তাঁর মোবাইল ফোনে এই প্রযুক্তি থাকলে হয় তো বেঁচে যেতেন নির্ভয়া।
কেমন প্রযুক্তি? যার সাহায্যে বিপদে পড়লে মহিলাদের শুধু মোবাইলের নির্দিষ্ট একটি বোতাম টিপে ধরে রাখলেই হবে। তা হলেই বিপদ-সঙ্কেত চলে যাবে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে। যাঁর মোবাইল থেকে বিপদ-বার্তা আসছে, তাঁর কাছে পৌঁছে যাবে পুলিশের টহলদারি জিপ।
ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, দেশের ১১৪টি শহরে এই ব্যবস্থা চালু হবে। টাকা খরচ করা হবে নির্ভয়া তহবিল থেকে। দিল্লির সেই গণধর্ষণ-কাণ্ডের পরে তৈরি হয়েছিল ১ হাজার কোটি টাকার এই তহবিল। কিন্তু ছাড়পত্রের পরে চার মাস কেটে গেলেও কাজ এগোয়নি এক চুল। কিছু রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব, কোথাও আবার তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের সঙ্গে বোঝাপড়ার সমস্যায় এই প্রকল্প আটকে রয়েছে।
আজ নতুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আমলাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এ কথা জানতে পেরে চমকে ওঠেন। আমলাদের নির্দেশ দেন, যত দ্রুত সম্ভব এই কাজ শেষ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে তিনি নিজে আলোচনায় বসবেন বলেও রাজনাথ জানিয়ে দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, ৪ ফেব্রুয়ারি মনমোহন-সরকারের মন্ত্রিসভা এই প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছিল। বরাদ্দ হয়েছিল ৩২১ কোটি টাকা। পরিকল্পনা ছিল, ন’মাসের মধ্যে ১১৪টি শহরে একটি তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। মোবাইলের পাশাপাশি ল্যান্ডলাইন টেলিফোনেও নির্দিষ্ট বোতাম থাকবে। মোবাইল-টেলিফোন ছাড়া শুধু বিপদ সঙ্কেত পাঠানোর জন্যও পৃথক যন্ত্র তৈরি হবে। কাজটি করবে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রক। শুধু এই বিপদ-সঙ্কেত পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ওই ১১৪টি শহরে পৃথক এক বিশেষ প্রযুক্তি সম্পন্ন কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। তৈরি হবে ‘এমার্জেন্সি রেসপন্স’ বাহিনীও।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “শুধু রাস্তাঘাটে দুর্ব্যবহার বা হেনস্থার শিকার হলেই নয়, বাড়িতে পণ, পারিবারিক অত্যাচার বা যৌন নিগ্রহের অভিযোগ জানাতেও মহিলারা এই পদ্ধতিতে বিপদ-সঙ্কেত পাঠাতে পারেন। এমনকী, শিশুদের নিয়ে বিপদে পড়লেও এই ব্যবস্থায় সাড়া মিলবে।” প্রাথমিক ভাবে প্রকল্পের আওতায় আসছে ১১৪টি শহর। এর মধ্যে ৭১টি শহরের জনসংখ্যা দশ লক্ষের বেশি। এ ছাড়া, যে সব জেলায় অপরাধের সংখ্যা খুব বেশি, সে রকম ৪৩টি জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ৪৩টি জেলাসদরেও এই প্রকল্প চালু হবে।”
কোথায় সমস্যা? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, রাজ্য পুলিশের সাহায্য ছাড়া এই প্রকল্প চালু করা মুশকিল। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকও এ বিষয়ে বিশেষ এগোয়নি। ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র (বার্ক) এবং হায়দরাবাদের ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশনও এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে প্রকল্পের কাজ এগোয়নি। বার্ক-এর ইলেকট্রনিক্স বিভাগ অবশ্য ইতিমধ্যেই একটি যন্ত্র তৈরি করে ফেলেছে। ওই যন্ত্রের নামও দেওয়া হয়েছে নির্ভয়া। বার্কের দাবি, মোবাইলের থেকে এই যন্ত্র ব্যবহার করা অনেক সহজ। কারণ মোবাইল আগে চালু করতে হবে, নির্দিষ্ট বোতামটি টিপে ধরে রাখতে হবে। কিন্তু এই যন্ত্রটি ব্যাগের মধ্যে থাকলে হাত ঢুকিয়ে একবার বোতাম টিপে দিলেই চলবে। যে সব মোবাইলে জিপিএস-ব্যবস্থা নেই বা মোবাইলের অবস্থান জানা সম্ভব নয়, তার সঙ্গেও এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজারে এই যন্ত্রটি তিন হাজার টাকায় মিলবে। যন্ত্রটি চালু করে দিলে তা বিপদে পড়া মহিলার মোবাইল থেকে একটি বিপদ-সঙ্কেত পাঠিয়ে দেবে পুলিশের কন্ট্রোল রুমে। চাইলে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদের পাঁচটি মোবাইল নম্বরও ঠিক করে দেওয়া যেতে পারে। তাঁরাও বিপদ-সঙ্কেত পেয়ে যাবেন। আরও সস্তায় এই যন্ত্রটি বাজারে আনা যায় কি না, এখন তা নিয়েই গবেষণা চলছে।
ইতিমধ্যে অবশ্য বিপদ-সঙ্কেত পাঠানোর জন্য অ্যাপ চলে এসেছে। স্মার্টফোনে এ ধরনের অ্যাপ ডাউনলোড করে নিলে বিপদ-বার্তা পাঠানো যাবে পরিচিত ব্যক্তিদের। তবে সেই অ্যাপের ব্যবহার নিজস্ব পরিচিতির গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মহিলাকে বাঁচাতে গেলে দরকার হবে পুলিশের সাহায্যই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, যন্ত্র তৈরি হলেই তো হবে না, বিপদ-সঙ্কেত পেয়ে সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থাও চালু করতে হবে। এখন রাজ্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনায় বসে দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। এই প্রকল্পে ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy