কী এমন থাকে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবিতে? ছবি: সংগৃহীত
‘অ্যাকসিডেন্ট’ এখনও হয়। বাংলা ছবি মাঝেমাঝে ‘হিট’ হয়। দর্শক লাইন দিয়ে ছবি দেখতে যান।
এই বিরল ঘটনার পিছনে রয়েছে দুটি নাম— শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়।
শিবু-নন্দিতা মানেই হাউসফুল। শিবু-নন্দিতা মানেই ভিড় শুধু কলকাতায় নয়, মফস্সলেও। আর অন্য প্রযোজকরা তাজ্জব হয়ে শুধু বোঝার চেষ্টা করেন, কেন এই পরিচালক জুটির ছবি বার বার হিট করে যায়!
কী এমন থাকে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবিতে? গল্প সাদামাটা। মা-ছেলের গল্প, বয়স্ক দম্পতির গল্প, বাচ্চা ছেলেমেয়ের গালে চুমু খাওয়ার গল্প। আসল ম্যাজিক কিন্তু এই গল্প বাছাইতেই। কী করে গল্প বাছাই হয় পরিচালকদ্বয়ের? রোজকার জীবনে যে কোনও গল্প বা যে কোনও খবরের অংশ, যা শিবপ্রসাদের মনে ধরে, সেটা তিনি নন্দিতাকে জানান। নন্দিতা তার মধ্যে বেশির ভাগই নাকচ করে দেন— ‘‘ধুর! এই দিয়ে সিনেমা হয় নাকি?’’
শিবপ্রসাদ তখন নন্দিতাকে আশ্বস্ত করার জন্য আরও নানা রকম তথ্য, খবরের লিঙ্ক পাঠাতে থাকেন। বিজ্ঞাপন জগৎ থেকে আসা শিবপ্রসাদ নিজের ‘আইডিয়া’ কী ভাবে বিক্রি করতে হয় ভালই জানেন। যদি কোনও কাহিনি নন্দিতার পছন্দ হয়, সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু হয়। দু’জন মানুষ একসঙ্গে কাজ করলে মতের অমিল, মনোমালিন্য, মান-অভিমান হওয়ার অবকাশ অনেক বেশি থাকে। কিন্তু ২৩ বছর একসঙ্গে কাজ করার পরেও শিবপ্রসাদ-নন্দিতার মধ্যে তেমন খুব একটা দেখা যায়নি। দু’জনের মধ্যে কে কোন কাজটা করবেন, তা আগে থেকেই আলাদা করা রয়েছে। এক জন চিত্রনাট্য লিখলে আরেক জন সংলাপ বসান। কেউ শ্যুটিং ফ্লোর দেখলে অন্য জন মনিটরে বসেন। এক জনের দায়িত্বে সঙ্গীত থাকলে সম্পাদনার ভার নেন অন্য জন। আর তার মধ্যেও কোনও দ্বন্দ্ব বাধলে তা তাঁরা তখনই মিটিয়ে ফেলেন। শিবপ্রসাদের কথায়, ‘‘আসলে দিদি (নন্দিতা) আমার চেয়ে ১৯ বছরের বড়। হয়তো সেই কারণেই কোনও ইগোর লড়াই সে ভাবে হয় না।’’
গল্প বাছাই না হয় হল। চিত্রনাট্য তৈরি হল। সংলাপও বসল তাতে। কিন্তু শুধু গল্প থাকলেই তো হবে না। কোন গল্প কখন বলতে হবে, তা-ও বোঝা প্রয়োজন। ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিতের ‘কামব্যাক’ ছিল ‘প্রাক্তন’-এর মূল আকর্ষণ। তার পরের ছবির পোস্টারে কোনও তারকা নেই! রয়েছে দুটো ছোট বাচ্চা বা একটা টিফিন বক্স! ইন্ডাস্ট্রির লোকে পইপই করে বারণ করেছিল সে সময়ে ‘হামি’ রিলিজ করতে। সকলেরই মনে হয়েছিল, ছবিটা মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু শিবপ্রসাদ দেখেছিলেন, সেই সময়ে শহরের এক স্কুলে একই রকম ঘটনা কী মারাত্মক ভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে। তা দেখেই ছবির ভাবনা মনে আসে তাঁর। তাই তিনি ছবির মুক্তি পিছিয়ে দেওয়ার কথা ভাবেননি। ‘‘গল্পের উপর ভরসা থাকলে আর কিচ্ছু লাগে না। আমি যদি জানি আমার কাছে কী রসদ আছে, তখন বাকি সব কিছু গৌণ হয়ে যায়। ছবিতে কী দেখাতে চাইছি, সেটাই আসল। পোস্টারে বড় তারকার মুখ দিয়ে ভরিয়ে দিলাম, এ দিকে ছবির ফোকাস অন্য, তা হলে দর্শককে হলে টানব কী করে?’’
