটা বিক্রি করতে পেরেছিলেন কি শেষ পর্যন্ত? কে জানে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy