আবার রক্ষণশীলতার জোর হাওয়া। জার্মানিতে জাতীয় নির্বাচনে বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ়-এর মধ্য বামপন্থী দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এসডিপি)-কে হারিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে রক্ষণশীল দলগুলির জোট। ফ্রেডরিক মার্জ় নেতৃত্বাধীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এ বার জোট বেঁধেছিল ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ)-এর সঙ্গে। নির্বাচনে সম্মিলিত ভাবে ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তারাই রয়েছে শীর্ষে। শোলৎজ়-এর দল এসডিপি মাত্র ১৬ শতাংশ ভোট পেয়ে রয়েছে তৃতীয় স্থানে। ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে সকলকে চমকে দিয়েছে অতি দক্ষিণপন্থী দল ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’ (এএফডি)। বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণ অনুযায়ী, কোনও দলই একক ভাবে জার্মানিতে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে হয়তো রক্ষণশীলেরা অতি দক্ষিণপন্থীদের সঙ্গে হাত মেলাবেন, আলোচনা শুরু হয়েছে সে দেশে।
শোলৎজ় সরকারের উপর থেকে জনগণের আত্মবিশ্বাস ক্ষয়ের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বিবিধ অর্থনৈতিক সমস্যা। দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি সংক্রান্ত নিরাপত্তা এবং শ্রমবাজার সংস্কারের বিষয়গুলির ক্ষেত্রে যে ভাবে কাজ করে এই জোট সরকার, তা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। তা ছাড়া, দেশের আর এক গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিবাসনও। সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু শহরে সন্ত্রাসবাদী হামলার সঙ্গে অভিবাসীদের যুক্ত থাকার ঘটনা দেশের অভিবাসন নীতি আরও কড়া করার পক্ষকেই জোরদার করেছে। অন্য দিকে, নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হল এমন গুরুতর ভূরাজনৈতিক মুহূর্তে যখন জার্মানির বিদেশ নীতি, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক এবং ইউক্রেন যুদ্ধে তার ভূমিকা আতশকাচের নীচে এসেছে। এক দিকে কট্টরপন্থী অভিবাসন-বিরোধিতা, অন্য দিকেইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিবিধ নিয়মনীতির প্রতি অনীহা, হাওয়া ঘুরিয়ে দিয়েছে।
আপাতত সিডিইউ-এসপিডি জোটই সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প বলে মনে হলেও দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যে ভাবে বদলাচ্ছে তাতে চরমপন্থীদের এ ভাবে আটকে রাখা যাবে কি না— প্রশ্নটি জরুরি হয়ে উঠছে। চ্যান্সেলর হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মার্জ়-ই। বলা বাহুল্য, ইউরোপে নেতৃত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষমতা জার্মানির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত আমেরিকা ইউক্রেনের পাশ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ইউক্রেনকে কী সহায়তা দিতে হবে, তার জন্য কতখানি অর্থনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োজন, জার্মানির নতুন সরকারকে সর্বাগ্রে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। ইউরোপীয় এবং ট্রান্স-আটলান্টিক সর্ম্পকগুলির ক্ষেত্রেও নতুন সমীকরণের কথা ভাবতে হবে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার সখ্য বৃদ্ধি গোটা ইউরোপের ক্ষমতার ভারসাম্যেই বদল আনতে পারে, জার্মানি যে সমীকরণে অত্যন্ত গুরুতর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চলেছে। বলা যেতে পারে, বর্তমান সময়টি একটি সন্ধিক্ষণ, যখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এবং ইউরোপের সামগ্রিক রাজনীতিতে, উভয় দিকেই নিজের অবস্থানে এক লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখতে চলেছে বার্লিন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)