তবে একটি সুবিধা আছে। গত কয়েক বছর দর্শক ছবি দেখতে যান পরিচালকের নামেই। হল ভরে সৃজিত মুখোপাধ্যায় বা শিবু-নন্দিতার নামেই। অভিনেতারা গৌণ। নন্দিতা অবশ্য বলবেন, গল্প না থাকলে দর্শক শুধু পরিচালকের নামে হল ভরাবেন না। সেই কারণেই তাঁরা গল্প আগে লেখেন। বাকি সব পরে ভাবেন। তবে এ কথা ঠিক যে, স্ক্রিন-প্লে চূড়ান্ত করার আগেই তাঁদের মনেও একটা ছবি তৈরি হয়ে যায় যে, কোন চরিত্রে কাকে কাস্ট করতে চান তাঁরা। কাস্টিংয়েও অবশ্য ছক ভেঙেছেন তাঁরা। নাইজেল আকারা, ঋতুপর্ণার সঙ্গে সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিতের সঙ্গে অপরাজিতা আঢ্য, মনামি ঘোষ বা অনসূয়া মজুমদারের মতো অভিনেতাদের দেখা গিয়েছে তাঁদের বিভিন্ন ছবিতে। ফ্লোরে অভিনেতাদের সামলানো এবং তাঁদের থেকে অভিনয় বার করে নেওয়ার দায়িত্ব অবশ্য শিবপ্রসাদের। যেহেতু তিনি নিজেও দীর্ঘ দিন ‘নান্দীকার’-এ অভিনয় করেছেন, তাই স্বাভাবিক নিয়মেও এই দায়িত্ব তাঁর ভাগেই পড়েছে। তবে শ্যুটিং শুরু হওয়ার আগে অভিনেতাদের নিয়ে ওয়ার্কশপ দুই পরিচালক মিলেই করেন। সেখানে অবশ্য অভিনয় শেখানো হয় না। অভিনেতাদের ডেকে শুধু একসঙ্গে মেলামেশা, খাওয়া-দাওয়া এবং তালমিল তৈরি করাটাই আসল উদ্দেশ্য। যে অভিনেতাদের কথা সচরাচর পরিচালকরা ভাবেন না, তেমনই বেশ কিছু মুখ থাকে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবিতে। নিন্দকরা অবশ্য বলেন, ‘‘সবই শিবুর কম বাজেটে ছবি করার ফন্দি!’’ পরিচালকদ্বয় অবশ্য সে কথা গায়ে মাখেন না। তাঁরা জানেন কোন চরিত্রে তাঁদের কাকে চাই।
তবে কম বাজেটে ছবির প্রোডাকশন শেষ করাটা সত্যিই শিবপ্রসাদ-নন্দিতার এক বড় গুণ। বাজেটের বাকি অংশটা তোলা থাকে ছবির প্রচারের জন্য। ছবির প্রচার কী ভাবে হবে, কখন হবে, কতটা হবে— সম্পূর্ণ দায়িত্ব শিবপ্রসাদের একার। এবং তিনি সেটা পালন করেন যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গে। ছবির প্রচারের কোনও ফিকিরই তিনি বাদ দেন না। তাঁর সমসাময়িক অনেক ছবি নির্মাতাদেরই আফসোস, ‘‘আমরা শিবুর মতো ছবি বেচতে পারি না।’’
শিবপ্রসাদ অবশ্য এ সব কথায় কান দিতে চান না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শুধু প্রচারের জোরে মানুষকে হলে আনা যায় শুক্র, শনি আর রবিবার। কিন্তু আসল গল্পটা না থাকলে সোমবার থেকে আর তাঁরা হলে আসবেন না। আমাদের ছবি সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলে। এমনকি, প্রথম সপ্তাহের পর আরও বেশিসংখ্যক হলে দেখানো হয়। তা ছাড়া নেটমাধ্যমের যুগে প্রচারের ধরন অনেক বদলে গিয়েছে। আমি আমার মতো প্রচার করার চেষ্টা করি। কিন্তু ঘরে-ঘরে গিয়ে তো বলি না যে, আমার ছবির গানের সঙ্গে রিল বানিয়ে ইনস্টাগ্রামে দিন। তার জন্য আগে একটা ভাল গান থাকতে হবে ছবিতে। ছবির কনটেন্ট ভাল হলে সব আপনিই হবে।’’
পরিচালকের কথা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। সত্যিই গল্প ভাল না হলে দর্শক হলে যাবেন কেন! কিন্তু গোটা বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কি শুধু শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবিতেই ভাল গল্প থাকে? শুধু তাঁরাই কি ছবির প্রচার করেন জোরকদমে? তারকা-পরিচালক ইন্ডাস্ট্রিতে আরও আছেন। জমিয়ে গল্প ফাঁদার লোকেরও অভাব নেই। প্রচারে ফাঁক রাখেন না বহু প্রযোজনা সংস্থাই। তা হলে কেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ছবিই এত দীর্ঘ দিন ধরে চলে? কিসের টানে তাঁদের ছবি একাধিক বার দেখেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র থেকে দেশের অন্যতম তারকা অমিতাভ বচ্চনও?
প্রশ্ন শুনে খানিক চিন্তায় পড়ে গেলেন চলচ্চিত্রবিদ্যার অধ্যাপক সম্রাট গুহ, ‘‘ছোট পর্দার কোন সিরিয়াল দর্শকের ভাল লাগবে আর কোনটা লাগবে না, এর যেমন কোনও উত্তর নেই, তেমনই শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবি কেন এত সফল, তারও পরিষ্কার কোনও উত্তর নেই। তবে ওঁরা একদম ছোট পর্দার ভাষা মেনে সহজ ভাবে যে কোনও গল্প বলেন। হয়তো সেই কারণেই মানুষের মনে এতটা দাগ কাটতে পারে ছবিগুলো।’’ শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবির ভাষা যে টেলিভিশনের মতো চড়াদাগের, তা অবশ্য অনেকের সিনে ফাইলেরই অভিযোগ। কিন্তু আমজনতার তেমন কোনও উন্নাসিকতা নেই। বহু বছর ধরে আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার বাসিন্দা অতনু সরকার। তিনি শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবির নিয়মিত দর্শক। হয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নয়তো আঞ্চলিক বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসবে প্রত্যেকটা ছবি দেখেন তিনি। এ বছর অবশ্য গরমের ছুটি কাটাতে দেশে ফিরেছিলেন। তাই ‘বেলাশুরু’ হলে গিয়ে দেখার সুযোগ ছাড়েননি। অতনু জানালেন, গত বছর তাঁর মা কোভিড-আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। বাবা ছিলেন কোভিড নেগেটিভ। যে আত্মীয়রা অতনুর মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়েছিলেন, তাঁরা অনেক বুঝিয়েও তাঁর বাবাকে বাড়ি পাঠাতে পারেননি। ‘‘আমি ফোনে অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম যে, মায়ের সঙ্গে থাকলে তোমারও কোভিড হয়ে যাবে। কিন্তু মা হাসপাতালে বেড না পাওয়া পর্যন্ত বাবা মায়ের হাত ছাড়েনি কিছুতেই। বেলাশুরু দেখে সেই ঘটনাই মনে পড়ে গেল। হয়তো কারও কারও এটাকে মেলোড্রামা মনে হতে পারে। কিন্তু আমি কী করে সে কথা বলি? এ ঘটনা তো আমার নিজের জীবনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে!’’
বাস্তবের কাছাকাছি গল্প বলতে পারলেই কি সেই ছবি সফল হবে? তেমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। একটা ছবি কতগুলো হলে মুক্তি পেল, পরের সপ্তাহে কতগুলো শো কমল বা বাড়ল, তার উপর নির্ভর করবে ছবি কতটা ব্যবসা করবে। কলকাতার এক মাল্টিপ্লেক্স সংস্থার তরফে জানানো হল, কোন ছবি মোটামুটি কত দিন কতগুলো হলে চলবে তা আন্দাজ করা যায় প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই। সংস্থার মুখপাত্রের কথায়, ‘‘কোনও বাংলা ছবি খুব ভাল চললেও যদি পরের সপ্তাহে কোনও বড় মাপের বলিউড কিংবা দক্ষিণী ছবি মুক্তি পায়, তা হলে কিছু হল ছেড়ে দিতেই হয়। শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবি নিয়ে দর্শকের যথেষ্ট উৎসাহ থাকে। তাই আমরা চেষ্টা করি যত দিন সম্ভব কিছু শো দেওয়ার।’’ কেন অন্য বাংলা ছবির চেয়ে তাঁদের ছবি নিয়ে বেশি উৎসাহ থাকে দর্শকের? জবাব পাওয়া গেল, ‘‘এ ভাবে তো ঠিক বলা যায় না। লোকে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি দেখতেও ভিড়় করেন। শুধু ওঁদের ছবি নিয়েই উৎসাহ, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।’’
হল থেকে ছবি চলে যাওয়ার পর সেটা ছোট পর্দার কোনও চ্যানেলে দেখানো হবে কিংবা কোন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে, সে সবের চুক্তি থেকেও কিছুটা অর্থ উপার্জন করা যায়। বাকি প্রযোজকদের মতোই শিবপ্রসাদ-নন্দিতারাও এ বিষয়টি অবহেলা করেন না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘আমরা যত তাড়াতাড়ি স্যাটেলাইট কিংবা ওটিটি রাইট বিক্রি করে দিই, শিবু তত তাড়াহুড়ো করে না। ও জানে, ঠিক কোন সময়ে কোথায় কোন ছবির স্বত্ব বিক্রি করলে সঠিক মূল্য পাওয়া যাবে। এ দিক থেকে বলতে হয়, ও নিজের ছবি নিয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। যেহেতু নিজেদেরই প্রযোজনা সংস্থা, তাই প্রযোজকের বাড়তি চাপও থাকে না।’’
এত কিছুর পরও সব প্রশ্নের উত্তর মেলে না। কেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবি নিয়েই দর্শকের বেশি উৎসাহ, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে গোটা টালিগঞ্জ!
কিন্তু শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবি ঠিক কতটা চলে? হয়তো রাজ চক্রবর্তীর ছবির চেয়ে বেশি চলে, হয়তো নয়। ‘বেলাশেষে’ চলেছিল ২৫০ দিন। ‘প্রাক্তন’ এবং ‘হামি’ চলেছিল ১২৫ দিন। ‘পোস্ত’ ১০০ দিন। অবশ্যই বাংলা ছবির জন্য এ এক বিরল ঘটনা। কিন্তু পাশাপাশি কিছু বিষয় মাথায় রাখাটাও প্রয়োজন। এস এস রাজামৌলির ছবি ‘আরআরআর’ কলকাতায় চলেছিল ৩০ দিন। কিন্তু সারা কলকাতা জুড়ে যদি প্রত্যেকটা মাল্টিপ্লেক্সে সে ছবি গড়ে পাঁচটা করেও হল পেয়ে থাকে, তা হলে দিনে অন্তত ৫০টা শো পেয়েছে। সেখানে ‘বেলাশেষে’ প্রথম সপ্তাহে যদি ২৫টা শো পেয়ে থাকে, তা হলে দ্বিতীয় সপ্তাহে সেই সংখ্যাটা আরও কমেছে, তৃতীয় সপ্তাহে আরও। হয়তো শেষ পর্যন্ত শহরে একটামাত্রই শো ছিল।
‘আরআরআর’ বলিউডের ছবি নয়, আঞ্চলিক ছবি। বলিউডের সঙ্গে তুলনা না চললেও আরেক আঞ্চলিক ছবির নিরিখে বাংলা ছবির ব্যবসা তুলনা করাই যায়। তাই কোনও ছবি ‘হিট’ বলে পিঠচাপড়ানি দেওয়ার আগে টলিউডের এক বার ‘আরআরআর’-এর বক্স অফিসের সংখ্যাটায় চোখ বুলিয়ে নেওয়া উচিত। প্রথম দিনেই ২৪০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল ‘আরআরআর’ (বিশ্বজুড়ে)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy