Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ঋণখেলাপির তালিকা: রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের কাছে উত্তর তলব করল তথ্য কমিশন

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কেন ঋণখেলাপিদের নাম এখনও প্রকাশ করেনি, গভর্নর উর্জিত পটেলের কাছে তা জানতে চাইল কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন। শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধারকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা, কেন সর্বোচ্চ অঙ্কের জরিমানা তাঁকে করা হবে না, ১৬ নভেম্বরের মধ্যে তা জানান পটেল।

উর্জিত পটেল

উর্জিত পটেল

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫৬
Share: Save:

একই বাণে বিদ্ধ ‘যুযুধান’ দুই পক্ষ।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কেন ঋণখেলাপিদের নাম এখনও প্রকাশ করেনি, গভর্নর উর্জিত পটেলের কাছে তা জানতে চাইল কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন। শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধারকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা, কেন সর্বোচ্চ অঙ্কের জরিমানা তাঁকে করা হবে না, ১৬ নভেম্বরের মধ্যে তা জানান পটেল।

অনুৎপাদক সম্পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি যাদের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘লড়াই’ তুঙ্গে, সেই কেন্দ্রীয় সরকারকেও একই রকম প্রশ্নের মুখে ফেলেছে তথ্য কমিশন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং অর্থ মন্ত্রকের কাছেও জানতে চেয়েছে যে, প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন বড় অঙ্কের ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে পাঠানোর এত দিন পরেও কেন তা সামনে আনা গেল না?

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে এমন নোটিস অবশ্যই চোখে পড়ার মতো। বিশেষত খোদ তথ্য কমিশনার যেখানে মনে করছেন, গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর জনসমক্ষে তথ্যের অধিকার সম্পর্কে যা বলেন তার সঙ্গে বাস্তবের ফারাক বিস্তর। কিন্তু সব কিছুর পরেও এই নির্দেশে কেন্দ্রের অস্বস্তিই বেশি বাড়ার সম্ভাবনা। কারণ, ভোটের মুখে খেলাপিদের নাম সামনে এলে, তাঁদের রাজনৈতিক যোগাযোগের শিকড়ের খোঁজও শুরু হবে। আক্রমণ শানাবেন বিরোধীরা।

আরও পড়ুন: আমাদের থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের দান নিয়ে মূর্তি বানাচ্ছ? ফুঁসছে ব্রিটেন

অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তথা তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই নাম প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। এতে তা মান্যতা পেল।’’ আবার যে এস্টিমেটস কমিটির কাছে রাজন প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে চিঠি লেখার কথা জানিয়েছিলেন, তার সদস্য তথা সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘ঋণ খেলাপ থেকে শুরু করে বৃদ্ধির হার— এই সরকার সমস্ত ঠিক তথ্যই চাপা দেওয়ার পক্ষপাতী। তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠানকে কব্জা করার চেষ্টা।’’

পাহাড়প্রমাণ অনাদায়ি ঋণের সমস্যায় এখনও ধুঁকছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। দেশছাড়া বিজয় মাল্য, নীরব মোদীর মতো অভিযুক্তেরা। এই পরিস্থিতিতে ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি অঙ্কের ঋণখেলাপিদের নাম রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে প্রকাশ করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তা না-করার জন্যই পটেলকে বিঁধেছে কমিশন। বলেছে, যারা কোটি-কোটি টাকা ধার শোধ না-দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের আড়াল করা প্রয়োজন বলে মনে করে না তারা। কমিশনার শ্রীধর আচার্যলুর কথায়, অন্তত এ প্রসঙ্গে তিন লক্ষ আত্মঘাতী চাষির কথা মনে করুন গভর্নর। সামান্য কিছু টাকা শোধ দেওয়ার জন্য যাঁদের জলের দরে ফসল বেচতে হয়েছে এবং তাতেও না-পারলে বেছে নিতে হয়েছে আত্মহত্যার পথ।

মুরলীমনোহর যোশীর নেতৃত্বাধীন এস্টিমেটস কমিটিকে রাজন জানিয়েছিলেন, গভর্নর থাকাকালীন বড় মাপের ব্যাঙ্ক প্রতারণা মামলার একটি তালিকা তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়েছিলেন। অন্তত দু’এক জন প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। মনমোহন সিংহ এবং নরেন্দ্র মোদী,

দুই প্রধানমন্ত্রীর আমলেই গভর্নর ছিলেন রাজন। কিন্তু তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমি গভর্নর থাকাকালীন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রতারণা নজরদারি শাখা তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরকেও ‘হাই প্রোফাইল’ প্রতারণার মামলার তালিকা পাঠানো হয়।’’ তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ওই নজরদারি শাখা তৈরি হয়েছিল। যার অর্থ, তার পরেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে তালিকা পাঠানো হয়েছে। কংগ্রেসেরও অভিযোগ ছিল, নরেন্দ্র মোদীর দফতরে পাঠানো ওই তালিকায় নীরব মোদী-মেহুল চোক্সীদের নাম রয়েছে। ফলে কমিশনার সেই চিঠি প্রকাশ করতে বলায় কেন্দ্রের অস্বস্তি আরও বাড়ার সম্ভাবনা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE