Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বিশ্বসেরার আসনে

রবীন্দ্র জাডেজা, হার্দিক পাণ্ড্য, অক্ষর পটেল-এর মতো অলরাউন্ডার দলে থাকলে ব্যাটাররাও তাঁদের নিজেদের খেলাটা চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারেন।

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ০৫:৪১
Share
Save

‘ক্রিকেটসভায় শ্রেষ্ঠ’ (১০-৩) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কিছু কথা। তরুণ তুর্কিদের তেজ আর সিনিয়রদের অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে বিশ্বের সকল ক্রিকেটপ্রেমীকে উৎকৃষ্ট ও উপভোগ্য ক্রিকেট উপহার দিল ভারতীয় দল। সত্যিই অভূতপূর্ব। ফলস্বরূপ, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আবার চ্যাম্পিয়নের আসনে ভারত। দলে প্রকৃত অলরাউন্ডারদের নির্বাচনের জন্য প্রথমে ধন্যবাদ জানানো উচিত নির্বাচকদের। কারণ, রবীন্দ্র জাডেজা, হার্দিক পাণ্ড্য, অক্ষর পটেল-এর মতো অলরাউন্ডার দলে থাকলে ব্যাটাররাও তাঁদের নিজেদের খেলাটা চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারেন। এক দিনের ক্রিকেটে প্রকৃত (কাজ চালানোর মতো নয়) অলরাউন্ডারদের ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এই প্রতিযোগিতায় সকলেই দেখতে পেলেন। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জ়িল্যান্ড-এর মতো দলগুলি যেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনায়াসে তিনশোর বেশি রান তোলে, সেখানে তাদের আড়াইশো রানের আশপাশে থামিয়ে দেওয়ার কাজটা ছিল সম্পূর্ণ বোলারদের কৃতিত্ব। তা ছাড়া, প্রতিযোগিতায় অলরাউন্ডাররা বল ও ব্যাটে যে দক্ষতা দেখিয়েছেন, তা-ও অসামান্য।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতায় ভারতীয়দের পারফরম্যান্স যা পেলাম, তাতে গ্রুপ লিগের খেলায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শুভমন গিলের শতরান এবং মহম্মদ শামির পাঁচ উইকেট প্রাপ্তি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিরাট কোহলির শতরান এবং কুলদীপ যাদবের তিন উইকেট প্রাপ্তি, নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে খেলায় শ্রেয়স আয়ারের ৭৯ রান এবং সি ভি বরুণের ৫ উইকেট প্রাপ্তি সত্যিই মনে রাখার মতো।

সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কোহলি যে বহুমূল্য ৮৪ রানের ইনিংস খেলেছেন সেখানে কী দেখা গেল? দায়িত্ব সহকারে, অদম্য মনোভাব নিয়ে দলকে জেতানোর মানসিকতা, যা বিশ্ব-ক্রিকেটে ইদানীং কালে খুব কম ব্যাটারদের থেকে পাওয়া যায়। আর, অধিনায়ক রোহিত শর্মা ফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও মানসিক চাপের মধ্যে থেকে নিজেকে সরিয়ে ৭৬ রানের যে অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলে জেতালেন, সেটা ছাড়া বোধ হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাওয়া সম্ভব ছিল না। এই টুর্নামেন্টে দলগত সংহতি ও দলে সুযোগ পাওয়া প্রত্যেকের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা এতটাই ভাল ছিল যে, ঋষভ পন্থ, অর্শদীপ সিংহ, হর্ষিত রানা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো ক্রিকেটারকে মাঠের বাইরে থেকেই দলের সতীর্থদের উৎসাহিত করে যেতে হয়েছে। কিন্তু তাঁদের অভিব্যক্তি দেখে কখনও মনে হয়নি যে তাঁরা মাঠের বাইরে বসে ছিলেন। প্রতিযোগিতায় ভারতীয় ক্রিকেটারদের উৎকৃষ্ট ক্রিকেট প্রদর্শন আগামী দিনে বিশ্ব-ক্রিকেট শাসনের ইঙ্গিতই দিয়ে গেল।

স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০

‘স্বাভাবিক’ হোক

এ বছরের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ক্রিকেট প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হল কেমন যেন জগাখিচুড়ি অবস্থায়। দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অস্বস্তিকর সম্পর্কের ফলে ভারত সরকার ভারতীয় ক্রিকেট দলকে পাকিস্তানে পাঠাতে অস্বীকার করে। ক্রিকেট-অর্থনীতিতে ভারতের প্রভাব অস্বীকার করার ক্ষমতা নেই আইসিসির। ফলে, আয়োজক দেশ পাকিস্তানকেই নিজের দেশের বাইরে গিয়ে খেলে আসতে হল। দু’টো সেমিফাইনালের একটি হল পাকিস্তানের বাইরে, আর ঘোষিত ফাইনালের জায়গাই পরিবর্তিত হয়ে গেল ভারত ফাইনালে ওঠায়। ফাইনাল চলে গেল দুবাইয়ে।

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট টিম-বাসের উপর বন্দুকধারীদের আক্রমণের জেরে যেমন সে বারের সিরিজ় বাতিল হয়ে যায়, তেমনই এর পর বহুকাল পাকিস্তানে কোনও সিরিজ় অনুষ্ঠিত হয়নি। গোটা বিশ্বে তার পরিচিতি হয়ে যায় সন্ত্রাস-কবলিত দেশ হিসেবে। দেশটিকে হোম সিরিজ় খেলতে হত দেশের বাইরে গিয়ে। ভারত আজ বহু কাল হল পড়শি দেশটির সঙ্গে ক্রীড়া-সম্পর্ক ছেদ করে দিয়েছে। কেবলমাত্র আইসিসি প্রতিযোগিতাগুলিতেই দেখা হয় পরস্পরের।

এক কালের অন্যতম সেরা দলটি এখন বিশ্ব ক্রিকেটে অতীতের ছায়াও নয় বললেই চলে। দেশে আইপিএল-এর অনুকরণে টি২০ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা চালু করলেও, দু’-একটি দেশ পাকিস্তানে সফর করলেও সন্ত্রাসের কলঙ্ক থেকে পুরোপুরি নিষ্কৃতি পায়নি দেশটি। সেই কলঙ্ক মেটাতেই হয়তো এ বছর সে দেশে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজন করা হল।

কিন্তু ভারতের অবস্থানের জেরে পুরোপুরি সফল হল না সেই প্রয়াস। তবে শেষ পর্যন্ত ভারত টুর্নামেন্ট জেতায় আর কোনও বিতর্কের সৃষ্টি হয়নি এই নিয়ে। একই সঙ্গে বলব, পাকিস্তানের উচিত নিজের রাষ্ট্র পরিচালনায় আমূল পরিবর্তন আনা, যাতে বাকি দেশ, বিশেষত ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। এখনও পর্যন্ত অন্ধ ভারতবিদ্বেষের কারণে অনেক কিছু হারিয়েছে তারা। কিন্তু ভারতের জয়রথ থামানো যায়নি। এখন তাদের উচিত, দেশের মাটি থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করা। তখন আর কোনও দেশ পাকিস্তানে খেলতে যেতে অস্বীকার করবে না।

পার্থ নন্দী, শেওড়াফুলি, হুগলি

সফল রোহিত

দীর্ঘ বারো বছরের ট্রফির খরা কাটিয়ে গত বছর বার্বেডোজ়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের মাত্র ন’মাসের ব্যবধানে আরও এক আইসিসি ট্রফি জিতল রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতীয় দল। মরুশহর দুবাইয়ের ফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডকে পরাজিত করে তৃতীয় বারের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘরে তুলল ভারত। এক সময় ২০০০ সালে এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেই কিউয়িদের কাছে হেরে ট্রফি জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতের। পঁচিশ বছর পর মরুশহরে সেই কিউয়িদের পরাজিত করেই মধুর প্রতিশোধ নিল রোহিতের ‘মেন ইন ব্লু’। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই অপ্রতিরোধ্য লেগেছে কোচ গৌতম গম্ভীরের এই টিমকে। তবে, সাফল্যের এই যাত্রাপথ সহজ ছিল না। পর পর দু’বার টেস্ট বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের পর আইসিসি টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচে ‘চোকার্স’ তকমা প্রায় সেঁটে গিয়েছিল রোহিতদের গায়ে। বার বার হেরে যাওয়া সেই রোহিত-কোহলিদের সাফল্যের খিদেই ক্রিকেটজীবনের শেষ প্রান্তে এসে জয়ের এভারেস্টে পৌঁছে দিয়েছে ভারতকে। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সামনে কোহলির ম্যাচ জেতানো ইনিংস বা ফাইনালে কিউয়িদের বিরুদ্ধে রোহিতের মারকাটারি ইনিংস— স্মরণীয় হয়ে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে।

স্পষ্টতই, শুধু ব্যাটার রোহিত নয়, আলাদা করে বলতে হবে অধিনায়ক রোহিতের কথাও। শেষ কয়েক মাসে ঘরের মাঠে টেস্টে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ এবং অস্ট্রেলিয়ায় বর্ডার-গাওস্কর সিরিজ় হারের পর অধিনায়ক হিসেবে একের পর এক সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন রোহিত। অবসরের জল্পনাও প্রকট হয়েছে। কিন্তু কোনও সমালোচনায় কান না দিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছেন তিনি। বরাবরের মতোই ব্যক্তিগত স্বার্থের আগে দলকে গুরুত্ব দিয়েছেন। পরিস্থিতি বুঝে সহজাত খেলাকে তুলে রেখে বা পাল্টে, দলের স্বার্থে লাগাতার আগ্রাসী খেলে একটা উদাহরণ তুলে ধরেছেন দলের কাছে। যার অন্যতম উদাহরণ ফাইনালের ৭৬ রান। দল নির্বাচনেও ঝুঁকি নেওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছেন তিনি। কথায় আছে, ভাগ্য সর্বদা সাহসীদের সহায় হয়। ফলও তাই পেয়েছেন হাতেনাতে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পর দেশের দ্বিতীয় ক্যাপ্টেন হিসেবে তিনিই এখন দু’টো আইসিসি ট্রফি জয় করলেন, তা-ও মাত্র ন’মাস সময়ের ব্যবধানে। ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মার এই পরিণত মস্তিষ্ক এবং ট্রফি জয়ের খিদে আগামী কয়েক বছরে দেশকে আরও সাফল্য দেবে, নিশ্চিত করে বলা যায়।

সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

champions trophy ICC Champions Trophy 2025

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}