Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

মোবাইল, ব্যাঙ্কে আধার বাধ্যতামূলক নয়, রায় সুপ্রিম কোর্টের

আধার-এর বিরুদ্ধে সব থেকে বড় অভিযোগ ছিল, এর সাহায্যে আম নাগরিকের উপরে নজরদারি চালাতে পারে সরকার। কারণ, স্কুল-কলেজ-অফিস, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল— সব কিছুর সঙ্গেই আধার জুড়তে বলা হচ্ছে

প্যান ও আয়কর রিটার্ন ফাইলে আধার দরকার হবে।

প্যান ও আয়কর রিটার্ন ফাইলে আধার দরকার হবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৭
Share: Save:

আধার ব্যবস্থা চালু রাখার পক্ষেই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু যেখানে যেখানে আধারকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলানো বা নজরদারি করা যেতে পারে, সেই রাস্তাগুলি বন্ধের চেষ্টা করল সর্বোচ্চ আদালত।

আধার-এর বিরুদ্ধে সব থেকে বড় অভিযোগ ছিল, এর সাহায্যে আম নাগরিকের উপরে নজরদারি চালাতে পারে সরকার। কারণ, স্কুল-কলেজ-অফিস, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল— সব কিছুর সঙ্গেই আধার জুড়তে বলা হচ্ছে। কেউ কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, সে সবের তথ্যভাণ্ডার তৈরি হয়ে যাচ্ছে অজান্তেই।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের আধার আইনে বলা ছিল, জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি দেখিয়ে তদন্তকারী সংস্থা আধার তথ্য চাইতে পারে। আজ ওই ধারাটি খারিজ করে বিচারপতিরা বলেছেন, এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি চাইতে হবে। সেখানেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শুনতে হবে। কোনও বেসরকারি সংস্থাও আধার নম্বর চাইতে পারবে না। তা সে বেসরকারি ব্যাঙ্কই হোক বা মোবাইল পরিষেবা সংস্থা। আর্থিক নয়ছয় আইন সংশোধন করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আধার বাধ্যতামূলক করেছিল কেন্দ্র। এটিও ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করেছে কোর্ট। তবে প্যান ও আয়কর রিটার্ন ফাইলে আধার দরকার হবে। কেন্দ্রকে বলা হয়েছে অনুপ্রবেশকারীর হাতে আধার পৌঁছনো রুখতে।

আরও পড়ুন: আধার-তথ্য কতটা সুরক্ষিত, সংশয় থাকছেই

এই সব শর্ত চাপিয়েই প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ আধারকে ‘সাংবিধানিক ভাবে বৈধ’ বলে ১,৪৪৮ পৃষ্ঠার রায় দিয়েছে। তবে পাঁচ বিচারপতির মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড় পৃথক রায়ে বলেছেন, আধার অসাংবিধানিক। কারণ তা ব্যক্তিপরিসরে হস্তক্ষেপ করে। আধার মামলার শুনানির সময়ে কেন্দ্র বলেছিল, নাগরিকের ব্যক্তিপরিসরের অধিকার নেই। ৯ বিচারপতির বেঞ্চ ব্যক্তিপরিসরের অধিকারকে সাংবিধানিক অধিকারের স্বীকৃতি দেয়। আজ প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি এ কে সিক্রি এবং বিচারপতি এ এম খানউইলকর একজোট হয়ে রায় দিয়েছেন, ব্যক্তিপরিসরে নাক গলাচ্ছে না আধার। কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করে আলাদা রায় লিখলেও বিচারপতি অশোক ভূষণ মোটের উপরে অন্য তিন বিচারপতির পক্ষে। ফলে বেঞ্চে ফল দাঁড়িয়েছে ৪:১।

চার মাসের ৩৮ দিন ধরে শুনানি। মূলত পাঁচটি প্রশ্নে আধার-এর বিরোধিতায় ৩১টি মামলা হয়েছিল। এক, রাষ্ট্র নজরদারি করতে পারে। দুই, সরকারি ভাতা বা ভর্তুকি যথাযথ উপভোক্তার কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্যে আধারের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সর্বত্র আধার নম্বর চাওয়ায় অজান্তেই তথ্যভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে। তিন, সংসদে কেন্দ্রের আধার আইন পাশ করানোর প্রক্রিয়া নিয়েও আপত্তি উঠেছিল। চার, বায়োমেট্রিক তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পাঁচ, প্রযুক্তিগত সমস্যা। আঙুলের ছাপ না-মিললে কেউ রেশন বা ভাতা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। আধার না-থাকায় অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগ অনেক। সব ক’টি মামলা একত্র করে শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে।

বেঞ্চে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় ঘোষণা করে বিচারপতি সিক্রি বলেন, ‘‘সেরা হওয়ার থেকে অদ্বিতীয় হওয়া ভাল। কিছু মানুষ বাদ পড়ে যাচ্ছেন বলে বহু প্রান্তিক মানুষ যে আধারের সুবিধা পাচ্ছেন, তা অস্বীকার করা যাবে না।’’ তাঁদের মতে, আধার খুব সামান্য তথ্যই সংগ্রহ করছে। তবে আধার না-থাকলে কাউকে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

আধার-তথ্য চুরি বা অন্য কোনও অভিযোগ থাকলে এত দিন শুধু আধার কর্তৃপক্ষই পুলিশে যেতে পারতেন। এ বার থেকে যে-কেউ তা পারবেন। আধার দিয়ে কেউ কোথাও পরিচয় প্রমাণ করলেও সেই তথ্য ছ’মাসের বেশি জমা রাখা যাবে না। ফলে তৈরি হবে না স্থায়ী তথ্যভাণ্ডারও।

বাধ্যতামূলক নয়

• মোবাইল-আধার যোগ

• ব্যাঙ্ক-আধার যোগ

• সিবিএসই, এনইইটি, ইউজিসি-র পরীক্ষায়

• স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে

• শিশুদের জন্য প্রকল্পে

• চাইতে পারে না বেসরকারি সংস্থাগুলিও

বাধ্যতামূলক

• প্যান কার্ড করাতে গেলে

• আয়কর রিটার্নে, কারণ প্যান-আধার যোগ জরুরি

• সরকারি ভর্তুকি

• বৃত্তির সময়ে চাইতে পারে সরকার

অন্য বিষয়গুলি:

Aadhaar Card Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE