Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

আধার আবশ্যিক নয় কোনও কাজে: সুপ্রিম কোর্ট

ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলানো, চোখের মণি, হাতের দশ আঙুলের ছাপ থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য নথিভুক্তিই সার। রান্নার গ্যাসের ভর্তুকিই হোক বা অন্য কোনও সরকারি পরিষেবা কোনও কাজের জন্যই আধার-কার্ডকে বাধ্যতামূলক করা যাবে না বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৪
Share: Save:

ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলানো, চোখের মণি, হাতের দশ আঙুলের ছাপ থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য নথিভুক্তিই সার। রান্নার গ্যাসের ভর্তুকিই হোক বা অন্য কোনও সরকারি পরিষেবা কোনও কাজের জন্যই আধার-কার্ডকে বাধ্যতামূলক করা যাবে না বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, আধার-কার্ডের জন্য যে সব ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তা তাঁদের অনুমতি ছাড়া কোনও সরকারি বা তদন্ত সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া যাবে না।

কোনও কাজে আধার আবশ্যিক নয় বলে শীর্ষ আদালত যে রায় দিয়েছে, তাতে বিড়ম্বনায় পড়লেও অনুমতি ছাড়া আধার তথ্য কাউকে না দেওয়ার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার তথা আধার-কর্তৃপক্ষ। গোয়ায় ১৪ মাস বয়সী এক শিশুকন্যার ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে নেমে সিবিআই আধার-কর্তৃপক্ষের কাছে গোয়ার সমস্ত বাসিন্দার হাতের আঙুলের ছাপ চেয়ে পাঠায়। বোম্বে হাইকোর্টের গোয়া বেঞ্চও সেই নির্দেশ দেয়। কিন্তু আধার-কর্তৃপক্ষ আপত্তি তুলে জানিয়েছিল, এক বার এই ধরনের তথ্য দেওয়া শুরু হলে রোজ এই জাতীয় অনুরোধ আসবে। সুপ্রিম কোর্ট আজ জানিয়েছে, শুধু কোনও তদন্ত সংস্থা নয়, কোনও সরকারি সংস্থার সঙ্গেই তথ্য ভাগ করা যাবে না। এই নির্দেশের ফলে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আধার-কর্তৃপক্ষের সমঝোতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে।

এ টুকু বাদ দিলে এ কথা বলাই যায় যে, সরকারি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আধার বাধ্যতামূলক নয় বলে সুপ্রিম কোর্ট এ দিন যা বলেছে, তাতে লোকসভা ভোটের আগে মনমোহন-সরকারের অস্বস্তি এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়েছে। কারণ আধার-কার্ডের মাধ্যমেই রান্নার গ্যাস, কেরোসিন থেকে শুরু করে যাবতীয় ভর্তুকি, বৃত্তি বা সরকারি ভাতা সরাসরি সংশ্লিষ্ট নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল ইউপিএ সরকার। এবং তা নিয়ে তুমুল প্রচারও চালিয়েছিল তারা। আধার-প্রকল্প চালু করার সময় তাদের স্লোগান ছিল, ‘আপকা পয়সা, আপকে হাত’। অর্থাৎ, আপনার টাকা, আপনারই হাতে। দেশের সব মানুষের জন্য আধার-কার্ড তৈরি করতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় কেন্দ্র। ইনফোসিসের প্রাক্তন কর্তা নন্দন নিলেকানিকে সেই প্রকল্পের প্রধান করা হয়। সেই নিলেকানি এ বার দক্ষিণ বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেসের প্রার্থীও হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের নির্দেশের ফলে বিজেপি প্রার্থী অনন্ত কুমার নিলেকানির বিরুদ্ধে নতুন হাতিয়ার পাবেন বলেই মনে করছেন অনেকে।

গত সেপ্টেম্বরেই এক অন্তর্বর্তী রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, সরকারি ভর্তুকি বা পরিষেবা পেতে আধার কার্ড আবশ্যিক নয়। তখন অভিযোগ ওঠে, আধার-এর কোনও সাংবিধানিক বা আইনি বৈধতা নেই। বিতর্কের মুখে আধার-কে আইনি বৈধতা দিতে নতুন বিলে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। তবে তা সংসদে পাশ হয়নি।

আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি এস চৌহান এবং জে চেলামেশ্বরের বেঞ্চের নির্দেশ, এর মধ্যে আধার-কার্ডকে আবশ্যিক করতে কোনও নির্দেশ জারি হয়ে থাকলে তা বাতিল করতে হবে। বস্তুত গোটা আধার প্রকল্পটির বৈধতা নিয়েই আজ প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতিদের বক্তব্য, আধার-কার্ড আবশ্যিক নয় বলে জানিয়ে দেওয়ার পরেও তাঁদের কাছে অভিযোগ আসছে যে এটি ছাড়া বহু সরকারি পরিষেবা মিলছে না। বিচারপতি চৌহান বলেন, “আমি একটি চিঠিতে এমন অভিযোগ পেয়েছি যে, আধার-কার্ড না থাকায় বিয়ের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। অনেকে সম্পত্তিও নথিভুক্ত করাতে পারছেন না।”

সরকারি কর্তারা বলছেন, এটা শুধু মনমোহন-সরকারের সমস্যা নয়। লোকসভা ভোটের পরে যারাই ক্ষমতায় আসুক, আধার-সমস্যায় পড়বে। বিজেপির একাংশের অভিযোগ, অনুপ্রবেশকারীরাও আধার-কার্ড পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাঁরা নাগরিকত্বের দাবি করছেন। যদিও ইউপিএ-সরকারের যুক্তি, আধার-কার্ড শুধুই পরিচয়পত্র, নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। এই অবস্থায় আধারের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে হবে পরবর্তী সরকারকেই।

আধার-কার্ড নিয়ে আমজনতার হেনস্থা এবং মনমোহন-সরকারের সমস্যা অবশ্য নতুন নয়। দেশের বহু এলাকায় সব হাতে আধার কার্ড পৌঁছনোর আগেই সরকার সেই সব জায়গায় আধার কার্ডের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গ্যাসের ভর্তুকি বা ভাতার টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা চালু করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়ছিলেন অনেকে। কারণ অনেকেই সেই টাকা নিয়মিত পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গের সাত জেলায় গ্যাসের ভর্তুকির জন্য যখন আধার-প্রকল্প চালু হয়, তখনও একই অভিযোগ ওঠে।

এ বছরের গোড়ায় কেন্দ্র আধার-কার্ডের ভিত্তিতে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকির টাকা বণ্টনের প্রক্রিয়া সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করে। আধার নিয়ে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়ে যখন মার্চের গোড়ায় কেন্দ্র জানায়, সব গ্রাহকই ফের পুরানো নিয়মে ভর্তুকির ‘কোটা’র রান্নার গ্যাস ভর্তুকিযুক্ত দামেই (কলকাতায় এখন যা ৪১৬ টাকা) পাবেন। অনেকেই অভিযোগ করেন, তা হলে যাঁরা আধার-ভোগান্তির শিকার হলেন, তাঁদের কষ্টের দায় কে নেবে?

তেল সংস্থাগুলির অবশ্য দাবি, ওই ব্যবস্থা এখন বন্ধ থাকায় গ্যাসের ভর্তুকি নিয়ে সমস্যার কিছু নেই। তবে অভিযোগ উঠছে, এখনও গ্যাস বুক করার সময় আধার নম্বর জমা দেওয়ার জন্য এসএমএস-এ বার্তা পাঠাচ্ছে তেল সংস্থাগুলি। যদিও সংস্থাগুলির দাবি, ভর্তুকির জন্য নয়, নাগরিকের পরিচয়পত্র হিসেবেই আধার নম্বর চাওয়া হচ্ছে।

আধার কার্ড তৈরি কি তা হলে বন্ধ হয়ে যাবে? আধার কর্তৃপক্ষ সূত্রের দাবি, সরকারি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আধারের বাধ্যতামূলক ব্যবহারে শীর্ষ আদালত আপত্তি তুললেও আধার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। আধার-কে একটি সার্বিক পরিচয়পত্র হিসেবেই দেখছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে আধার কার্ড তৈরির প্রক্রিয়া জারি থাকবে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

adhar card supreme court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE